ভারতে মারা যাওয়া ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার রাসেলকে শেষ শ্রদ্ধা
শীতের সকালে আড়মোড়া সেভাবে ভাঙেনি। স্টেডিয়াম এলাকায় ব্যস্ততা সবে শুরু। দেশের সেরা ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার ইসমাইল নজীব রাসেল শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে আসলেন নিথর দেহে। তাকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব। ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ফেডারেশনসহ অনেক সংস্থা, ব্যক্তি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন শেষ বিদায়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম এসেছিলেন দেশ সেরা ব্যাডমিন্টন আম্পায়ারকে শেষ বারের মতো দেখতে। তার বড় ভাই আসলাম বেলিম বাংলাদেশের হকির সেরা আম্পায়ারদের একজন। তাই ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার রাসেলের প্রতি বেলিমের বিশেষ শ্রদ্ধা, ‘আম্পায়ার বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ ক্ষেত্র। ক্রিকেট ও ফুটবলের বাইরে অন্য খেলার আম্পায়ার, রেফারিরা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অর্জন ও অবস্থানে ছিলেন। যা হয়তো আলোচনায় আসেনি সেভাবে। আমাদের ক্রীড়া সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া উচিত যাতে সবাই সম্মান ও পরিচিতি পায়।’
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু ক্রীড়াঙ্গনের সিনিয়র সংগঠক। অনেক দিন থেকেই চেনেন রাসেলকে। তার প্রতিক্রিয়া, ‘শুধু ব্যাডমিন্টন নয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন একজন বড় সম্পদ হারাল।’ বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা এখন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। রাসেলের বিদায়কে অপূরণীয় ক্ষতি বলছেন, ‘তিনদিন পরই আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন হবে ঢাকায়। টুর্নামেন্ট হয়ে যাবে কিন্তু রাসেলের অভাব পূরণ হবে না। তাকে দেখেই অন্যরা ব্যাডমিন্টনে আম্পায়ারিং শিখছিল।’
এক সময় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ছিল ব্যাডমিন্টন। নব্বইয়ের দশকে শুরুতে খেলতেই এসেছিলেন ব্যাডমিন্টন কোর্টে। খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। পরে আম্পায়ারিং বেছে নেন। দুই যুগের বেশি আম্পায়ারিংয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের প্যানেল আম্পায়ার ছিলেন। তাই সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাডমিন্টনে টেকনিক্যালি সবচেয়ে বড় মাপের ছিলেন।’
আম্পায়ার হিসেবে রাসেল অনেক উঁচু মানের হওয়ায় সংগঠক পরিচয় খানিকটা পিছিয়ে ছিল। তিনি ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্যও। সাংগঠনিক বিষয়েও তার অনেক আন্তরিকতা ছিল, ‘গৌহাটি গিয়েও রাসেল ফোন করত সামনের টুর্নামেন্টের নানা বিষয়ে। রাসেল কোনো কাজের দায়িত্ব নিলে সেটা গুরুত্ব সহকারে করত’-বলেন ডানা।
২ ডিসেম্বর ভারতের গৌহাটিতে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট পরিচালনা করতে গিয়েছিলেন। ৭ ডিসেম্বর গৌহাটি হোটেলেই মৃত্যুবরণ করেন। ভারতের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় রাসেলের মরদেহ সিলেট সীমান্তে পৌঁছায়। আজ সকালে ঢাকায় দুটি জানাজা ও ব্যাডমিন্টনে শ্রদ্ধা শেষে দুপুরে আজিমপুরে চিরশায়িত হন।
রাসেলের মরদেহ দ্রুত সময়ে আনার জন্য কাজ করেছেন সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানা। রাসেলের ময়নাতদন্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকেই মারা গেছেন এমন রিপোর্ট এসেছে। তার লাশ আনার জন্য গৌহাটি বাংলাদেশ কমিশন ও বাংলাদেশ সীমান্তে বিডিআর ও অন্য সংস্থা অনেক আন্তরিক সহায়তা করেছে। সাবেক খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের সদস্য পুলিশের ডিআইজি তাপতুন আপাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন।’
খেলতে বা খেলা চালাতে গিয়ে দেশের বাইরে মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সেভাবে ছিল না। ব্যাডমিন্টনে প্রথম আন্তর্জাতিক আম্পায়ার এখানেও প্রথম সারিতে। রাসেলের আকস্মিক মৃত্যু ব্যাডমিন্টন সংশ্লিষ্ট অনেকেরই রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
এজেড/এফআই