বিসিবি গঠনতন্ত্রের সংস্কারের তাগিদ এনএসসি'র
সাবেক জাতীয় অধিনায়ক ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিনই গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের বিষয় আলোকপাত করেছিলেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে এখনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিসিবিকে গঠনতন্ত্র সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অভিভাবক সংস্থা হলেও ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের আদর্শকে যথাযথ সম্মান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রীড়াঙ্গনের অংশীজন মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রয়োজন মনে করে বিধায় এই অনুরোধ করছে।
ক্রিকেট বোর্ডকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। এই কমিটিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একজন প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত থেকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালেই গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনেছে বিসিবি। পাপনের আমলে তিন বার গঠনতন্ত্র সংশোধন করলেও মৌলিক দুর্বলতা ও স্বার্থের সংঘাত রয়েছে বেশ কয়েকটি। বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ সাবেক অধিনায়ক কোটায় কাউন্সিলর ছিলেন।
ক্যাটাগরি সি থেকে সাবেক জাতীয় অধিনায়করা কাউন্সিলর হলেও নির্বাচন করার অধিকার নেই। নির্বাচনের অধিকার না থাকা সেই ব্যক্তিই এনএসসি কোটায় পরিচালক হয়ে এখন বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত। সেই নির্বাচিত ব্যক্তি পাঁচজন সাবেক অধিনায়ককে কাউন্সিলর মনোনীত করেন। আবার ক্রিকেট বোর্ড সাবেক দশ জাতীয় খেলোয়াড়কেও কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয়। ক্রিকেট বোর্ডের দশ জনের মনোনয়নের ক্ষেত্রেও সভাপতির ইচ্ছে-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। যা অনেকটা স্বার্থের সংঘাত।
বিসিবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতি। সেই সভাপতি নির্বাচনে ভোট দেয়ার এখতিয়ার নেই সাধারণ কাউন্সিলরদের। পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পরিচালক হওয়ার পর পরিচালকদের মধ্যে থেকেই সভাপতি নির্বাচন হয়। সেটি আলাদা নির্বাচন হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রজ্ঞাপন বা প্রক্রিয়া নেই। বোর্ড সভায় প্রস্তাবক-সমর্থকের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছে ২০১৩ সাল থেকে।
অন্য সকল ফেডারেশনে নির্বাচনে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী সভা করে বা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয়। ২০১২ সালে ক্রিকেট বোর্ডের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ের কাউন্সিলরশীপ নির্ধারণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারকে বিশেষ এখতিয়ার দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের বিসিবি নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে পাপন পছন্দের মতো কাউন্সিলর করে এনেছিলেন এমন অভিযোগ ছিল অনেক। সাবেক দুই জাতীয় অধিনায়ক আকরাম খান ও নাইমুর রহমান দুর্জয়ের চট্টগ্রাম এবং মানিকগঞ্জ থেকে কাউন্সিলরশীপও প্রশ্নের মুখে ছিল।
বিসিবির বিদ্যমান গঠনতন্ত্র মূলত ২০১২ সালের। সেই গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা সংশোধন নিয়ে মামলা হয়েছিল। ২০১৩ সালে বিসিবি নির্বাচন হলেও মামলা চলমান ছিল। ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগে সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়। পাপন-মল্লিক আমলে বিসিবি কয়েক দফা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করলেও ফ্রাঞ্চাইজি লিগ বিপিএল গঠনতন্ত্রের বাইরেই থেকে গেছে।
এজেড/এফআই