৯ ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি; ফিরলেন পুরোনো অনেকেই
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১৮ সালের আইন অনুসারে নয়টি ফেডারেশনের বিদ্যমান নির্বাহী কমিটি ভেঙেছে। ভাঙার পাশাপাশি অ্যাডহক কমিটিও গঠন করেছে ফেডারশেনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অ্যাথলেটিক্স, হকি, কাবাডি, দাবা, ব্রিজ, স্কোয়াশ, বিলিয়ার্ড,বাস্কেটবল ও টেনিস ফেডারেশনের বিদ্যমান কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এই অ্যাডহক কমিটিতে ফিরেছেন সাবেক অনেক কৃতি সংগঠক ও খেলোয়াড়রা।
বাংলাদেশের দাবার পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের চার জনই হয়েছে সৈয়দ সুজাউদ্দিনের আমলে। সাবেক খেলোয়াড় ও আমলা এবার দাবা ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন ফিদে মাস্টার তৈয়বুর রহমান সুমন। ১৪ সদস্যের অ্যাডহক কমিটিতে বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শোয়েব রিয়াজ আলমই শুধু মাত্র অ্যাডহকে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি এই কমিটির সহ-সভাপতি।
দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় ফেডারেশন অ্যাথলেটিক্স। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছেন সাবেক তারকা অ্যাথলেট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। অ্যাথলেটিক্স বড় ফেডারশেন হওয়ায় অ্যাডহক কমিটির দৈর্ঘ্য ১৯ জনের। বিগত কমিটিতে তারকা অ্যাথলেট ফরিদ খান চৌধুরি নির্বাচনই করতে পারেননি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাথলেটকে সদস্য মনোনীত করেছে। সাবেক অ্যাথলেট, সংগঠক ছাড়াও কয়েকজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন।
ফুটবল, ক্রিকেটের পর দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় দলীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত হকি। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে ক্লাবগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে। হকির সাধারণ সম্পাদকে কোনো ক্লাব বা জেলার কর্মকর্তা বেছে নেয়নি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর্মি স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডের কর্নেল রিয়াজুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে কমিটিতে রয়েছে আবু জাফর তপন, শান্টা, শহীদুল্লাহ দোলন। পৃষ্ঠপোষক ক্যাটাগরি থেকে এসেছেন ইসতিয়াক সাদেকসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী।
টেনিস ফেডারশেনের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ কারেন। সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সংগঠক গত এক যুগের বেশি সময় ক্রীড়াঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দুঃসময়ে তাকে টেনিসের দায়িত্ব দিয়েছে। কারেনকে সম্পাদক করে সেক্রেটারি করা হয়েছে ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই শিকদারকে। ১৯ সদস্যের কমিটিতে সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠকদের সাথে রয়েছে ব্যবসায়ী-পৃষ্ঠপোষকও।
স্কোয়াশে ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসেনি। অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কামরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক রেখেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বুদ্ধি ভিত্তিক খেলা ব্রিজ ফেডারশেনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নাইমুল হাসানকে। বাংলাদেশে ব্রিজের চর্চা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ক্লাবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ব্রিজ খেলোয়াড় রয়েছেন কমিটিতে।
জাতীয় খেলা কাবাডিতে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ। সোহাগ মূলত ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ব্যবসায়ী। সাবেক খেলোয়াড়, কোচ, সংগঠকদের পাশ কাটিয়ে সোহাগকে বেছে নিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কাবাডি ফেডারেশনে পুলিশের কর্মকর্তাদরে আধিক্য ছিল বেশি। পেশাগত ক্ষেত্রে সমালোচিত যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হককে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটিতেও যুগ্ম সম্পাদক রেখেছে। নয় কমিটির সবগুলো নাম-পদবি কম্পিউটার টাইপ থাকলেও কাবাডি ফেডারেশনের এই যুগ্ম সম্পাদকের নাম হাতে লেখা।
বিলিয়ার্ড-স্নুকারে সভাপতি মনোনীত হয়েছেন ইউএস বাংলা গ্রুপের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী রিয়াসাত করিম ভূইয়া। বাস্কেটবল ফেডারেশনের সভাপতি করা হয়েছে সাবেক খেলোয়াড় ডাক্তার শামীম নেওয়াজকে ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক খেলোয়াড়-কোচ মেজর জেনারেল আতিকুল হাফিজ। বাস্কেটবলে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের লক্ষ্যে ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করে। সেই সার্চ কমিটি ৫৩ ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে প্রথম ধাপে নয়টি ফেডারশেনের কমিটি সুপারিশ করেছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সেই কমিটি গত প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যালোচনা করেছে। আজ রাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কয়েক দিন পর সার্চ কমিটি আরো কয়েকটি ফেডারেশনের কমিটি প্রস্তাব করবে।
নতুন অ্যাডহক কমিটিগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন—
এজেড/জেএ