মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৬০০ কোটি বাড়লেও অবহেলিত ক্রীড়া, আশ্বাস পাপনের
![মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৬০০ কোটি বাড়লেও অবহেলিত ক্রীড়া, আশ্বাস পাপনের](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2024June/papon-infront-of-media-20240614212033.jpg)
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ হাজার ২১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে দুই হাজারের ওপরে বাজেট স্পর্শ করল এবারই প্রথম। বিগত কয়েক বছর ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট ১৪০০-১৬০০ কোটির মধ্যেই ছিল।
গত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এবার প্রস্তাবিত বাজেট ৬৮৮ কোটি ৬০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বেশি। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৬০০ কোটি টাকার বেশি বাড়লেও ক্রীড়া খাত অবহেলিত থেকে গেছে। গতকাল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নতুন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এখানটায় যে বাজেট দেওয়া হয়েছে এতে ক্রীড়ায় তেমন কিছু বাড়েনি।’
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট আকস্মিকভাবে এত বৃদ্ধির কারণ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন। বিশ্ব ব্যাংক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে পাঁচ বছরে তিন হাজার কোটি টাকা প্রদান করবে। সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সময়ই মূলত বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়। সেই চুক্তির আলোকে এই অর্থবছর থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিশ্ব ব্যাংকের টাকা গ্রহণ করবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন পুরোটাই যুব খাতে বলে জানালেন মন্ত্রী পাপন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের যে অর্থ সেটা যুব খাতের জন্য।’ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি অঙ্গ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বেকারদের কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণসহ অনেক কাজই করে থাকে এই অধিদপ্তর। ফলে মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বড় অংশও বরাদ্দ পায় যুব।
নতুন মন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রায় সব ফেডারেশন/এসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবারই প্রায় একই চাহিদা আর্থিক সহায়তা এবং অবকাঠামো সমস্যার সমাধান। ফেডারশেনগুলো আশায় রয়েছে নতুন মন্ত্রীর মাধ্যমে সহায়তা পাওয়ার। এই বাজেটে ক্রীড়া খাতে তেমন বরাদ্দ না বাড়লেও ফেডারেশনকে আশার বাণী শুনিয়েছেন নতুন মন্ত্রী, ‘আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তাদের (সরকার) কাছে কী কী প্রয়োজন একটা লিস্ট দিয়েছি। আশা করছি পাব, কতটুকু পাব জানি না।’
সরকারের কাছ থেকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পেলে সেটা সঠিকভাবে বন্টন করতে চান ক্রীড়ামন্ত্রী। পেশাদার আঙ্গিকে চলা ফেডারেশনগুলো সেই বরাদ্দ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন বলেও জানান পাপন, ‘যারা পেশাদারভাবে ফেডারেশন পরিচালনা করছে তারা আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। যতটুকু সম্ভব তাদের সাপোর্ট দেব। যারা পেশাদারিত্ব করছে না তারা পাবেই না এমন না। তারাও পাবে, কম।’
অনেক ফেডারেশন চলছে পরিকল্পনাহীনভাবেই। আবার কিছু ফেডারেশন যেন কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক স্থান। মাত্র মাস ছয়েক হলেও নতুন মন্ত্রীর চোখে ধরা পড়েছে অনেক কিছুই, ‘বছরে একটা টুর্নামেন্ট করে গোল্ড মেডেল বলে সমান সুবিধা পাবে, এটা হবে না। কি ধরনের টুর্নামেন্ট, প্রতিপক্ষের র্যাঙ্কিং, কোন খেলোয়াড় এসেছে– সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে।’ এ রকম বিশ্লেষণে ইতোমধ্যে আট-নয়টি ফেডারেশনকে চিহ্নিত করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ফেডারেশন অপেশাদার হলেও খেলার সম্ভাবনা থাকলে সহায়তা প্রদানের পক্ষে মন্ত্রী, ‘কিছু ফেডারেশন অপেশাদার থাকলেও তাদের খেলার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আমরা তাদের সহায়তা করব। যদি পেশাদার না হতে পারে, করব না। যারা আমাদের নিয়ম মানবে না তারা সহায়তা পাবে না।’
খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। অর্থের অভাবে অনেক ফেডারেশন খেলোয়াড়দের অনুশীলনে রাখতে পারে না, আবার বিদেশেও টুর্নামেন্ট খেলা হয় না। এই বিষয়টি মন্ত্রীর গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে, ‘আমাদের প্রথম প্রাধান্যই থাকবে খেলোয়াড়দের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। কোচ দেওয়া। অবকাঠামো উন্নয়নও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের যেসব স্থাপনার সংস্কার চলছে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানে আনা।’
জাতীয় খেলা কাবাডি ও বুদ্ধিবৃত্তিক খেলা দাবা নিয়েও বিশেষ পরিকল্পনা আছে নতুন মন্ত্রীর। তার ভাবনা, ‘কিছু কিছু খেলা সারা বাংলাদেশে চালু করতে চাই। গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গায় এখন ক্রিকেট-ফুটবল হয়। জাতীয় খেলা কাবাডি সেভাবে হয় না। দাবা এমন একটা খেলা যা নাকি অল্প বয়স থেকে শুরু করতে হয়। সেটা আমরা স্কুলেও ছড়িয়ে দিতে চাই। কিছু খেলা খেলতে চাই যেগুলো দেশীয়। এগুলোর জন্য যে বাজেট দরকার-সেটা চেয়েছি, আশা করছি পাব।’
এজেড/এএইচএস