বাফুফের আরেকটি কমিটি ‘ফাঁস’!
২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দুই মাস হলেও বাফুফে এখনো কোনো স্ট্যান্ডিং কমিটি পূর্ণাঙ্গ আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। গত মাসে পেশাদার লিগ কমিটি বসুন্ধরা কিংস প্রকাশ করে আবার পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেয়। ততক্ষণে অবশ্য সেই কমিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। লিগ কমিটির মতো আজ ফাঁস হওয়া ট্যাকনিক্যাল কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
৯ নভেম্বর নব নির্বাচিত কমিটির প্রথম সভায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং ও অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছিল। নির্বাহী কমিটিতে ছাইদ হাসান কানন, সত্যজিৎ দাশ রুপু, বিজন বড়ুয়া. ইকবাল, গাউসের মতো জাতীয় ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও ট্যাকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রথমবারের মতো ফেডারেশনে সদস্য হওয়া সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কামরুল হাসান হিল্টনকে। কমিটি মনোনীত হওয়ার দেড় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনানুষ্ঠানিকভাবে দেখা গেছে। ১১ সদস্যের কমিটিতে ট্যাকনিক্যাল ব্যক্তির সংখ্যা মাত্র ২-১ জন। বাকিরা তেমন ট্যাকনিক্যাল জ্ঞান সম্পন্ন নন এমনকি অনেকে ফুটবলাঙ্গনেও সেই অর্থে পরিচিতও নন।
বাফুফের গঠনতন্ত্রের ৪৬ ধারায়, ট্যাকনিক্যাল কমিটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা রয়েছে। একজন চেয়ারম্যান, আরেক জন ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সাত জন সদস্য থাকবেন। নব গঠিত ট্যাকনিক্যাল কমিটির আকার গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি। আবার নেই কোনো ডেপুটি চেয়ারম্যান। দশ জন সদস্যের মধ্যে পরিচিত মুখ মাত্র দুই জন, দুই সাবেক তারকা ফুটবলার মাসুদ রানা ও মিজানুর রহমান ডন। এই দুই সাবেক ফুটবলারের সঙ্গে রয়েছেন দুই জন পরিচিত ক্রীড়া সংগঠক আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সাধারন সম্পাদক ইয়াকুব আলী ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদিক ফিরোজা করিম নেইলী। জিয়াদ খান, হুমায়ন কবীর, মশিউরর রহমান (বিপ্লব) এদের পরিচয় হিসেবে দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ী। মুশফিকুর রহমান নামে একজন রয়েছেন ব্যাংকার, জুবায়ের ইউসুফ ক্রীড়া শিক্ষক (উইলস লিটন ফ্লাওয়ার), আরেকজন সাইফুল ইসলাম ইকো যার পরিচয় দেয়া হয়েছে সাবেক খেলোয়াড়।
ট্যাকনিক্যাল কমিটি ফেডারেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। উন্নত মানের কোচ তৈরি করা, কোচিং কোর্স কারিকুলামসহ নানা বিষয় জড়িত। এমন ট্যাকনিক্যাল নির্ভর কমিটিতে ব্যবসায়ী ও নন ট্যাকনিক্যাল ব্যক্তিরা কি ভূমিকা রাখবেন সেটা বড় প্রশ্নের বিষয়। বিশেষ করে বাফুফে থেকে উচ্চ বেতন সংগ্রাহকের তালিকায় ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর অন্যতম। ট্যাকনিক্যাল কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটা ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টরের তত্ত্ববাধয়নে বাস্তবায়ন করবে ট্যাকনিক্যাল বিভাগ। কমিটি ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টরের কার্যক্রম তদারকি ও জবাবদিহি করবে।
বাফুফের সাবেক বৃটিশ ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি সরাসরি তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের তত্ত্ববধায়নে ছিলেন। ফলে ট্যাকনিক্যাল কমিটি তেমন তদারকির সুযোগ পায়নি। এর পরও ট্যাকনিক্যাল কমিটির সদস্য মারুফুল হক, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর মতো বিজ্ঞ কোচরা অনেক বিষয়ই সভার মধ্যে পরামর্শ দিতেন এমনকি ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টরের কাছে জবাবও চাইতেন। নতুন ট্যাকনিক্যাল কমিটি বর্তমান ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর সাইফুল বারী টিটুকে কতটুকু জবাবদিহির মধ্যে রাখতে পারবে সেটা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে ফুটবলাঙ্গনে। ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, যে ট্যাকনিক্যাল কমিটি গঠিত হয়েছে এতে বরং ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টরই কমিটি পরিচালনা করতে পারেন।
বাফুফের বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়াল ২০১৬-২০ এই চার বছর ট্যাকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সভাপতি দায়িত্ব নেয়ার পর ট্যাকনিক্যাল কমিটির মান আরো উচু হওয়ার আশা করছিল ফুটবলাঙ্গন। নতুন ট্যাকনিক্যাল কমিটিতে ট্যাকনিক্যালের চেয়ে নন ট্যাকনিক্যাল ব্যক্তি বেশি হওয়ায় ফুটবলাঙ্গনে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে।
বাফুফের সাব কমিটির মধ্যে একমাত্র ট্যাকনিক্যাল কমিটির আয় রয়েছে। বিগত সময়ে কোচিং কোর্সের রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন ছিল। সেই বিবেচনায় ট্যাকনিক্যাল কমিটিতে একজন ব্যাংকাংর রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত মেয়াদের চেয়ে এবার ট্যাকনিক্যাল কমিটিতে খানিকটা ভিন্নতা এনেছে নাকি আরো স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে? এই কমিটির মেয়াদ এক বছর। দেখা যাক কমিটি কতটুকু কাজ করতে পারে নাকি আবার কমিটি বদল হয়ে যায় পরের বছর!
এজেড/এইচজেএস