দীর্ঘদিন পর ফুটবলাঙ্গনে মেজর হাফিজ
বর্তমান প্রজন্মের কাছে মেজর হাফিজের পরিচয় শুধুই রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র নেতা। এক সময় ছিলেন মন্ত্রীর পদেও। তবে আরেক পরিচয় তিনি সাবেক ফুটবলার এবং বাফুফের সাবেক সভাপতি।
দীর্ঘদিন পর আজ (শুক্রবার) এসেছিলেন সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবে। এই ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেজর হাফিজ। নিজের গড়া ক্লাবে এলেন অনেকদিন পর। আজ এক সান্ধ্যকালীন আড্ডায় ফিরে যান ফুটবলের সেই সোনালী দিনগুলোতে।
সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে একমাত্র ফুটবলারদের একটি ক্লাব রয়েছে। অন্য কোনো খেলার সাবেক খেলোয়াড়দের কোনো ক্লাব টেন্ট নেই। সোনালী অতীত ক্লাবের এমন ঠিকানার উদ্যোক্তা মেজর হাফিজ, ‘খেলা ছাড়ার পর ফুটবলারদের একটি জায়গা দরকার। যেখানে মাঝে-মধ্যে খেলা এবং বসে আলোচনা করা যায়। সেই চিন্তা থেকে সোনালী অতীত ক্লাবের উদ্যোগ গ্রহণ করি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাবের জায়গা লিজ নেওয়া হয়।’
নিজের গড়া ক্লাবেই বেশ কয়েক বছর আসেননি মেজর হাফিজ। ফুটবলার ও সংগঠক পরিচয় ছাপিয়ে রাজনীতিবিদ পরিচয়ই মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ প্রিয় ক্লাব প্রাঙ্গনে এসে তার একটা সুস্পষ্ট বার্তা, ‘ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা উচিৎ। যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদেরই ক্রীড়াঙ্গনে প্রাধান্য পাওয়া দরকার।’
সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে ফুটবল থেকে অবসর নেন মেজর হাফিজ। এরপর আশির দশক পুরোটাই ছিলেন সংগঠক। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক-সভাপতি দুই পদেই ছিলেন। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে এএফসি-ফিফার কমিটিতেও ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে আমেরিকা বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা ড্রাগ ব্যবহারে নিষিদ্ধের কমিটিতেও তিনি ছিলেন। আজকের মতবিনিময় সভায় সেই বিশ্বকাপ ও ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটির নানা ঘটনা স্মরণ করলেন।
হাফিজের সমসাময়িক খেলোয়াড় গোলাম সারওয়ার টিপু, সাবেক তারকা ফুটবলার খুরশিদ আলম বাবুল, শেখ মো. আসলাম, সুলতান, মহসিনসহ আরও অনেকেই মেজর হাফিজের বক্তব্য বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। সোনালী অতীত ক্লাবে এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ আসলাম। তিনি আজকের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, ‘হাফিজ ভাই আমাদের এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। ক্লাবের পক্ষ থেকে আজ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মান জানান হয়েছে। বিভিন্ন প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্যে সুন্দর মতবিনিময়ও হল।’
সাবেক ফুটবলারদের এই ক্লাব স্রেফ আড্ডা ও বৈকালিক ফুটবলে গা গরমের জন্য। সেই ক্লাবেও ৫ আগস্ট পরবর্তী পট-পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। সভাপতি আব্দুল গাফফার ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন পদত্যাগ করেন। কমিটির অনেকেই তাদের প্রতি অনাস্থা আনার অবস্থায় ছিলেন যদিও। এজন্য আগেভাগেই দুই সাবেক ফুটবলার সরে যান। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে যেমন তারা সরতে বাধ্য হয়েছেন, তেমনি রাজনৈতিক কারণেই তারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন।
সোনালী অতীত ক্লাবে কমিটি গঠনে কখনও ভোটাভুটি হয় না। ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে থাকেন। আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে তারা সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি ঘোষণা করেন। শুধুমাত্র গত কমিটি নিয়েই ক্লাবে একটি অসুস্থ পরিবেশ হয়েছিল।
এজেড/এএইচএস