যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ছাপিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও ‘অজ্ঞাত’ কমিটি!
চার ঘন্টার বেশি সময় হকি ফেডারেশনের নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ শিকদার সভাপতিত্ব করেছেন। এই সভায় সদ্য সমাপ্ত প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী-মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন; রাসেল মাহমুদ জিমিকে ১২ ম্যাচ আরো কয়েকজন খেলোয়াড়কে কয়েক ম্যাচ নিষিদ্ধের পাশাপাশি আজীবন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হকি ফেডারেশন।
মেরিনার্স ও আবাহনীর সমান ৩৭ পয়েন্ট ছিল। নিয়মানুযায়ী প্লে অফ হওয়ার কথা। ফেডারেশন দুই দফা আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও দুই ক্লাবই প্লে অফের জন্য সময় চাওয়ায় লিগ কমিটি যুগ্ম শিরোপা প্রদানের সুপারিশ করে নির্বাহী কমিটিতে প্রেরণ করে। নির্বাহী কমিটি আজ দুই ক্লাব যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করেছে।
বাইলজে প্লে অফ থাকলেও ফেডারেশন যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, ‘দুই ক্লাবই ম্যাচটি খেলতে নানা আনুষ্ঠানিকতার জন্য দুই মাস সময় চেয়েছে। আমাদের পক্ষে এত সময় প্রদান করা সম্ভব নয় অন্যান্য কর্মসূচি রয়েছে। লিগ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আজ নির্বাহী দুই ক্লাবকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
যুগ্ম চ্যাম্পিয়নশিপের আলোচনা ছাপিয়ে গেছে ফেডারেশনের একগাদা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে। গত দুই দশকের হকির সুপারস্টার রাসেল মাহমুদ জিমিকে ১২ ম্যাচ, মোহামেডানের একাধিক খেলোয়াড় (সিয়াম,ইমন, সাদ,নয়ন,মালয়েশিয়ান জুলপিদাম) একাধিক ম্যাচ, মোহামেডানের সহকারী কোচ বাপ্পি পাঁচ ম্যাচ, কোচ গোপীনাথান কৃষ্ণমূর্তি আজীবন নিষিদ্ধ, মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স ক্লাবের হয়ে পরবর্তী চার বছর মাঠে থাকতে না পারার সিদ্ধান্তও এসেছে।
মোহামেডানের উপর দিয়ে মূল শাস্তির খড়গ গেলেও আবাহনীর তিন খেলোয়াড় (মিমো, আফনান ইউসুফ ও নাইম) কয়েক ম্যাচ ,অ্যাজাক্সের কোচ এহতেশাম দশ ম্যাচ, দিলকুশার কোচ তাবিব ই নূর পাঁচ বছর, পুলিশের কোচ হাবুল তিন ম্যাচের পাশাপাশি সাবেক তিন খেলোয়াড় সাজেদ এ আদেল, তারেক এ আদেল ও জহিরুল ইসলাম মিতুলের পাশাপাশি মোহামেডানের পরিচালক জামাল রানা আজীবন নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্পোর্টিং, আজাদকে অর্থ দন্ড করা হয়েছে।
এত বড় সিদ্ধান্ত আজ নির্বাহী সভায় অনুমোদিত হলেও বিষয়টি এসেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে। ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রশ্ন আজ ঘুরে ফিরে এসেছে সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক বরাবরই বিষয়টি আড়াল করে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা আছেন এটি হকি ফেডারেশন প্রকাশ করতে বাধ্য না।’
দেশের অন্য দুই শীর্ষ খেলা ফুটবল, ক্রিকেটে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য কারা সবাই জানে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা আছেন সেটি ওয়েবসাইটেই থাকে কিন্তু হকি ফেডারেশন কেন এমন অবস্থানে এই ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘হয়তো হকি ফেডারেশন সামনে পরিষ্কার করবে। যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে হকি ফেডারেশন নামগুলো প্রকাশ করছে না।’
বাংলাদেশ হকির সুপারস্টার রাসেল মাহমুদ জিমি। তিন কার্ডের জন্য তিনি আবাহনীর বিরুদ্ধে অঘোষিত ফাইনালে খেলতে পারেননি। এরপরও হকি ফেডারেশন তাকে ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে। বড় ধরনের অপরাধ না করেও জিমির এত বড় শাস্তি নিয়ে হকি অঙ্গনে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জিমির শাস্তি সম্পর্কে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিটি ম্যাচের আম্পায়ার রিপোর্ট, ভিডিও বিশ্লেষণ করে শাস্তি প্রদান করেছে। তার জন্য খেলা অসংখ্যবার স্থগিত হয়েছে।’
জিমি ছাড়াও মোহামেডান ক্লাবের একাধিক খেলোয়াড়, কর্মকর্তা,কোচ নিষিদ্ধ হয়েছেন। এই ব্যাপারে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও মোহামেডানের হকি দলেল ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স বলেন, ‘আমাকে চার বছর নিষেধাজ্ঞা করেছে কিন্তু কোনো শোকজ দেয়নি। মোহামেডান ক্লাবের প্রতি ফেডারেশন ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটিয়েছে। আমাদের ক্লাবের সম্মানিত সভাপতি, ডাইরেক্টর ইনচার্জ ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাবের আনুষ্ঠানিক অবস্থান ব্যাখ্যা করবে।’
বাংলাদেশ হকির অন্যতম পরিচিত মুখ মালয়েশিয়ান কোচ গোপীনাথ। বিকেএসপি, জাতীয় দলের পর এবার মোহামেডানের হয়ে কোচিং করাতে এসেছিলেন। ক্লাবের কোচিং করাতে এসে বাংলাদেশের হকিতে আজীবন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। এর কারণ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা,‘ সে বাংলাদেশের হকি নিয়ে গণমাধ্যমে বিরুপ মন্তব্য করেছে। যা দেশের ও হকি ফেডারেশনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তিনি আন্তর্জাতিক কোচ হয়ে বারবার ম্যাচের মধ্যে গিয়েছে নিয়ম বর্হিভূতভাবে।'
বিদেশি কোচ গোপীনাথান ছাড়াও দেশের হকি সংশ্লিষ্ট চারজনকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। হকি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আদেল, সাবেক দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম মিতুল ও তারেক আদেলকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের পাশাপাশি এই নিষোধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন মোহামেডানের পরিচালক জামাল রানাও। এদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘তারেক আদেল সামাজিক মাধ্যম ও ইউটিউব চ্যানেলে হকি ফেডারেশন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছে এজন্য আজীবন নিষিদ্ধ। সাজেদ আদেল-মিতুল একটি আদালতের রিট নিয়ে এশিয়ান হকি ফেডারেশনে সবার কাছে মেইল এবং হোয়াটঅ্যাপে সাবমিট করেছে। যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।’ মোহামেডানের পরিচালক জামাল রানাও হকি ফেডারেশন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় নিষেধাজ্ঞার কবলে।
হকি ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন অনেক খেলোয়াড় , কোচ ও কর্মকর্তা। এদের নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ ও আপিল সম্পর্কে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুর রশীদ শিকদার বলেন,‘ যে কোনো সময় শাস্তিপ্রাপ্তরা আপীল করতে পারবে। ’ ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন খেলোয়াড়দের ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা প্রিমিয়ার লিগ ও ফ্রাঞ্চাইজ লিগে গণ্য হবে। ফ্রাঞ্চাইজ লিগে কেন গণ্য হবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
এজেড/জেএ