সবচেয়ে কম ওভারে টেস্ট জয়ের রেকর্ড ইংল্যান্ডের
ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে আতিথ্য দিতে নামে নিউজিল্যান্ড। তবে এখানে আর সুখকর অভিজ্ঞতা হয়নি। বাজবল ঘরানার পারফরম্যান্সে টেস্টে সবচেয়ে কম ওভারে (লক্ষ্য ন্যূনতম ১০০) তাদের হারানোর রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। কিউইদের মাত্র ১০৪ রানের লক্ষ্যের বিপরীতে ইংলিশরা ১২.৪ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখেই জিতেছে।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে এই ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ইংলিশ পেসার ব্রাইডন কার্স। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৬ উইকেট নিয়ে কিউইদের মাত্র ২৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি ১০ উইকেট শিকার করেছেন, ম্যাচে ১০৬/১০ তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার। কিউইদের বিপক্ষে ১-০ লিড নেওয়ার ম্যাচে ইংল্যান্ড বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে।
কিউইদের হার অবশ্য ম্যাচের তৃতীয় দিনই প্রায় লেখা হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় ১৫৫ রানেই স্বাগতিকরা ৬ উইকেট হারিয়ে বসে, তাদের লিড দাঁড়ায় মাত্র ৪ রানে। অবশ্য ড্যারিল মিচেল অপরাজিত থাকায় কিছুটা আশাও টিকেছিল নিউজিল্যান্ডের। ব্যক্তিগত ১৯ রানের পর দিন শুরু করে আজ তিনি ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। ১৬৭ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও একটি ছয় হাঁকিয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে কার্সের বোলিং তোপে তাকে আর কেউ সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেনি। ফলে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ২৫৪ রানে।
প্রথম ইনিংসে ৪৯৯ রান করে ১৫১ রানের লিড পেয়েছিল ইংল্যান্ড। ফলে ম্যাচে তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১০৪ রানের। এমন লক্ষ্য বাজবলের ইংল্যান্ড হেসেখেলেই পেরিয়ে যাবে এমন ধারণা হয়তো স্বাভাবিক। তবে ১ রানে ওপেনার জ্যাক ক্রাউলিকে হারিয়ে তাতে ছোট ধাক্কা লাগে। আরেক ওপেনার বেন ডাকেট আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে করেছেন ২৭ রান। এই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষেক হওয়া জ্যাকব বেথেল ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছেন। ৩৭ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় জয় নিশ্চিত করে ফেরেন এই তরুণ। জো রুট অপরাজিত ছিলেন ২৩ রানে।
দলের জয় নিশ্চিত করার পথে রেকর্ড গড়েছেন বেথেল। ১৩৫.১৩ স্ট্রাইকরেটে তার ব্যাটিং টেস্টে অভিষেক হওয়া কোনো ব্যাটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে নিউজিল্যান্ড পেসার টিম সাউদি ২০০৮ সালে অভিষেক টেস্টে ১৯২.৫০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে এই ইংলিশদের বিপক্ষেই তিনি ৪০ বলে করেছিলেন ৭৭ রান। এ ছাড়া টেস্ট অভিষেকে ১২৫.৭১ স্ট্রাইকরেটে লুক রনকি (৭০ বলে ৮৮), ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১১১.৩২ স্ট্রাইকরেট (৫৩ বলে ৫৯) এবং ভারতের শেখর ধাওয়ান ১০৭.৪৭ স্ট্রাইকরেটে (১৭৪ বলে ১৮৭) ব্যাট করেন।
দলীয়ভাবে ইংলিশরাও দুটি রেকর্ড গড়েছে এদিন। তারা লক্ষ্য পেরিয়েছে মাত্র ১২.৪ ওভারে, যা সবচেয়ে কম ওভারে একশ’র বেশি রানতাড়ায় সফল হওয়ার রেকর্ড। এর আগে বাংলাদেশের দেওয়া ১০৯ রানের লক্ষ্য ১৮.৪ ওভারে পেরিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এ ছাড়া বেন স্টোকসের দল আজ রানতাড়ায় ৮.২১ গড়ে রান তুলেছে, যা টেস্টে সবচেয়ে বেশি গড়ে রানতাড়ায় সফল হওয়ার রেকর্ড। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০০–এর বেশি রান তাড়া করেছে ওভারপ্রতি ৬.৮২ গড়ে।
ম্যাচটি ছিল রুটের ১৫০তম টেস্ট, যদিও তিনি প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রান করে অভিজ্ঞ এই তারকা শচীন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ড ভেঙেছেন। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে এতদিন সর্বোচ্চ রান (১৬২৫) করার রেকর্ডটি ছিল ভারতীয় কিংবদন্তির দখলে। আজকের ম্যাচ শেষে চতুর্থ ইনিংসে রুটের রান ১৬৩০। এ ছাড়া এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে ন্যূনতম ১০০০ রান করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটের (৮৮.০৮) রেকর্ড গড়েছেন বেন ডাকেট (১০৪২)। তার সামনে অবশ্য শীর্ষে থাকা বীরেন্দর শেবাগকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে শেবাগ এক বছরে ৯০.৮০ স্ট্রাইকরেটে টেস্টে ১৪২২ রান করেছিলেন।
এএইচএস