বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হতে চান ইমরুল কায়েস
লম্বা একটা সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন ইমরুল কায়েস। তবে জাতীয় দলের রাডার থেকে বাইরে আছেন অনেকটা দিন ধরেই। বিগত ৫ বছর ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন। সেই অপেক্ষা আর ফুরোয়নি তার। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে বেশ অনেকটাই দূরে এই ওপেনার। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরেই কি না লাল বলের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে নিলেন ইমরুল কায়েস।
খুলনা বিভাগের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে নিজের শেষ ইনিংসটায় ইমরুল অবশ্য বেশি কিছু করতে পারেনি। তার দলও খুব যে সুবিধা করতে পেরেছে তা নয়। যদিও বিদায়বেলায় পুরো সম্মানটাই পেয়েছেন এই ক্রিকেটার। গার্ড অব অনার পেয়েছেন সতীর্থদের কাছ থেকে। নিজের শেষ ইনিংসের পর কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে। জানালেন ক্রিকেটের লম্বা ক্যারিয়ারের বিভিন্ন গল্প।
ঢাকা পোস্ট: লাল বলের ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস খেলে ফেললেন। ৮ হাজার রান পূরণ হলো না। আক্ষেপ থেকে গেলো কি না?
ইমরুল: না না ভাই এসব নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নাই। কারণ যতদিন খেলছি আলহামদুলিল্লাহ। হয়তো আরো দুই একটা ম্যাচ খেললে এটা কাভার হয়ে যেত। তবে এসব চিন্তা আমি করি নাই আসলে, যা খেলেছি হয়েছে আর কি। অবশ্য ৮০০০ রান করলে ভালো লাগতো এই আর কি, পারি নাই ঠিক আছে।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্ট: আপনি নিজে কি মনে করেন যে, সঠিক সময়ে লাল বলের খেলা ছাড়তে পেরেছেন?
ইমরুল: আমি আমার অবস্থাটা বুঝি, আমি মনে করি আমি আগেরকার ইমরুল যেমন খেলতাম এখন তেমনটা হচ্ছে না। আগে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতাম এখন সেটা হচ্ছে না। চার দিনের খেলা মাঠের ভেতরে ফিল্ডিং করা শরীরের একটা ক্লান্তি চলে আসে। আমি বুঝছি বিষয়টা যে যারা এখন ইয়াং আছে তাদের সাথে ফাইট করার ক্যাপাবিলিটি আমার এখন নাই। নিজের কাছে লজ্জা লাগে যখন আমি ওদের সাথে ফাইট করতে পারিনা তখন। আমি এ কারণে নিজেই মনে করি যে আমার সরে যাওয়া উচিত।
ঢাকা পোস্ট: ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটু কঠিন ছিল কি না?
ইমরুল: সত্যি কথা বলতে কি আমিও নিজের সিদ্ধান্তটাই সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তবে ওদের এটা নিয়ে এত বেশি কথা ছিল না। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মা বলেছে সব থেকে বড় জিনিস সুস্থ থাকা। না পারলে তো কষ্ট করে খেলার দরকার নাই। আমার লাইফের তিনজন কোচের সাথে কাজ করেছি খুব আন্তরিকভাবে। জামিল রহমান স্যার, ফাহিম স্যারদের সাথে আলাপ করেছি। বাবুল ভাইয়ের সাথে আলাপ করেছি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি অনেক। উনারা সবাই আমার ডিসিশনকে সম্মতি জানিয়েছে সবাই সম্মানের কথা জানিয়েছে।
ঢাকা পোস্ট: সাধারণত আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা থামতে জানেন না। অতীতে বা বর্তমানে এর নজির আছে বেশ। আপনি এটা উপলব্ধি করলেন কীভাবে?
ইমরুল: প্রথমত নিজের খেলাটা বলেন বা ফিটনেসটা বলেন সেটা আমি তো বুঝি। চার দিনের ম্যাচ খেলার জন্য যে ফিটনেস লেভেলটা সেটা আসলে এই মুহূর্তে নেই। আর এছাড়া আমার পারিবারিক ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে, তো সব মিলিয়ে চিন্তা করলাম যে চারদিনের ম্যাচের জন্য দুইটা মাস সময় দেওয়া, বা বাংলাদেশে টাইম দেওয়া একটু কঠিন। ওইসব কারণেই মূলত ছেড়ে দেওয়া চারদিনের ম্যাচ।
আর টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে বলেন এটা কিন্তু আলাদা। আমি হয়তো বা চাইলে আরো টানতে পারতাম, অনেকের থেকে ভালোও খেলতে পারতাম। কিন্তু না আমার খেলার থেকে জুনিয়ারদের খেলা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি।
ঢাকা পোস্ট: বিদায়বেলায় জাতীয় দলের সতীর্থ দুজন এসেছিলেন। আশরাফুল-তামিমরা আলাদা করে কী বলেছিল আপনাকে?
ইমরুল: তামিম খুব ভালো ভালো কথা বলেছিল সেদিন। বলেছিল যে আমার কি কি আছে বা অর্জন কি কি আছে এটা বিষয় না। নিউজিল্যান্ডে আমাদের একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে যে আমি ক্রাইস্টচার্চে সেঞ্চুরি করেছিলাম। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা মাইলফলক ছিল যে নিউজিল্যান্ডে সেঞ্চুরি করতে পারে সেটা আমি দেখিয়ে দিয়েছিলাম সে সময়। আমি করার পরে অনেকের সে বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল সেটাই তামিম বলতে ছিল আর কি।
আর আশরাফুল ভাই, তার ক্যাপ্টেন্সিতে আমি প্রথম খেলেছিলাম আমার অভিষেক হয়েছিল জাতীয় দলে। এটা বলে উনি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিল সেদিন। সে এখন কোচিং লাইনে চলে এসেছে। সে আমাকে বিদায়টা দিয়েছে। এ কারণে খুব খুশি তার হাত থেকে আমি ক্রেস্টটা নিতে পারছি এটা আমার জন্য ভালোলাগা। এটা অবশ্যই একটা আবেগের জায়গা ইমোশনের জায়গা।
ঢাকা পোস্ট: লাল বল ছাড়লেন। একটা অধ্যায়ের শেষ। সাদা বলে আসলে কতদিন খেলতে চান?
ইমরুল: যে কয়দিন আমি মনে করব যে আমি ফিট ততদিন খেলার ইচ্ছা আছে। যখন মনে করব যে আমার শরীর চলতেছে না বা অন্যদের সাথে আমি পেরে উঠতেছি না। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে আমি সেদিন বলে দিব যে আমার শেষ।
ঢাকা পোস্ট: ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে তো কোচিংয়ে ফিরবেন। বিসিবি যদি কখনো ডাকে দেশে ফিরে কোচিং করানোর জন্য আপনি ফিরবেন কি না?
ইমরুল: অবশ্যই, অবশ্যই। আমি তো সবসময় বলছি আমি অলওয়েজ ওপেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। যদি বলেন যে একজন ব্যাটিং কোচ হিসেবে বা ভবিষ্যতে যদি কখনো কোচ হিসেবে আসতে পারি আমি নিজেকে অবশ্যই সৌভাগ্যবান মনে করব। আমার যত ব্যস্ততা থাকুক না কেন, যত ভালো চাকরি থাকুক না কেন। যতই অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল হোক না কেন আমি ওটা ছেড়েই দেশে ফিরে আসব। কারণ নিজের দেশের হয়ে কাজ করা নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এটা সবার ভাগ্যে হয় না আসলে।
ঢাকা পোস্ট: জাতীয় দলে আসার আগে খুলনা বিভাগের হয়ে খেলা শুরু করেছিলেন, বিদায় বেলায় যদি কিছু বলতে চান
ইমরুল: আপনি যদি বলেন, আমার পরিবারের পরে সবথেকে বেশি কোথায় ইনজয় ইনজয় করি সেটা হচ্ছে খুলনা টিমের ড্রেসিংরুম। এটা আমার দেখা ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ড্রেসিংরুম। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি দেখেছি যে জুনিয়র সিনিয়র একে অপরের সাথে সবাই খুবই আন্তরিক। মাশরাফি ভাই যখন ছিল, রাজ্জাক ভাই ছিল, তুষার ভাই ছিল, আমরা কখনও কেউ বুঝতে পারিনি। সুমন ভাই যখন ছিল উনার আন্ডারে আমি খেলেছিলাম।
আমাদের সিনিয়ার জুনিয়রদের কখনো বুঝতে দেয়নি যে, আমি নতুন ছেলে এত বেশি মজা করতাম আমরা ড্রেসিংরুমে। মোটিভেশনটা আসলে তখন থেকেই ছিল ভালো না খেললে থাকতে পারবো না এমন চিন্তা ছিল আলহামদুলিল্লাহ পেরেছি। খুলনার হয়ে কয়েকটা ট্রফি জিতেছি, এটা আমার ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় মাইলফলক আলহামদুলিল্লাহ।
ঢাকা পোস্ট: ক্যারিয়ারে কোনোদিন কোনো অধিনায়ক আপনাকে কি ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে খেলার অনুমতি দিয়েছিল নিশ্চয়!
ইমরুল: কঠিন প্রশ্ন আসলে, তবে এরকম ফ্রি লাইসেন্স কেউ দেয়নি কোনদিন। তবে সবসময় চাপের ভিতরে খেলেছি, সংগ্রাম করেছি। হাথুরুসিংহে একবার আমাকে দুইটা সিরিজে ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছিল। বলেছিল ছয়টা ম্যাচ তোমাকে আমি বাদ দিব না। ইংল্যান্ডের সাথে তখন প্রথম ম্যাচে আমি সেঞ্চুরি করি। তবে অধিনায়কের মাধ্যমে কখনো কিছু পায়নি যেটা হাথুরু আমাকে দিয়েছিল।
এসএইচ/জেএ