অপরাজিত মৌসুম নাকি ৬১ বছরের অপেক্ষার অবসান?
ক্লাব ফুটবলের ঘরোয়া মৌসুম শেষের দ্বারপ্রান্তে। শীর্ষ ৫ লিগের মাঝে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে ঘরোয়া লিগ শেষ। বাকি আছে এফএ কাপ এবং জার্মান কাপের ফাইনাল। ইতালি এবং স্পেনে ঘরোয়া লিগের সূচি শেষ না হলেও নিশ্চিত হয়েছে শিরোপাভাগ্য। দুই লিগেই বাকি আছে আর একটি ম্যাচডে। এরইমাঝে অবশ্য মৌসুমের প্রথম ইউরোপিয়ান ফাইনাল মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আজ।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ইউরোপা লিগের ফাইনালে জার্মান ক্লাব বায়ার লেভাকুসেন ও ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তা। দুই দলের জন্যই অপেক্ষা করছে মাইলফলক। ইউরোপিয়ান ফুটবলে কোনো ক্লাবই আজ পর্যন্ত অপরাজিত মৌসুম পার করতে পারেনি। লেভারকুসেন সেই কীর্তি থেকে আর দুই ম্যাচ দূরে। অন্যদিকে আতালান্তা নিজেদের ইতিহাসে সবশেষ শিরোপা জিতেছিল ৬১ বছর আগে। বের্গামো শহরের ক্লাবটির আজকে সেই শিরোপা খরা কাটানোর সুযোগ।
দুই দলের মধ্যে লেভারকুসেনের ওপর স্পটলাইট খানিকটা বেশি। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই হারেনি তারা। প্রথম ক্লাব হিসেবে জার্মান বুন্দেসলিগায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। বায়ার্ন মিউনিখ বা বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড যে কীর্তি কখনো গড়তে পারেনি, সেটাই করে দেখিয়েছে বায়ার লেভারকুসেন। এখন তাদের সামনে অপেক্ষা করছে অপরাজিত মৌসুম পার করার বিরলতম রেকর্ড। এমন কীর্তি নেই আর কারোরই।
ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তা অবশ্য ছন্দে আছে অনেকটা সময় ধরেই। ২০১০-১১ মৌসুমে সিরি-বি থেকে উঠে আসার পর থেকেই ইউরোপিয়ান মঞ্চে নিয়মিত মুখ আতালান্তা। কোচ জিয়ান গাস্পেরিনি তারুণ্যনির্ভর এই দলকে নিয়ে বরারবই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। তবে এত বড় মঞ্চের ফাইনালে যাওয়া হয়নি তার। ক্লাবের সবচেয়ে বড় সাফল্য ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে কোপা ইতালিয়ার শিরোপাজয়। সে হিসেবে এটাই হতে পারে আতালান্তার জন্য নতুন ইতিহাস।
আরও পড়ুন
দুই দলই ফাইনালে আসার পথে পেরিয়ে এসেছে শক্ত সব বাধা। লেভারকুসেন তাদের নকআউট মিশন শুরু করে আজারবাইজানের ক্লাব কারাবাগের বিপক্ষে। দুই লেগ মিলিয়ে জয় এসেছিল ৫-৪ অ্যাগ্রিগেটে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্টহ্যামকে হারায় তারা। গত মৌসুমে কনফারেন্স লিগ জয় করে আসা ক্লাবকে তারা হারায় ৩-১ ব্যবধানে। সেমিফাইনালে ইতালিয়ান ক্লাব রোমাকে পরাজিত করে ৫-৪ অ্যাগ্রিগেটে।
পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং সিপিকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিন পার করে আতালান্তা। এরপর মৌসুমের সবচেয়ে বড় চমক উপহার দেয় গাস্পারেনির দল। ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলকে তারা হারায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে। সেমিফাইনালে ফ্রেঞ্চ ক্লাব অলিম্পিক মার্শেইকে একপ্রকার উড়িয়েই দেয় তারা। জয় পায় ৪-১ ব্যবধানে।
বড় ফাইনালের আগে লেভারকুসেন তাদের পুরো একাদশকেই পাচ্ছে সুস্থ অবস্থায়। গ্রানিত শাকা, ভিক্টর বোনিফেস, ফ্যাবিয়ান ভির্টজরা আছেন পুরো ছন্দে। জেরেমি ফ্রিমপং, জোনাথন টাহরা থাকবেন ভরসার কেন্দ্র হয়ে। আর ফরোয়ার্ড হিসেবে প্যাট্রিক শিকের ওপর থাকবে গোল করার দায়িত্ব।
আতালান্তার জন্য বড় ধাক্কা অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মার্টেন ডি রুনের অনুপস্থিতি। তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান ফাইনালে না থাকার কথা। তবে এরপরেও খুব একটা ভুগতে হবে না তাদের। গাস্পেরিনির দলে টিউন কুপমেইনার্স, চার্লস ডি কেটেলিয়েরে এবং মারিও পাশালিচের ওপর থাকবে স্পটলাইট। ফরোয়ার্ড জিয়ানলুকা স্কামাচ্চার দায়িত্ব থাকবে লেভারকুসেনের শক্ত ডিফেন্স ভাঙার।
দুই দলের মাঝে এর আগের সাক্ষাতে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছিল আতালান্তাই। ২০২২ সালে ইউরোপা লিগেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। তাতে ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। আজ সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় তারা। প্রত্যাশা থাকবে ৬১ বছরের শিরোপাখরা কাটানোর। আর লেভারকুসেনের সামনে থাকছে অপরাজিত মৌসুমের কীর্তি গড়ার হাতছানি।
জেএ