লিগের সেরা গোলরক্ষকই ডাক পান না জাতীয় দলে!
বাফুফে গতকাল গত মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সেরা পারফর্মারদের পুরস্কৃত করেছে। বাফুফের বিচারে সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন গত মৌসুমে বাংলাদেশ পুলিশ এফসিতে খেলা আহসান হাবিব বিপু। লিগে যিনি সেরা তিনি স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দলে থাকবেন। অথচ বিপু মার্চ-নভেম্বর উইন্ডো কোনো সময়ই জাতীয় দলে ডাক পাননি।
গোলের খেলা ফুটবল। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতারই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার প্রদান করে উৎসাহ ও আকর্ষণ সৃষ্টির পাশাপাশি বিতর্কের জন্মও হয়েছে। বিশেষ করে গোলরক্ষক মনোনয়নে জাতীয় দল চরম প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে পড়েছে।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর কাছে বিষয়টি দ্বান্দ্বিক সংকটের মতো লাগছে,‘লিগের পারফরম্যান্স দেখে জাতীয় দল গঠন হয়। একজন লিগের সেরা পারফর্মার অবশ্যই জাতীয় দলে থাকবেন। আবার জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া একজন সেরা হতে পারে না।’
মিন্টু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলেও বাস্তবিক অর্থে বিপুকে সেরা মনোনয়নের মাধ্যমে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ অথবা বাফুফের বিচারকমন্ডলীর মধ্যে এক পক্ষের ভুল স্পষ্ট। কারণ জাতীয় দলেই ডাক না পাওয়া একজন লিগে সেরা গোলরক্ষক হতে পারেন না আবার তিনি যদি আসলেই সেরা গোলরক্ষক হন তাহলে জাতীয় দলে না ডেকে কোচরা ভুল করেছেন।
আহসান হাবিব বিপু ঘরোয়া ফুটবলে বেশ পরিচিত গোলরক্ষক। ঢাকা মোহামেডানের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন। পুলিশেও নিয়মিত খেলেছেন। সবারই স্বপ্ন থাকে দেশের জার্সিতে খেলার। খেলা তো দূরে কথা, বিপু ডাকই পান না। লিগের সেরা গোলরক্ষক হওয়ার পর তার ডাক না পাওয়ার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে জোরেশোরে। এ নিয়ে তার মন্তব্য খানিকটা আক্ষেপ জোড়ানো, ‘লিগের সেরার স্বীকৃতি পেয়ে ভালো লাগছে। জাতীয় দলের বিষয়টি সম্পূর্ণ কোচের। হয়তো কোচের দৃষ্টিতে আমি যোগ্য নই।’
হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার সময় লিগে নিয়মিত না খেলা অনেক ফুটবলার জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছেন। গোলরক্ষকদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিপুর ডাক না পাওয়াটা বঞ্চনার শিকারই মনে করেন অনেকে। এ নিয়ে বিপুর প্রতিক্রিয়া,‘এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন এখন সহকারী কোচ। লিগের সেরা গোলরক্ষকের জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ার বিষয়ে তার মন্তব্য,‘প্রথমত লিগের সেরাদের কিভাবে এবং কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বাছাই করেছে এই ব্যাপারে আমরা জ্ঞাত নই। আমাদের খেলার স্টাইলের সঙ্গে যায় এমন গোলরক্ষকদেরই ডাকা হয়। বিপু ভালো গোলরক্ষক। সে আমাদের পটেনসিয়াল গোলরক্ষকের তালিকায় রয়েছে।’
বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির পক্ষ থেকে সেরা ফুটবলার, গোলরক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠানের পরপরই বিচারক প্যানেলে কারা আছেন বিষয়টি জানতে চাইলে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান বিষয়টি খোলাসা করেননি। ফলে কারা-কোন আঙ্গিকে সেরাদের বেছে নিয়েছেন এই প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়েছে।
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও সাবেক গোলরক্ষক কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য্য আরেকটি বিষয় সামনে এনেছেন। তার মতে, ‘গোলরক্ষকের প্রকৃত পারফরম্যান্স যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজন গোলরক্ষক কোচ। যিনি ক্লাবের সকল গোলরক্ষকের তথ্য ও পারফরম্যান্স নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলে স্থায়ী গোলরক্ষক কোচই নেই।’
বিপ্লব ভট্টাচার্য্য জাতীয় দলে গোলরক্ষক কোচ যখন ছিলেন একাডেমী নিয়েও কাজ করেছেন। আসিফ, মাহিনের মতো তরুণ গোলরক্ষক উঠে এসেছিল। গত বছর থেকে গোলরক্ষক কোচ নিয়ে বাফুফে উদাসীন। হেড কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পছন্দ অনুযায়ী স্প্যানিশ মিগেল এই বছর কাজ করেছেন গোলরক্ষক কোচ হিসেবে। জাতীয় দল ডাকার পর অনুশীলনে এসেছেন আবার খেলা শেষে ফিরেছেন। অথচ তিনি বছরব্যাপী গোলরক্ষকদের পারফরম্যান্স স্বচক্ষে দেখেন না। স্বল্প দিন কাজ করেও মোটা অঙ্কের বেতন নিয়েছেন বিদেশি গোলরক্ষক কোচ।
সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর উইন্ডোতে স্প্যানিশ গোলরক্ষক কোচ ছিলেন না। সেপ্টেম্বরে ভুটানে বসুন্ধরার গোলরক্ষক কোচ নুরুজ্জামান নয়ন ও নভেম্বর উইন্ডোতে রুপ্না চাকমাদের কোচ উজ্জ্বল ছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্বে। ফুটবলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পজিশন গোলরক্ষক। সেই গোলরক্ষক কোচ একেবারে অস্থায়ী। যা অপেশাদারিত্বের শামিল। এই বিষয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সহকারী কোচ হাসান আল মামুন বলেন, ‘এটা আসলেই সত্যি জাতীয় দলে একজন স্থায়ী গোলরক্ষক কোচ দরকার। কোচিং স্টাফের পক্ষ থেকে ফেডারেশনের ম্যানেজম্যান্টের কাছে আমাদের স্থায়ী গোলরক্ষক নিয়োগের অনুরোধ থাকবে।’
এজেড/এফআই