অবিশ্বাস্য কামব্যাকে কপাল পুড়ল স্লোভাকিয়ার, কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড
আবারও জ্যুড বেলিংহ্যাম ম্যাজিক। আরও একবার শেষের নাটকে নায়ক হলেন ইংলিশ ওয়ান্ডারবয়। ইভান শ্রাঞ্জের একমাত্র গোলে স্লোভাকিয়া স্বপ্ন দেখছিল ইংলিশ বধের। নব্বই মিনিট পেরিয়ে লিড ধরেও রেখেছিল তারা। কিন্তু পুরো মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে অন্তিম সময়ে ত্রাতা হয়েছিলেন বেলিংহ্যাম। ইউরোতেও হলো তাই।
শেষ মিনিটে কাইল ওয়াকারের লম্বা থ্রো পেয়ে যান বক্সের ভেতর জটলায়। দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে ভাঙেন স্লোভাকিয়ার রক্ষণ। ১-১ গোলের সমতায় ম্যাচ গেল অতিরিক্ত সময়ে।
সেখান থেকে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলা স্লোভাকিয়া আর ফিরতে পারেনি ম্যাচে। অভিজ্ঞতা আর কিছুটা প্রতিপক্ষের বাজে খেলার সুযোগ নিয়ে ইংলিশরা তুলে নেয় ২-১ গোলের জয়। এই জয়ের ফলে তারা চলে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে অপেক্ষা করছে ইতালিকে বিদায় করে দেয়া সুইজারল্যান্ড৷
প্রতিটি মহাদেশীয় কিংবা বৈশ্বিক আসরের আগেই ইংলিশ গণমাধ্যম আর ভক্তদের মুখে শোনা যায় ‘'ইটস কামিং হোম।’ যদিও ইংলিশদের এই স্লোগান কখনোই বাস্তবে রূপ নেয়নি। ২০১৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল, ২০২১ ইউরোতে রানারআপ হওয়াই এই শতাব্দীতে তাদের সেরা সাফল্য।
এবার স্লোভাকিয়ার কাছেও ইউরোর রাউন্ড অব সিক্সটিনে প্রায় হোচট খেয়েই বসেছিল ইংলিশরা। শেষ দিকে বেলিংহ্যাম আর কেইনের গোল না এলে বিদায় হতে পারতো প্রি-কোয়ার্টারের ম্যাচ থেকেই।
এদিন একাদশের সবাইকেই পেয়েছিলেন ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। রাইস-মাইনুকে ডাবল পিভটে রেখে আক্রমণে রেখেছিলেন বেলিংহ্যাম, সাকা, ফোডেন আর হ্যারি কেনকে। শক্তিশালী এই স্কোয়াডকে শুরতেই অবশ্য ভড়কে দিয়েছিল স্লোভাকিয়া। ৫ম মিনিটেই ইংলিশ দুর্গে ভয় ধরিয়ে দেয় স্লোভাকিয়া।
পরক্ষণেই ইংল্যান্ড প্রথম আক্রমণে যায় জ্যুড বেলিংহ্যামের সুবাদে। কিন্তু বারের ওপরে শট করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারায় থ্রি লায়ন্সরা। প্রথমার্ধের বড় একটা সময় এরপর অনেকটা ঝিমিয়েই ছিল ইংল্যান্ড। স্লোভাকিয়ার কাউন্টার অ্যাটাক সামাল দিতেই সময় পার করেছে জন স্টোনস-কাইল ওয়াকাররা।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে তেমনই এক প্রতি আক্রমণ থেকে গোল পেয়ে যায় স্লোভাকিয়া। কাইল ওয়াকারের ভুল পজিশনিং আর শ্রাঞ্জের দারুণ ফিনিশ লিড এনে দেয় স্লোভাকিয়াকে।
২৫ মিনিটের ওই গোলের পর ইংল্যান্ড আক্রমণের ধার বাড়ায়। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না। মিলান স্ক্রিনিয়ার, ডেনিস ভার্ভোরা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডকে। প্রথমার্ধের শেষদিকে বারবার হতাশ হয়েছে ইংলিশ সমর্থকরা।
বিরতির পর ৫১ মিনিটে ফিল ফোডেনের গোলে সমতায় ফিরলেও সেই গোল বাতিল হয় অফসাইডে। গ্যারেথ সাউথগেট পরিবর্তন এনেছিলেন খানিক পর। বুকায়ো সাকাকে আক্রমণের সামনে এনে মাঝমাঠে নামিয়েছিলেন কোল পালমারকে।
এই পরিবর্তনে আক্রমণের ধার বেড়েছিল বটে। স্লোভাকিয়াও পড়েছিল চাপের মুখে। কিন্তু জার্মানির গেলসেনকির্সেনে ইংলিশ ফুটবলররা একের পর এক ভুল করেছেন এদিন। ফাইনাল থার্ডে বড় সুযোগ মিস করেছেন নিজেদের কারণেই।
দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময়ে ইংলিশরাই একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত রেখেছে স্লোভাকদের। ৮০ মিনিটে ডেক্লান রাইসের দুর্দান্ত সেই শট ফিরে এলো গোলবার থেকে। ফিরতি বলে মিস করেন হ্যারি কেনও।
ইংল্যান্ডের হার যখন ছিল সময়ের ব্যাপার, তখনই ত্রাতা বেলিংহ্যাম। শেষ সেকেন্ডে এসে সময়ের অন্যতম আলোচিত এই তরুণের গোলে থামে স্লোভাকিয়ার প্রতিরোধ। ম্যাচ চলে যায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই হ্যারি কেইন উঠে এলেন নায়ক হয়ে। ফ্রিকিক থেকে বল ক্লিয়ারের পর তা আবার বক্সে পাঠিয়েছিলেন মিডফিল্ডার ইজে। ইভান টনি বুদ্ধিদীপ্ত হেডে বল বাড়িয়ে দেন হ্যারি কেনের কাছে। ছয় গজের ছোট বক্সের সামনে থেকে গোল করতে ভুল করলেন না হ্যারি কেইন।
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের বাকি সময়টা সাউথগেট দলকে খেলালেন ডিফেন্সিভ ফুটবল। আরও একবার তাতে ট্যাকটিকাল সমালোচনায় পড়তে হলো তাকে। কিন্তু স্লোভাক ফরোয়ার্ডদের ছোট ছোট ভুল বিপদ বাড়ায়নি ইংলিশদের। ২-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় ইংল্যান্ড।
জেএ