বাংলাদেশে খেলা দাবাড়ু বিশ্বসেরা, উচ্ছ্বসিত রাজিব
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের গুকেশ ডোমারাজ্জু চাইনিজ দাবাড়ু ডি লিয়ানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এখন তিনিই সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা দাবাড়ু। ভারতীয় এই গ্র্যান্ডমাস্টার ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমানে ও ২০২২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে প্রিমিয়ার দাবা লিগে খেলেছেন। বাংলাদেশে খেলে যাওয়া গুকেশ দুই বছরের ব্যবধানে এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
গুকেশের ঢাকায় আগমন ঘটেছিল বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের মাধ্যমে। বাংলাদেশে খেলে যাওয়া একজন এখন বিশ্বের সেরা দাবাড়ু। তাই রাজীব একটু বেশি রোমাঞ্চিত, 'অবশ্যই এটা একটু ভালো লাগা কাজ করেই। আমার মাধ্যমে বাংলাদেশে খেলতে আসা একজন দাবাড়ু যিনি এখন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়।'
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই গুকেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ১২ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ায় এ রকম কিছুরই আচ পেয়েছিলেন রাজীব, '২০২১ সালে লিগের আগে যখন খেলোয়াড় খুজছিলাম তখন গুকেশের মধ্যে ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছিলাম। তার চাল, পরিকল্পনা সবই ছিল অন্য উচ্চতার। আমার ধারণা ছিল সে একদিন বিশ্ব মানের খেলোয়াড় হবে। বেশ দ্রুতই হয়ে গেল।'
গুকেশ মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। এর চেয়ে কম বয়সে আর কেউ এই কৃত্তিত্ব দেখাতে পারেননি। ভারতীয় আরেক দাবাড়ু বিশ্বনাথ আনন্দ গুকেশের চেয়ে বেশি বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও তার একক কৃত্তিত্ব রয়েছে দাবায় বৈশ্বিক পর্যায়ে পাঁচটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপকে দাবার সবচেয়ে বড় আসর ধরা হয়। বিশ্বকাপ দাবার চ্যাম্পিয়নসহ আরো কয়েকটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নরা ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট খেলেন। ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট খেলা আট দাবাড়ুর মধ্যে যিনি চ্যাম্পিয়ন হন তিনি বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পান বিগত আসরের চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে। এই দুই জনের খেলা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কয়েক রাউন্ড নিয়ে হয়। সেই লড়াইয়ে যিনি জেতেন তিনিই বিশ্ব সেরার খেতাব পান।
গুকেশ চলতি বছর এপ্রিলে ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ লড়ার টিকিট পান। সেই সময় বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় ছিলেন গুকেশ। তখন গুকেশ সম্পর্কে এই প্রতিবেদককে বাংলাদেশের প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান বলেছিলেনস, '২০২২ সালে বাংলাদেশের দাবাড়ু ও সাংবাদিকদের বলেছিলাম, 'গুকেশ একদিন পৃথিবীর বড় খেলোয়াড় হবে।’ সেটাই হয়েছে।'
বড় মাপের খেলোয়াড় হতে ত্যাগ-নিবেদনও প্রয়োজন। জিয়ার চোখে ধরা পড়েছিল গুকেশের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, 'এখন উঠতি বয়সে অনেক ক্রীড়াবিদই সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচুর সময় কাটায়। গুকেশের সাথে যখন আমার পরিচয় তখন তার কোনো সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ছিল না। পড়াশোনা আর দাবাই তার ধ্যানজ্ঞান ছিল।'
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের নতুন কমিটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের কয়েকটি রাউন্ড পর্যালোচনা করেছে ফেসবুক পেজে। রাজীব ভিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রায় প্রতি রাউন্ডের খেলাই দেখেছেন। গুকেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও প্রতিদ্বন্দ্বীতার মানে মন ভরেনি বাংলাদেশি গ্র্যান্ডমাস্টারের, 'বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলা। অত্যন্ত উচু মান ও প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রত্যাশা থাকে। সেই অনুযায়ী আমার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।'
বাংলাদেশে খেলে যাওয়া দাবাড়ু বিশ্ব সেরা হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আরেক ভারতীয় দাবাড়ু বিশ্বনাথ আনন্দও বাংলাদেশে খেলেছেন। স্মৃতি হাতড়ে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, 'আনন্দ ১৯৮৫ সালে ঢাকায় খেলেছে। অসুস্থতার জন্য পুরো সময় খেলতে পারেনি। ২-৩ রাউন্ড খেলে চলে গিয়েছিল।'
১৯৮৯ সালে নিয়াজ মোর্শেদ উপমহাদেশের মধ্যে দাবায় প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হন। ভারতের মতো এত বড় দেশে তখনও গ্র্যান্ডমাস্টার ছিল না। সেই ভারতে এখন অনেক গ্র্যান্ডমাস্টার, বিশ্বকাপ ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু এবং দাবা অলিম্পিয়াডেও ভারত চ্যাম্পিয়ন। সেখানে বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার মাত্র পাঁচজন এবং বিশ্ব মঞ্চে কোনো অবস্থানই নেই সেই অর্থে। এর কারণ প্রায়ই উত্তর দিতে হয় দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদকে। গুকেশ বিশ্ব সেরা হওয়ার দিন আবারও দিলেন, 'ভারতে দাবার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অনেক পৃষ্ঠপোষক, সামাজিক মর্যাদা নানা কিছু রয়েছে। এর ফলে দাবাড়ু উঠে আসছে অনেক এবং তারা সাফল্যও পাচ্ছে। আমাদের এখানে দাবা নিয়ে সিরিয়াসনেসের অভাব রয়েছে প্রচন্ড। এছাড়া নানা সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই।’
এজেড/এইচজেএস