পাঁচ বছর চিকিৎসক নেই এনএসসির, রুগ্ন ক্রীড়া চিকিৎসা
বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। মাত্র ৫০ বছর বয়সে জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা অবস্থায় দুনিয়া ত্যাগ করেন। জিয়াউর রহমানের বিদায় একেবারে আকস্মিক দুর্ঘটনা হলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে। ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের সেটি খুঁজে বের করেছেন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নেই চিকিৎসক-কম্পাউন্ডার
ক্রিকেট, সাঁতার ও শ্যুটিং বাদে দেশের বাকি সকল খেলার ভেন্যু– ফেডারেশন কার্যালয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরাতন ভবনের জিমনেশিয়ামে জিমন্যাস্টিক্স ও তায়কোয়ান্দোর অনুশীলন হয়। তৃতীয় চলায় চলে দাবা টুর্নামেন্ট। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবন লাগোয়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে ফুটবল, হকি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, টিটি, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, ভারত্তোলন, কুস্তি এবং উশুসহ অনেক খেলোয়াড়দের পদচারণা চলে দিনভর। ক্রিকেট ও ফুটবল বাদে দেশের অন্য কোনো ফেডারেশনের আর্থিক স্বচ্ছলতা একেবারেই নেই। যেখানে খেলা চালাতেই তারা হিমশিম খায়, সেখানে স্থায়ী চিকিৎসক রাখা তাদের জন্য বড় বিলাসিতাই! অনেক ফেডারেশন বড় টুর্নামেন্ট/লিগ চলাকালেও চিকিৎসক রাখতে পারে না।
দেশের সকল ফেডারেশন, ক্রীড়া সংস্থা ও স্থাপনার দেখভাল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা এনএসসি। এনএসসিতে চিকিৎসক-কম্পাউন্ডার পদ রয়েছে। বরাদ্দও আছে রাজস্ব খাতে। ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এনএসসিতে নেই কোনো চিকিৎসক। ২০২১ সালে কম্পাউন্ডার আজাদও অবসরে গেছেন। রুম-আর্থিক বরাদ্দ সবই থাকলেও এনএসসির মেডিক্যাল বিভাগ শূন্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আশি-নব্বইয়ের দশকে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক কনক কান্তি বড়ুয়া। এরপর দুই-একজন এসেছেন। কেউ দীর্ঘসময় থাকেননি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিকিৎসক পদটি ব্লক হওয়ায় (পদোন্নতির সুযোগ নেই) অনেকেই চলে যান। তানভির জোহা সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন। তিনি অন্যত্র চাকরি নেওয়ার পর থেকে ওই পদ শূন্য।
চিকিৎসক আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও কম্পাউন্ডার আজাদ ১৯৮৯ সালের মে থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কাজ করেছেন। এনএসসি অফিসিয়াল, ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের রক্তচাপ ও পালস পরিমাপ করেছে বহু বছর ধরে। সেই কম্পাউন্ডার আজাদও না থাকায় এখন সেই রক্তচাপ, পালস মাপারও লোক নেই স্টেডিয়াম ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এলাকায়।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী স্টাফ নাজমা সম্প্রতি অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের তৃতীয় তলায় দাবা ফেডারেশনে খেলতে খেলতে দুনিয়া ত্যাগ করেছেন জিয়াউর রহমান। এই দু’টি ঘটনায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিকিৎসকশূন্যতা আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন সচিব আমিনুল ইসলাম এই সংকট দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছেন, ‘আমরা প্রেষণে চিকিৎসক পদ পূরণের জন্য চিঠি চালাচালি করছি। আমাদের অফিসের শতাধিকের বেশি লোকবল এবং এই অঞ্চলে ক্রীড়াবিদদেরও পদচারণা অনেক। তাই একজন চিকিৎসক যেন সব সময় থাকেন এজন্য কাজ করছি।’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্থায়ী নিয়োগ দিলে পদোন্নতি না থাকায় কিছুদিন পর অন্য চাকরিতে যাবেন চিকিৎসকরা। তাই স্বাস্থ্য ক্যাডার থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে এখানে পদায়ন করলে, পদের শূন্যতা সেই অর্থে থাকবে না, তাই এ পথে হাঁটতে চায় ক্রীড়া পরিষদ।
দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক কনক কান্তি বড়ুয়া। আশি-নব্বইয়ের দশকে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্তও ছিলেন তিনি। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই চিকিৎসক সম্পর্কে বলেন, ‘কনক দা দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তার ক্যারিয়ারের শুরুটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এখান থেকেই। আমাদের অনেক ফুটবল টুর্নামেন্টে তিনি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত কয়েক যুগ ক্রীড়াঙ্গনে সেভাবে সম্পৃক্ত না থাকলেও, এখনও আমাদের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা-সৌহার্দ্যতা প্রকাশ করেন।’ বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু-ও কনকের আন্তরিকতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালে এক টেস্টের জন্য গিয়েছিলাম। আমি তাকে দেখিনি। তিনি আমাকে দেখে ডেকে নেন এবং সর্বোচ্চ সম্মানের সঙ্গে টেস্টের ব্যবস্থা করেছিলেন।’
রাণী হামিদ-নিয়াজরাও ঝুঁকিতে
ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্য খেলার মতো দাবায় শারীরিক ঝুঁকি নেই সেই অর্থে। এরপরও ঝুঁকির তালিকায় দাবা ওপরের দিকেই রয়েছে। দাবায় অনেক বয়সীরা অংশগ্রহণ করেন। বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের চাপ নেওয়ার ক্ষমতা ও হৃদপিন্ডের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করে। যাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকে, তাদের উত্তেজনা ও চাপ এড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দাবাকে একটু ঝুঁকিপূর্ণই বললেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডক্যিাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আলী ইমরান, ‘কোনো দাবাড়ুর যদি হৃদরোগের সমস্যা থাকে। সেই সমস্যা নিয়ে তিনি দাবা খেললে সেটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দাবায় মানসিক চাপের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।’
দাবার অন্যতম কিংবদন্তি রাণী হামিদের বয়স ৮০ বছরের বেশি। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের বয়স প্রায় ৬০। এই বয়সে খেলোয়াড়রা দাবার বোর্ডেও চাপে থাকেন। জিয়ার মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, ‘আসলে বাংলাদেশের দাবায় অসুস্থতাজনিত এরকম ঘটনা কখনও হয়নি। সবার প্রিয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার অকাল মৃত্যু আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা জাতীয় দাবাড়ুদের টুর্নামেন্টের আগে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের পর মেডিক্যাল চেক-আপে রাখব’, বলেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
ক্রীড়াবিদদের নেই নিয়মিত চেক-আপ
সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায়ই খেলতে খেলতেই ফুটবলারদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আকস্মিক মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদযন্ত্রের জটিলতা। গতি নির্ভর খেলা ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার ও হকিতে হৃদপিন্ডে চাপ পড়ে যথেষ্ট। এই খেলাগুলোতেও নিয়মিত চেক আপ প্রয়োজন বলে মনে করেন বাফুফের মেডিক্যাল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী ইমরান, ‘পিসিএমএ টার্মটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত। এটার অর্থ হচ্ছে মৌসুম শুরুর আগে ফুটবলাররা মেডিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা। মেসি-নেইমারসহ সকলকেই এই ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশে এই চর্চা নেই। সামনে অবশ্যই হওয়া উচিৎ।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি। দুই দশকের বেশি সময় ক্রীড়াঙ্গনে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। তার দৃষ্টিতে, ‘ফেডারেশনগুলোর অবশ্যই উচিৎ বছরে অন্তত একবার খেলোয়াড়দের চেক-আপ করানো। দাবা ও বিশেষ কয়েকটি খেলা ছাড়া অধিকাংশ খেলায় খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ বয়স ৩০-৩৫ এর মধ্যেই। ফলে বারবার পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। বছরে একবার চেক করলেই যথেষ্ট।’ শারীরিক চেক-আপের পাশাপাশি ক্রীড়াবিদদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তিনি। দেবাশীষের মতে, ‘শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আরচ্যারি, শ্যুটিং, দাবা পুরোটাই মনোযোগের ওপর। কয়েক সেকেন্ডের মনোযোগের এদিক-ওদিক হলেই পারফরম্যান্সের ব্যাপক হেরফের হতে পারে।’
আরও পড়ুন
ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল-ক্রিকেট ও অনেক খেলায় জরুরি ব্যবস্থার জন্য অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়। সেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবাশীষের, ‘ক্রীড়াঙ্গনে আমরা যে সকল অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করি, সেটা আসলে অনেকটা নামেই অ্যাম্বুলেন্স। বাস্তবিক অর্থে সেই অ্যাম্বুলেন্সেরই চিকিৎসা প্রয়োজন।’ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় অবশ্য ফুটবল-ক্রিকেটে উন্নত মানের অ্যাম্বুলেন্সই থাকে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অবশ্য নামকাওয়াস্তের অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়।
ক্রিকেটাররা চিকিৎসা সেবার আওতায়
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই ক্রিকেটারদের সম্পূর্ণ নিয়মমাফিক স্বাস্থ্যগত তত্ত্বাবধানে রাখেন। কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় ক্রিকেটারদের প্রতিনিয়ত নানা চেক-আপ করা হয়। এর বাইরেও জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন এই তালিকায়। তারা চেক-আপ, ইনজুরি পুর্নবাসন ও নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়ে অনেক সচেতন। কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটারদের আমরা এখন উন্নত পর্যায়ের চেক-আপ করছি।’
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি বলছেন, ‘ফেডারেশনগুলোর অবশ্যই উচিৎ বছরে অন্তত একবার খেলোয়াড়দের চেক-আপ করানো। দাবা ও বিশেষ কয়েকটি খেলা ছাড়া অধিকাংশ খেলায় খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ বয়স ৩০-৩৫ এর মধ্যেই। ফলে বারবার পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। বছরে একবার চেক করলেই যথেষ্ট।’
শারীরিক চেক-আপের পাশাপাশি ক্রীড়াবিদদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তিনি। দেবাশীষের মতে, ‘শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আরচ্যারি, শ্যুটিং, দাবা পুরোটাই মনোযোগের ওপর। কয়েক সেকেন্ডের মনোযোগের এদিক-ওদিক হলেই পারফরম্যান্সের ব্যাপক হেরফের হতে পারে।’
স্পোর্টস মেডিসিন এসোসিয়েশনেরও উদ্যোগ নেই
খেলাধুলার সঙ্গে চিকিৎসা ও ওষুধের সম্পর্ক ওতপ্রোত। ক্রীড়াবিদদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ স্পোর্টস মেডিসিন এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা। তিন যুগেরও বেশি সময় এই এসোসিয়েশন থাকলেও ক্রীড়াঙ্গনে তেমন কোনো কার্যকরী ভূমিকাই রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এই এসোসিয়েশনের কার্যালয় থাকলেও বছরের প্রায় সময়ই কক্ষটি থাকে বন্ধ।
ক্রীড়াবিদদের ইনজুরি ও চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতামূলক সেমিনার-সভাও সেভাবে করে না সংগঠনটি। ফলে দেশের অনেক ক্রীড়াবিদ-সংগঠকই এই এসোসিয়েশন সম্পর্কে অজ্ঞাত। ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম সুপরিচিত চিকিৎসক অধ্যাপক আলী ইমরান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সম্প্রতি। এখন তিনি কিছুটা উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্পোর্টস ক্লিনিক করা হয়েছে। সেখানে প্রতি সপ্তাহের শনিবার ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেবা নিতে পারবে। আমরা ফেডারেশনগুলোকে অবহিত করব এবং সামনে ক্রীড়া চিকিৎসা-ইনজুরি নিয়ে একটি সেমিনারও করব।’
বিকেএসপিতে আছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বাংলাদেশের খেলোয়াড় তৈরির আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। সাভারে অবস্থিত বিকেএসপিতে সকল ডিসিপ্লিন মিলিয়ে পনের’শ ক্রীড়াবিদ রয়েছে। ফেডারেশন বা জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসা চেক-আপের বিষয়টি অগুরুত্বপূর্ণ থাকলেও বিকেএসপিতে অবশ্য নিয়মিতই হয় কাজটি। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর খেলোয়াড়দের সাধারণ কিছু চেক-আপ করে থাকি। শুধু ঢাকায় নয়, আমাদের আঞ্চলিক বিকেএসপিতেও এটা করা হয়। খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যগত বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি।’
বিকেএসপিতে ক্রীড়াবিদরা ১৩-২০ বছর বয়স পর্যন্ত থাকেন মূলত। এই বয়সে রোগ বা অসুস্থতার হার খুবই কম। বিকেএসপির ক্রীড়াবিদদের নিয়ে হিট স্ট্রোক নিয়ে খানিকটা ভাবনায় রয়েছেন নতুন মহাপরিচালক, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা বয়সে খুব কম, ফলে তাদের তেমন জটিলতা থাকে না। স্বল্প কয়েকজনের থাকলেও তাদের হাসপাতালে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আউটডোর গেমগুলোতে বাইরে অনুশীলন ও খেলাধুলা করতে হয় গ্রীষ্মকালে। সেই সময় হিট স্ট্রোকের একটা ঝুঁকি থাকে। আমরা সেটা নিয়েও ইতোমধ্যে কাজ করছি।’
বিকেএসপিতে স্থায়ী চিকিৎসকও যেমন রয়েছে, তেমনি আছে মেডিক্যাল সেন্টারও। ইসিজি, রক্তের সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিকেএসপিতেই হয়ে থাকে। সামনে এটি আরও আধুনিকতর করার ভাবনা রয়েছে, ‘সাধারণ কিছু টেস্ট আমাদের সেন্টারেই হয়ে থাকে। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারের মান উন্নত করছি। তাছাড়া আমাদের ক্রীড়াবিদরা সম্প্রতি ইন্স্যুরেন্সের আওতায় এসেছে। ফলে স্বাস্থ্যগত নিশ্চয়তা আমরা অনেকটাই নিশ্চিত করেছি।’ বিকেএসপির বর্তমান মহাপরিচালক মাস ছয়েক যোগদান করেছেন। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম খেলোয়াড়দের বীমার আওতায় আনা।
ফিজিওথেরাপি সেন্টারও বন্ধের পথে
ক্রীড়াঙ্গনে চিকিৎসক খুবই সংকট। বিসিবি ও বিকেএসপি ছাড়া অন্য কোনো ফেডারেশনে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় অসংখ্য ক্রীড়াবিদের পদচারণা। এত সংখ্যক ক্রীড়াবিদের বিপরীতে নেই কোনো চিকিৎসক। প্রতিনিয়ত খেলোয়াড়রা ইনজুরি ও ব্যথা পেয়ে থাকেন। অনেক খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াতে হয়। ব্যাথা নির্মুল করতে ফিজিও চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল।
জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ ২০২১ সালে হকি স্টেডিয়ামে ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করেছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হকি স্টেডিয়ামে একটি কক্ষ-ও বরাদ্দ দেয়। সংগঠক পরিষদ প্রাথমিক পর্যায়ে দুই-তিনটি মেশিন দিলেও পরবর্তীতে ফিজিওথেরাপিস্টরা নিজেদের উদ্যোগে আরও মেশিন ও জনবল এনে এটির মান উন্নয়ন করেন। দুই বছরের বেশি সময় এখানে ফিজিও নিয়ে অনেক ক্রীড়াবিদ-সংগঠক উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে জেলা-বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকুই এখানে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। মিকু নিজে সুস্থ হলেও প্রতিষ্ঠানটি যখন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে তখনই বাগড়া দিয়েছেন। ফিজিওথেরাপিস্টদের সঙ্গে সংগঠকদের মনোমালিন্যে এখন সেখানে অচলাবস্থা। গত কয়েক মাস ফিজিওথেরাপি সেন্টারে অনেকের যাতায়াত কমেছে। গতকাল থেকে ঝুলছে তালা। এর নেপথ্যে রয়েছেন মিকু-কোহিনূররা। ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থের চেয়ে তাদের ব্যক্তিস্বার্থই কী বড়? সেই প্রশ্ন উঠেছে ক্রীড়াঙ্গনে জোরেশোরে।
এজেড/এএইচএস