কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়, সে ভাবনাই ছিল : ইমন
যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে রেকর্ড ৮ বারের চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী ভারতকে হারানোর অন্যতম নায়ক ইকবাল হোসেন ইমন। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন। আসরজুড়ে ৫ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১৩ উইকেট, যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তরুণ এই পেসার।
এশিয়া সেরা হওয়ার পর দুবাই টিম হোটেল থেকে ফোন যোগে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন ইমন।
ভারতের মতো দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন, কী বলবেন...
ইমন: এটা নিয়ে আসলে বেশি কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না। কারণ আমরা ভালো খেলেছি, ম্যাচটা জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ভালো খেলতে পারলে ম্যাচ জিততে পারলে তো ভালোই লাগে। সবার মধ্যে ভালো করার চেষ্টাটা ছিল। ম্যাচ জেতার ক্ষুধাটা ছিল, সবাই সেটা করে দেখিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
টানা দুই এশিয়া কাপজয়ী দলের সদস্য আপনি, কিছুটা ভাগ্যবান মনে হচ্ছে কি না...
ইমন: হা হা। না না, ভাগ্যবান আসলে ভাবার কিছু নেই। সবাই সাপোর্ট করেছে দেশের হয়ে খেলতে পেরেছি, দেশের জন্য খেলা এতটুকুই। আর পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তো অবশ্যই আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। আমার লক্ষ্য সবসময় দলের হয়ে কন্ট্রিবিউট করতে পারা। সব থেকে ভালো লাগা এটাই দলকে জেতাতে পারলে।
ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জোড়া উইকেট তুলে নিয়েছেন, টার্নিং পয়েন্ট ছিল শিরোপা জিততে...
ইমন: ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও স্কোরবোর্ডে ভালোই এগোচ্ছিল ভারত। আমার ভাবনায় ছিল যে কিভাবে রানটা চেক দেওয়া যায়। যদি কয়েকটা উইকেট তুলে নেওয়া যায় তাহলে ম্যাচটা জিততে সহযোগিতা করবে। আলহামদুলিল্লাহ পরপর দুইটা উইকেট তুলে নিয়েছিলাম ওই সময়। যেটা দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেছে। আলাদা করে কোনো চিন্তা ছিল না। শুধু দলের কথাই ভাবছিলাম যে, কিভাবে আসলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়। আমরা সবাই সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।
কখনো কি মনে হয়েছিল যে ম্যাচটা হেরে যাবেন....
ইমন: হ্যাঁ একটু মনে হচ্ছিল কারণ আমরা রান কম করেছিলাম। ফাইনালের মতো ম্যাচে রান কম ছিল তবে কখনো বিশ্বাস হারাইনি। কারণ আমাদের বোলিং অ্যাটাক খুবই ভালো ছিল। বিগত ম্যাচগুলো দেখলে দেখবেন যে পেসাররা অনেক দারুণ করেছিল। যারা আছে সবাই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফাইনালেও সেটা করেছে, আমাদের সবার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করছিল। যে আমরা এই রানেই শেষ পর্যন্ত ফাইট করে যাব, বিশ্বাসটাই কাজে লেগেছে আর কি।
আজিজুল হাকিম তামিম আপনার দলের অধিনায়ক, টুর্নামেন্টজুড়ে তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন...
ইমন: শুরুতে তার ব্যাটিং নিয়ে বলি, আসলে দেখবেন তার ব্যাটিং স্টাইলটা দুর্দান্ত। শেষ ম্যাচে যদিও সেভাবে রান পায়নি। তবে সামনের দিনে আরও ভালো করবে এমনটাই বিশ্বাস করি। দেখেন তার নেতৃত্ব গুণ অসাধারণ পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই সে ভালো করেছে। চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কের তকমা সে ডিজার্ভ করে।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোচদের মাঠে নেমে কথা বলতে দেখা গেছে...
ইমন: কোচরা অনেক চেষ্টা করেছে শুরু থেকেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য। সব সময় টিপস বলেন বা টোটকা বলেন সেটা দিতে চেষ্টা করেছেন। কখন কি করতে হবে সেটা মাঠে এসেও অনেক সময় বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের। যেটা বললেন সেটা দেখেছেন সবকিছু। কোন প্ল্যানটা কখন কাজে লাগাতে হবে সেটাও জানিয়ে দিয়েছিলেন আগে থেকেই। যার যার দায়িত্বটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তারা।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ভালো লাগাটা কি এ কারণে একটু বেশি...
ইমন: টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারলে কার না ভালো লাগে, আমারও ভালো লাগছে। গতবারও এশিয়া কাপজয়ী দলে ছিলাম। তবে তেমন একটা ভালো করতে পারছিলাম না। যদিও ইকোনোমিক্যাল বোলিং করেছিলাম, তবে চেষ্টা করেছিলাম আর কি। এবার আমার চাওয়াটা পূরণ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
দলের সবাই প্রায় নতুন সিনিয়র ৩-৪ জন ছাড়া, বন্ডিংটা কেমন ছিল...
ইমন: খেলা দেখছেন হয়তো, নিশ্চয়ই দেখেছেন দলের ভেতরে সবার সাথে সবার সম্পর্কটা কেমন। বন্ডিং অসাধারণ আর জুনিয়ার যারা আছে তারা আমাদের যথেষ্ট সম্মান জানিয়েছে। যারা সিনিয়র আছে তাদের সবাইকে অন্যরকম সম্মান করেছে। এতদিন একসাথে থেকেছি সবাই সবাইকে চেনাজানা হয়েছে, যা সামনের দিন আরো কাজে লাগবে।
প্রবাসী দর্শকদের যে সাপোর্ট ছিল, নিশ্চয় এনজয় করেছেন...
ইমন: আপনি যখন অন্যজনের বাড়ির এলাকায় খেলতে যাবেন তখন আপনার এলাকার লোক যদি সেখানে আপনাকে সাপোর্ট করে তাহলে কিন্তু আপনার ভালো লাগাটা অন্যরকম থাকবে। তো আমাদেরও ভালোলাগাটা অন্যরকম ছিল। অসাধারণ সাপোর্ট ছিল প্রবাসী দর্শকদের যেটা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এক প্রকার বলতে পারেন যে ওরা টুয়েলভ ম্যান হিসেবে আমাদের কাজ করেছে, উৎসাহ দিয়েছে মাঠে থেকে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।
পরিবার থেকে কী বার্তা পেয়েছেন...
ইমন: পরিবারের সবাই অনেক খুশি। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। আমার নিজের পারফরম্যান্সের জন্যও। তারা খুশি তো আলহামদুলিল্লাহ। পরিবারের সবাই খুশি থাকলে আসলে নিজের কাছে ভালো লাগে।
এসএইচ/এফআই