'ক্রিকেটার হিসেবে পারিনি, কোচ হিসেবে পারলাম'
২০২৪-২৫ জাতীয় ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সিলেট বিভাগ। আজ (মঙ্গলবার) ঘরের মাঠে বরিশাল বিভাগকে হারিয়ে জাতীয় লিগের প্রথম শিরোপার স্বাদ পেল ‘দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ’।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন রাজিন সালেহ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পোস্টকে জানালেন দলের সাফল্য নিয়ে নিজের অনুভূতি। সুযোগ পেলে জাতীয় দলে কোচিং করাতে চান বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
ঢাকা পোস্ট : চ্যাম্পিয়ন দলের প্রধান কোচ, সিলেটের প্রথম শিরোপা এলো আপনার হাত ধরে...
রাজিন সালেহ: শিরোপার স্বাদ অন্যরকম সবসময়, সেটা যেখানেই হোক। এটা একটা বড় সফলতা আমি মনে করি। একটা জিনিস দেখেন যে, ২৩-২৪ বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিলেট চ্যাম্পিয়ন হলো জাতীয় লীগে এটা আমার জন্য একটা বড় পাওয়া। ক্রিকেটার হিসেবে পারিনি তবে কোচ হিসেবে পারলাম এটা আরও ভালো তৃপ্তি দিচ্ছে আমাকে। তবে সব ক্রেডিট আমি ক্রিকেটারদের দিতে চাই, তারাই মাঠে খেলেছে।
ঢাকা পোস্ট : আসর শুরুর আগে কি ভেবেছিলেন শিরোপা জিততে পারবেন?
রাজিন সালেহ: দেখেন আমরা শেষ ম্যাচটা যখন খেলে সিলেট এসেছিলাম তখন আমাদের মধ্যে একটা চিন্তা বা কথাবার্তা হয়েছিল যে বরিশালের সাথে আমরা ম্যাচটা জিতব। কারণ আমাদের বোলিং লাইন অনেক স্ট্রং। তারপরও প্রথম ইনিংসে ঠিকমতো করতে পারিনি। তবে আমাদের একটা বিশ্বাস ছিল যে প্রথম ইনিংসে বরিশাল ভালো করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ভালো করব। এই বিশ্বাসটা আমাদের কাজে লেগেছে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলেছে। শেস ইনিংসে বোলাররা দারুণ করেছে।
ঢাকা পোস্ট : সাদামাটা একটা দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন কোচ হিসেবে কতটা তৃপ্ত?
রাজিন সালেহ: একটা সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে যখন আপনি কোচিং করাবেন তখন সেখানে তৃপ্তি টা থাকবে একরকম। আর যখন আপনি কাগজে-কলমে ছোট দল নিয়ে কোচিং করাবেন তখন সেখানে ভালো করলে থাকে অন্যরকম তৃপ্তি। আমাদের ব্যাটিংটা খুব বেশি যে ভালো ছিল সেটা বলবো না। কাগজ কলমে হিসাব করলে কিন্তু আমরা ৮ দলের মধ্যে ৫-৬ নম্বর দল ছিলাম। এই দল নিয়ে কাজ করে যখন আপনি সফল হবেন একটা দলকে রেজাল্ট করাতে পারবেন তখন তৃপ্তিটা কিন্তু আরো বেশি হবে। এটা মনে হয় আমার সেরা পাওয়া। বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বা অন্যান্য যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তবে এটা আমার কাছে সেরা পাওয়া বলে আমার মনে হয়।
ঢাকা পোস্ট : দলে বড় তারকা না থাকার পরেও এমন সাফল্য। কিভাবে দেখছেন?
রাজিন সালেহ: আমি ক্রিকেটারদের এগিয়ে রাখবো। তারা তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অবশ্য আমার একটা প্ল্যান ছিল কিভাবে তাদেরকে আরো ভালো করা যায় সে দীক্ষাটা দিয়েছি। আমি বলব যে ছেলেরা আমার মোটিভেশনটা খুব ভালোভাবেই নিয়েছে, সেভাবে কাজে লাগিয়েছে আর কি।
ঢাকা পোস্ট : দেশি কোচদের খেলোয়াড়রা কাঁধে নিয়ে উদযাপন করছেন, দেশের ক্রিকেটে সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। আজ দেখা গেল। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
রাজিন সালেহ: (তৃপ্তির হাসি) সত্যি কথা বলতে কি আমাদের দলের বন্ডিংটা অনেক ভালো। ক্রিকেটার বলেন কোচিং স্টাফ বলেন সবার সাথে সবার অন্যরকম সম্পর্ক। তারা আমাকে অনেক ভালবাসে সত্য কথা বলতে এবং তারা সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে। যখন কোচিংয়ে এসেছিলাম সিলেটের হয়ে তখন তারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছিল। জাতীয় দলে যারা ছিল বা আশেপাশে যারা ছিল সবাই। কাঁধে তুলে নেওয়া একটা আলাদা ফিলিংস এটা আসলে মুখে বলা সম্ভব না।
ঢাকা পোস্ট : অনেক কোচকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নিজের পছন্দের খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দেওয়া, ভালো খেলোয়াড় বসিয়ে রাখা। আপনি কিভাবে দেখছেন?
রাজিন সালেহ: দেখেন এই বিষয়টা খুব ভালো একটা প্রশ্ন করেছেন। স্পেশালি ডিভিশন থেকে এ বিষয়ে অনেক বেশি বেশি কথা উঠেছে। দেখুন অনেক খেলোয়াড় থাকে পছন্দের তবে সত্যি কথা বলতে আমি আমার জায়গা থেকে সৎ থাকার চেষ্টা করি। আমার পছন্দ থাকতে পারে কিন্তু আমি আমার প্রফেশনাল এর জায়গায় ভালো খেলোয়াড় না পেল দলে রাখি না। প্রফেশনাল জায়গার আমি আমি সৎ থাকতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : বিসিবি যদি জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ দেয় প্রস্তুত কি না?
রাজিন সালেহ: অবশ্যই রাজি আছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে কাজ করা এটা গর্বের বিষয়। আমাকে যদি কাজ করার সুযোগ দেয় আমি অবশ্যই আসব। আগেও এসেছিলাম কোচ হয়ে। এ ছাড়া আমি যদি সঠিক পারিশ্রমিক পাই তাহলে কেন আসব না।
ঢাকা পোস্ট : অমিত হাসানকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাকে কেমন দেখছেন, জাতীয় দলের জন্য কতটা প্রস্তুত বলে মনে করেন?
রাজিন সালেহ: অমিত অবশ্যই ভালো খেলোয়াড়। আমি ছোট থেকে তাকে দেখেছি এইচপিতে কাজ করেছি, আমি তখন ব্যাটিং কোচ ছিলাম। লাস্ট দুই তিন বছর পারফর্ম করে আসছে দলের হয়ে। এখন ওকে জাতীয় দলের টেস্টে ঢোকানোর জন্য কথা হচ্ছে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত আরেকটু সময় নেওয়া হোক। এটা সিলেক্টরদের চিন্তাভাবনা তবে আমার চিন্তা হচ্ছে তাকে আর একটা বছর দেখা হোক, আর একটু পাকাপোক্ত রেডি করে নেওয়া হোক। তাহলে তার চ্যালেঞ্জটা একটু সহজ হবে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে সময় নিলে ভালো হয় আমার মতে।
ঢাকা পোস্ট : এনসিএল টি-টোয়েন্টি নিয়ে প্রত্যাশা কি?
রাজিন সালেহ: চার দিনের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এখন টি-টোয়েন্টি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারি তাহলে তো ভালো হয়। চ্যাম্পিয়ন এর স্বাদ সবসময় অন্যরকম।
এসএইচ/এফআই