বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে যা না জানলেই নয়
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতেই প্রথম আসরে ছিল ভারতীয়দের ঝলক। অবশ্য পরের সাত আসরে তারা আর ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি। কেবল তাই নয়, ১১ বছর ধরে শিরোপাখরায় ভুগছেন রোহিত-কোহলিরা। অন্যদিকে চোকার্স তকমা ঘুচানোর লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে এইডেন মার্করামের দক্ষিণ আফ্রিকা। সবমিলিয়ে আটবার সেমিফাইনাল খেলার পর, প্রোটিয়ারা এবার সেই গণ্ডি পেরোতে পেরেছে। চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালে খুঁটিনাটি বিষয় এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হবে।
প্রথমবার ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রোটিয়ারা প্রথম কোনো বিশ্ব আসরের ফাইনাল খেলছে মানেই, তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা প্রথম। ফলে প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে পরস্পর মোকাবিলা করবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে বেশ কয়েকবারই দুই দলের মুখোমুখি দেখা হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ৮টায় প্রথমবার ফাইনালে নামবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে দুই দল একবার এই সংস্করণের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত।
অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি
এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচই হারেনি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। এইডেন মার্করামের প্রোটিয়া শিবির টানা আট ম্যাচেই জিতেছে। গ্রুপপর্বের চার ম্যাচ, সুপার এইটে তিনটি এবং সর্বশেষ সেমিফাইনালে তারা আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, ভারতও অপরাজেয়, মাঝে একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হলে তাদেরও টানা আট জয়ের সুযোগ থাকত। তবে ফাইনালে জয়ী দল অপরাজেয় থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাস গড়বে।
ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে কত রথী-মহারথী খেলে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বিশ্ব আসরে চূড়ান্ত সাফল্যের স্বাদ পাননি। এমনকি ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কোনো আইসিসি আসরের ফাইনালে তারা উঠতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ২৬ বছর পর সুদীর্ঘ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ সম্ভবত এটাই হতে যাচ্ছে। ফলে এবার দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ইতিহাস গড়ার বড় সুযোগ।
আরও পড়ুন
এর আগে শিরোপার এত নিকটে যেতে পারেনি ল্যান্স ক্লুজনার, অ্যালান ডোনাল্ডের দেশ। সাতবার বিশ্ব আসরের সেমিফাইনাল খেলেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০০৯ ও ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই দৌড় থামাতে হয়েছে তাদের। যে কারণে প্রোটিয়াদের নামের পাশে ‘চোকার্স’ তকমা বসে গেছে। এবার সেই নামও মুছে দেওয়ার সুযোগ এসেছে।
শিরোপাখরা কাটাতে মরিয়া রোহিতের ভারত
রোহিত শর্মার অধীনে গত এক বছরে এ নিয়ে তিন ফরম্যাটের ফাইনালেই উঠেছে ভারত। পরপর দু’বার টেস্ট ফরম্যাটের ফাইনাল এবং সর্বশেষ ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছে ঘরের মাঠে। কেবল তাই নয়, তাদের শিরোপাখরা চলছে গত ১১ বছর ধরে। তাদের সর্বশেষ আইসিসি ট্রফি এসেছিল ২০১৩ সালে। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে তারা ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর আর কোনো বৈশ্বিক শিরোপাই জিততে পারেনি।
অথচ প্রায় প্রতিটি বিশ্ব আসরেই ভারতীয়রা পা রেখেছিল ফেবারিটের তকমা নিয়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য তাদের জন্য এবার স্বস্তির খবর, সাম্প্রতিক সময়ের দুটি ট্রফি হাতছাড়া করা প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া আর এই টুর্নামেন্টে টিকে নেই। সবমিলিয়ে ভারত এবার চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জনে বেশ মরিয়া। যা হতে পারে কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার সামনে শেষ সুযোগও।
২০১০ বিশ্বকাপের ভেন্যুতে ফাইনাল
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আরেকবার বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১০ টি-টোয়েন্টি আসরের ফাইনালও হয়েছিল বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে। যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার বৈশ্বিক শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার তাদের কেউ নেই, সম্পূর্ণ নতুন দুই প্রতিপক্ষ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা নামছে বার্বাডোজের ফাইনালে।
আরও পড়ুন
পিচ ও কন্ডিশন কেমন
বার্বাডোজে চলতি বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ হয়েছে এখন পর্যন্ত। প্রথম চারটি পূর্ণ ম্যাচের তিনটিতেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্কটল্যান্ড ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯০ করার পর ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সবশেষ দুই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে অল্প রানে আটকে সহজেই জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। এমনকি সুপার এইটে ভারত-আফগানিস্তানও খেলেছে এই মাঠে। যেখানে আফগানদের ৪৭ রানে হারান রোহিতরা। তবে বার্বাডোজের এবার একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের মাঠগুলোতে বাতাসের ভালো ভূমিকা থাকলেও, এখানে সেটি অতটা তীব্র হবে না।
আবহাওয়া ও রিজার্ভ ডে
ফাইনালে আজ নির্ধারিত দিন এবং পরদিন রিজার্ভ ডেতে-ও বৃষ্টির শঙ্কা আছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে ফাইনাল। এদিন ভোর চারটা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে ৫০ শতাংশ শঙ্কা আছে বৃষ্টির। টসের সময়টায় (১০টা) সেই শঙ্কার হার ৩০ শতাংশ। দুপুর একটা নাগাদ আবার তা বেড়ে হয়ে যাচ্ছে ৫০ শতাংশ। তবে আজ প্রথম দিনেই ম্যাচ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এজন্য বাড়তি ১৯০ মিনিট সময় বরাদ্দ করা আছে। ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালের ক্ষেত্রে খেলা হতে হয় অন্তত ১০ ওভার করে।
কোনোভাবেই যদি আজ ও আগামীকাল ম্যাচ সম্পন্ন করা না যায়, তাহলে দুই দলকেই যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে।
এএইচএস