বিক্ষোভের কারণেই কি মসজিদে যাননি টাইগার ক্রিকেটাররা?
ক্রিকেট সিরিজের মাঝে কেন এই প্রসঙ্গ এলো, এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। তবে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ শুরুর আগে থেকেই যারা নজর রেখেছিলেন, তারা বিষয়টি জানার কথা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার অভিযোগে সিরিজ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল ভারতের কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। এমন বিক্ষোভের কারণেই কি নিকট দূরত্বের মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ে গেলেন না টাইগার ক্রিকেটাররা?
সাধারণত দেশের বাইরে কোনো সিরিজ খেলতে গেলে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে স্থানীয় মসজিদে ছুটে যেতে দেখা যায় বাংলাদেশিদের। এমনকি গত আগস্টে পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে গিয়ে একটি ম্যাচের মাঝে শুক্রবার পড়ে যায়। তখন মধ্যাহ্ন বিরতি পিছিয়ে সময়টাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে দুই দলের ক্রিকেটাররা মসজিদে গিয়ে জুমায় অংশ নিতে পারেন। কিন্তু ভারতে ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে অনুশীলনে হাজির হলেও, ৩ কিলো দূরত্বে মসজিদে যাননি নাজমুল শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এমন তথ্য জানিয়েছে। তবে তারা পুলিশের বরাতে নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গোয়ালিয়র শহরের ফুলবাগ এলাকায় মতি মসজিদ টিম হোটেল থেকে তিন কিলো দূরত্বে অবস্থিত। আর সেখান থেকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন
পিটিআইকে গোয়ালিয়র জোন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অরভিন্দ সাক্সেনা বলেন, ‘আমরা মতি মসজিদের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশ দল সেখানে যায়নি। এমনকি তাদের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটানোর ঘোষণাও দেয়নি কোনো সংগঠন। মসজিদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে নেওয়া হতে পারে। মাত্র তিন কিলো পথের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কোনো বিষয়ই ছিল না।’
বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের সফর শুরুর আগেই গোয়ালিয়র থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। এরপর তারা প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দিন ‘গোয়ালিয়র বনধ’ তথা কঠোর কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে নির্বিঘ্নে ম্যাচটি আয়োজনে কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। এমনকি বিক্ষোভ থেকে ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটকের কথা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মানুষের চলাচল সীমিত করে ১৬৩ ধারার প্রয়োগসহ বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে প্রশাসন।
কর্তৃপক্ষের বরাতে পিটিআই বলছে– শহরের এক ইমাম (শহর কাজী) হোটেলে এসে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এ কাজে গতকাল শুক্রবার তিনি বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। হোটের বাইরেও স্বাভাবিকভাবে ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। এ ছাড়া বাইরে অপেক্ষমান ছিল গণমাধ্যম কর্মীরা।
আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। মাধবরাও সিন্দিয়া স্টেডিয়ামসহ আশপাশের এলাকায় খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৫০০ পুলিশ মোতায়েনের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ম্যাচ শুরুর আগে বেলা ২টা থেকে তাদের সড়কে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, তারা থাকবেন দর্শকরা বাড়ি ফেরা পর্যন্ত। দুই দিন আগে চলছে একগুচ্ছ নির্দেশনার প্রয়োগ, এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও মানুষ যাতে উসকানি না ছড়ায় সেজন্য তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে।
এএইচএস