ক্ষ্যাপই ভরসা, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য বহুদূর
সানরাইজ-ইউনেক্স আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের নারী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন উর্মি আক্তার একক ইভেন্টে গতকাল প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছেন। আজ পুরুষ একক ইভেন্টে প্রি কোয়ার্টারে হেরেছেন আরেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খন্দকার আব্দুস সোয়াত। বাংলাদেশের এক নম্বর দুই খেলোয়াড়ই নিজেদের মাটিতে চলমান আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এখন দর্শক।
সোয়াত গতকাল প্রাথমিক রাউন্ডে ভারতীয় শাটলারকে হারানোর পর স্বদেশি আরেক শাটলারকে হারান। আজ প্রি কোয়ার্টার পর্বে কানাডিয়ান শাটলার জিয়া ডং সেনের বিপক্ষে ২১-১৩ ও ২১-১৩ পয়েন্টে হেরে যান। দেশ সেরা শাটলার হয়ে কোয়ার্টারের আগেই পথচলা থেমে যাওয়া নিয়ে সোয়াতের বক্তব্য, 'কানাডার খেলোয়াড় আমার চেয়ে বেশ ভালো মানের। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য পেতে হলে অনেক খেলতে হয়। আমরা সেভাবে খেলতে পারি না।'
এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করছে থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশের খেলোয়াড়। অনেক দেশের খেলোয়াড়দের র্যাংকিং ও মান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য অন্তত রয়েছে বলে বিশ্বাস পুরুষ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সোয়াতের, 'বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে ও অনুশীলনে থাকলে আমরাও তাদের সঙ্গে ভালো মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব। যে পাথর্ক্য এখন রয়েছে। সেটা ঘুচানো তেমন অসম্ভব নয়।'
গত দুই বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন পাবনার ছেলে সোয়াত। চলতি বছর ফেডারেশন জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আগে র্যাংকিং আসর করেছিল। ঘরোয়া পর্যায়ে সকল খেলোয়াড়দের আয়ের মূল উৎস লিগ। সেই লিগ অর্ধযুগের বেশি নেই ব্যাডমিন্টনে। এক দিকে নেই খেলা অন্য দিকে নেই অর্থ। ফলে খেলোয়াড়রা বাধ্য হয়ে ক্ষ্যাপ খেলতে ব্যস্ত।
শীতের মৌসুমে পুরুষ শীর্ষ শাটলাররা কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। বিভিন্ন জেলায়-রাজধানী ঢাকায় একটি নাইট টুর্নামেন্টের জন্য অর্ধ লাখ টাকাও পান। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি এই সময় আয় করে বাকি সময় চলেন শাটলাররা। দেশের এক নম্বর শাটলার সোয়াতের মন্তব্য, 'আমাদের নিজেদের তো চলতে হবে। তাই বাইরের টুর্নামেন্ট খেলতেই হয়। জাতীয় প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নের চেয়ে বাইরে এক দিনের টুর্নামেন্টের অর্থ বেশি।'
ক্ষ্যাপ খেলায় আবার ঝুঁকিও থাকে। এবড়ো-থেবড়ো মাঠ আবার অনেক সময় জেলা পর্যায়ের খেলায় ফলাফল নিয়ে কলহও বাধে। সেই সকল ঝুকি নিয়েই খেলেন শীর্ষ শাটলাররা, 'কিছু তো ঝুঁকি থাকেই। এ নিয়েই খেলতে হয়। এছাড়া তো উপায় নেই।' পুরুষ শাটলাররা শীত মৌসুমে ক্ষ্যাপ খেললেও নারী শাটলারদের সার্ভিসেস বাহিনীই ভরসা, 'সামাজিক প্রেক্ষাপটে জেলা পর্যায়ে নারীদের টুর্নামেন্ট হয় না। তাই আমাদের সার্ভিসেস সংস্থার আয়ই একমাত্র নির্ভরশীলতা।'
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন কামরুন নাহার ডানা। ফেডারেশনের সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার বিষয়টি তিনি সহজেই মানতে বাধ্য হলেন, 'দীর্ঘদিন লিগই নেই। ফেডারেশনে কিছু অনুশীলন করাতে পারলেও খেলোয়াড়দের আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে ছেলেরা বাধ্য হয়ে ক্ষ্যাপই খেলবে।'
অন্য শাটলারদের চেয়ে খানিকটা ব্যতিক্রম দেশ সেরা সোয়াত। তিনি শুধুই পুরুষ একক ইভেন্টে খেলেন। পুরুষ দ্বৈত ও মিশ্র বিভাগে না খেলার কারণটি বলেন, 'আমার ফোকাস একটি ইভেন্টেই। এতে শারীরিক বিশ্রাম ও মনোযোগ সবই থাকে। দু’-তিনটি ইভেন্টে খেললে শরীরে চাপ পড়ে এবং পারফরম্যান্সেও ব্যাঘাত ঘটে।' সোয়াত বাংলাদেশ আনসারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। বেশি পদকের জন্য অনেক সংস্থা খেলোয়াড়দের একই দিনে একাধিক ইভেন্টেও অংশ নেয়ায়। সোয়াত সংস্থাতেও একটি ইভেন্টের জন্যই চুক্তিবদ্ধ, 'আমি সংস্থার হয়েও একটি ইভেন্টে খেলি। তাদের সাথে এমনই কথা হয়েছে।'
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অনেক দেশ থেকেই খেলার আমন্ত্রণ আসে। ফেডারেশনের তহবিল সেভাবে নেই। তাই খেলোয়াড়দের নিজ উদ্যোগেই যেতে হয়। 'কিছু বড় ভাই, শুভাকাঙ্খী রয়েছে যারা চায় একজন খেলোয়াড় উঠে আসুক তাদের সাহায্যের জন্যই বছরে তিন-চার বার কিছু টুর্নামেন্ট খেলা সম্ভব হয়’, বলেন সোয়াত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন সোয়াত। বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টনে সেই অর্থে প্রচার-প্রসার নেই। এরপরও ব্যাডমিন্টন নিয়েও থাকতে চান তিনি, 'ব্যাডমিন্টনের মাধ্যমে সম্মান-পরিচিতি পেয়েছি। এটার সাথেই থাকতে চাই, দেখি কত দূর যাওয়া যায়।'
এজেড/এইচজেএস