নতুন প্রজন্মের এল-ক্লাসিকোর প্রথম মহারণ আজ
ডাগআউটে পেপ গার্দিওলা এবং হোসে মরিনিও। মাঠে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, জাবি আলোনসো-মেসুত ওজিলরা রিয়ালের শুভ্রতার প্রতিনিধি। আর স্পেনের মাটিতে কাতালুনিয়ার স্বপ্নটা জিইয়ে রাখার তাগিদে মাঠে নামছেন লিওনেল মেসি, জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা কিংবা কার্লোস পুয়োলরা। এল-ক্লাসিকো শুধু মাঠের ৯০ মিনিটের লড়াই না। এখানে মিশে দুটো ভিন্ন জাতিস্বত্ত্বার নিজেদের টিকিয়ে রাখার বার্তা, আছে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে এক দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস।
লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো স্পেন ছাড়ার পরেই এল-ক্লাসিকোর লড়াইয়ে খানিক মরচে ধরেছিল, সেটা ফুটবলের সাধারণ এক দর্শকও মেনে নেবেন অবলীলায়। রোনালদো যাওয়ার পরেও সেই লড়াই জিইয়ে রেখেছিলেন বার্সেলোনার মেসি আর রিয়ালের সার্জিও রামোস। ২০২১ সালে দুজনেই পাড়ি জমান পিএসজিতে। এল-ক্লাসিকো রঙ হারায় তখন থেকেই।
বৈশ্বিক ফুটবলের বাজারে বার্সেলোনার ধস নেমেছি এরপরেই। একের পর এক বাজে সাইনিং দলটিকে নিয়ে গিয়েছিল খাদের কিনারায়। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের শক্ত করেছে প্রতিনিয়ত। করিম বেনজেমার অবিশ্বাস্য ফর্মের দিনগুলি, মাঝমাঠে ক্যাসেমিরো-টনি ক্রুস আর লুকা মদ্রিচের অসামান্য রসায়ন, গোলবারের নিচে থিবো কর্তোয়া এল-ক্লাসিকো করে রেখেছিলেন মাদ্রিদ কেন্দ্রিক।
তবে নিজেদের শেষ ম্যাচে দুই দলের দুই তারকা ভিনিসিয়ুস আর রাফিনিয়ার হ্যাটট্রিক, সাম্প্রতিক ছন্দ আর তারুণ্যের উত্থান ২০১৮ সালের পর আরও একবার এল-ক্লাসিকোতে ফিরিয়ে এনেছে লড়াইয়ের উত্তাপ। অর্ধযুগ পর আরও একবার এল-ক্লাসিকো বুঁদ করেছে ফুটবলের পুরো দুনিয়াকে। বাংলাদেশ সময় আজ দিবাগত রাত ১টায় শুরু হবে মাঠের এই লড়াই।
নতুন বার্সেলোনার উত্থান
শেষ ৫ এল-ক্লাসিকোর ফলাফল দেখলেই রিয়ালদের সাম্প্রতিক দাপট বোঝানো যেতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতায় রিয়াল জিতেছে ৩ ম্যাচে
রিয়াল মাদ্রিদ ৩-২ বার্সেলোনা (লা লিগা)
রিয়াল মাদ্রিদ ৪-১ বার্সেলোনা (সুপার কাপ)
রিয়াল মাদ্রিদ ১-২ বার্সেলোনা (লা লিগা)
রিয়াল মাদ্রিদ ৪-০ বার্সেলোনা (কোপা ডেল রে)
রিয়াল মাদ্রিদ ১-২ বার্সেলোনা (লা লিগা)
ওপরের এই ক্ষুদ্র পরিসংখ্যানে বার্সেলোনা দুই ম্যাচে জয় পেলেও রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্যটা চোখে পড়বে আলাদা ভাবে। এবারের ক্লাসিকো জয় পেলে তারা লা লিগায় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অজেয় থাকার রেকর্ডে ভাগ বসাবে রিয়াল।
সবশেষ ১৩ মাস ও ৪২ ম্যাচ আগে লিগে হার দেখেছিল স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। সবচেয়ে বেশি ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড যাদের দখলে, সেই বার্সেলোনার বিপক্ষেই নামতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাদ্রিদ ডার্বিতে অ্যাতলেটিকোর কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এরপর ৩১ জয়, ১১ ড্র ও শূন্য হার তাদের।
কিন্তু এল-ক্লাসিকোর সেই একপেশে লড়াইয়ের দিন ফুরোচ্ছে সেটাও স্পষ্ট। বার্সেলোনার কোচ হয়ে হ্যান্সি ফ্লিকের আগমন দৃশ্যপট বদলেছে অনেকটাই। ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট এই মৌসুমে। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়া আছেন দুর্দান্ত ছন্দে। লিগে ৯ ম্যাচে শুরুর একাদশে থেকে করেছেন ৫ গোল, এমনকি করিয়েছেন ৫ গোল।
রোনালদো যাওয়ার পরেও সেই লড়াই জিইয়ে রেখেছিলেন বার্সেলোনার মেসি আর রিয়ালের সার্জিও রামোস। ২০২১ সালে দুজনেই পাড়ি জমান পিএসজিতে। এল-ক্লাসিকো রঙ হারায় তখন থেকেই।
বার্সেলোনা মানেই নিজেদের অ্যাকাডেমি লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা তারকাদের আধিপত্য। পাউ কুবারাসি, ইনিগো মার্টিনেজ, আলেহান্দ্রো বালদে, পেদ্রি, পাবলো গাভি, লামিনে ইয়ামালরা সেই পুরাতন দিনটাই ফিরিয়ে আনছেন কাতালুনিয়ার এই ক্লাবে। সঙ্গে আছেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান, রবার্ট লেভানডফস্কি আর রাফিনিয়ার মতো ছন্দে থাকা খেলোয়াড়রা।
প্রস্তুত রিয়ালের নতুন প্রজন্ম
রিয়াল মাদ্রিদের পরিকল্পনা নিখুঁত-স্পষ্ট। প্রতিনিয়ত প্রতিভাবান তরুণদের নিজেদের দলে এনে করেছে পরীক্ষিত পারফর্মার। সঙ্গে আছে অভিজ্ঞ মুখেরাও। ৩৮ বছর বয়সে এসেও লুকা মদ্রিচ যেন চিরতরুণ। সঙ্গে চার ফ্রেঞ্চ তারকা এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, অরেলিন চুয়ামেনি, কিলিয়ান এমবাপ্পে আর ফার্লান্দ মেন্দি আছেন রিয়ালকে দীর্ঘদিনের জন্য স্বপ্ন দেখাতে।
আছেন সময়ের সেরা লেফট উইংগার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কোনো সন্দেহ ছাড়াই তিনি বর্তমান সময়ের সেরা তারকাদের একজন। শুধু তাইই নয়, মেসি-রোনালদো পরবর্তী যুগে ফুটবলের মেগাস্টারও হয়ে উঠছেন এই ব্রাজিলিয়ান। চলতি বছরে ব্যালন ডি’ অর জয়ের ক্ষেত্রেও তিনিই সবার চেয়ে এগিয়ে।
ভুলে গেলে চলবে ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যুড বেলিংহ্যামের নামটা। নিজের প্রথম মৌসুমে এসেই হয়েছেন লা লিগার বর্ষসেরা খেলোয়াড়। ক্লাসিকাল নাম্বার টেন কিংবা প্রথাগত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার– অথবা উইঙ্গার, যেকোনো পজেশনেই এই ইংলিশম্যান দুর্দান্ত।
দুই কোচের কথায় ঝরলো ঝাঁজ
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিও নতুন দিনের এই বার্সেলোনাকে করেছেন সমীহ, ‘কে ফেভারিট, বলা মুশকিল। সবকিছু নির্ভর করছে ম্যাচটা আসলে কীভাবে চলছে। এখানে খেলার মানের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে না, আপনি কীভাবে চাপ সামলাবেন সেটাও বড় বিষয়।’
বার্সেলোনা কোচ ফ্লিকের পরিকল্পনা পরিষ্কার। হাইপ্রেসিং ফুটবলে রিয়ালকে আটকে রাখতে চান গ্রেগেনপ্রেসিং ঘরানার এই জার্মান কোচ, ‘আমাদের ধারণা আছে। আমাদের দর্শন হলো- হাইপ্রেস ও প্রতিপক্ষের পক্ষে খেলা কঠিন করে তোলা। লাইনের মধ্যে খুব বেশি জায়গা আমাদের জন্য কাজ করে না।’
দুই কোচের কেউই শুরুর একাদশ সাজাতে পারেননি। জানিয়েছেন এই নিয়ে তাদের পরিকল্পনা দরকার। ম্যাচের আগেই বোঝা যাবে কারা থাকছেন শুরুর একাদশে।
জেএ