বিশ্বকাপে তাসকিনের সার্ভিস পাবে বাংলাদেশ?
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হতে পারত আগেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই কথা ছিল ১৫ সদস্যের দলের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ হতে এলো তাসকিন আহমেদের ইনজুরি। বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের সবচেয়ে বড় ভরসা যিনি, তিনিই পড়েছেন ইনজুরিতে। আর সেটা ঠিক কোনমাত্রার ইনজুরি তা নিয়ে এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশার মাঝে ক্রিকেট ভক্তরা।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপটায় তাসকিন বল করে গিয়েছেন কাঁধের ইনজুরি নিয়ে। ২০২২ থেকে ২০২৩ এর পুরোটা সময় যে তাসকিন বাংলাদেশকে ভরসা দিয়েছেন, তিনিই বিশ্বকাপে ছিলেন বিবর্ণ। তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেই সার্ভিস পায়নি বাংলাদেশ। দল হিসেবেও বিশ্বকাপে ছিল ভরাডুবি।
এরপর খানিক বিশ্রাম তাসকিন পেয়েছিলে বটে। তবে বিপিএল থেকে আবারও টানা খেলার মাঝে ছিলেন এই পেসার। বিপিএল, শ্রীলঙ্কা সিরিজ আর জিম্বাবুয়ে সিরিজের মাঝেই ডিপিএলে খেলেছেন আবাহনীর জার্সিতে। তাসকিনের ওপর ধকল গিয়েছে সেটা স্পষ্ট।
পেসার হিসেবে ইনজুরি থাকবে, এটাই যেন চিরায়ত সত্য। তবে তাসকিন একটু বেশিই দুর্ভাগা কি না, তা নিয়েই বরং প্রশ্ন করা যেতে পারে। ২০১৫ বিশ্বকাপ দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন বড় মঞ্চে। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের দলে ছিলেন। কিন্তু মাঝপথে দেশে ফিরতে হয়েছিল ত্রুটিপূর্ণ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ নিয়ে। ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়া হয়নি চোটের কারণে।
তাসকিন সেদিন কেঁদেছিলেন, তার চোখের পানি স্পর্শ করেছিল পুরো বাংলাদেশকে। ২০২৩ বিশ্বকাপ খেললেন ইনজুরি নিয়েই। এবার ২০২৪ সালে এসেও সেই গল্পের চিত্রনাট্যে যে খুব একটা পরিবর্তন আসবে তার নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত মেলেনি।
আরও পড়ুন
তাসকিনের ইনুজুরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে। ফিল্ডিংয়ের সময় শরীরের ডান পাশে চোট পেয়েছেন তিনি। সেই ইনজুরি কতখানি গুরুতর সেটা নিয়ে ঘোষণা না এলেও দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর কাজটা করতেই পারেন অনেকেই।
বিসিবি সংশ্লিষ্টদের পক্ষে থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী তাসকিনের মাংসপেশিতে চোট লেগেছে বলে জানা গেছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর বিকেলে গণমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তাসকিনের ইনজুরি খুব একটা সুখকর কিছু নয়।
পাপন বলেছিলেন, ‘শুনেছি (তাসকিনের ইনজুরির খবর)। আজকেই আমরা খোঁজ নিয়েছি ওর ইনজুরি আছে। এখন কালকে সকালে রিপোর্টটা পাওয়ার পর আমাদের দেখতে হবে কতদিন লাগতে পারে, ওর কী হিল আপ করার কোনো সুযোগ আছে কি না। নরমালি দুই থেকে তিন সপ্তাহ হয়তো ব্রেক দেবে।’
দুই থেকে তিন সপ্তাহের এই বিশ্রামের অর্থ, তাসকিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ মিস করছেন সেটা নিশ্চিত। বাকি থাকছে বিশ্বকাপ। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ জুনের ৮ তারিখ। সেই হিসেবে তাসকিনের হাতে সময় আছে ২৪ দিন। দুই থেকে তিন সপ্তাহের বিশ্রাম শেষ এই সময়ে শেষ হবে, সেটা স্বস্তির। কিন্তু তাসকিন বিশ্বকাপে বোলিং করার মতো ফিট থাকবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা দেবে কে?
তাসকিনের ইনজুরি নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড কতখানি সিরিয়াস সেটা বোঝা গেল বোর্ড সভাপতির পরের কথাতেই, পাপন আরও বলেন, ‘যদি এটা দুই বা তিন সপ্তাহ হয় তাহলে কী করবো...। এটাকে ঠিক করার কোনো সুযোগ আছে কি না (দেখবো)। দরকার হলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবো। এখনই যোগাযোগ করবো। যদি ঠিক করা যায় তাহলে এক জিনিস। আর যদি দেখা যায় যে না আসলেই দেরি হবে, তাহলে তো আমাদের অন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের তাসকিনের ভাগ্য এখন ঝুলছে পেন্ডুলামের মতো করে। তাসকিন সুস্থ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন, সেটাই হয়ত বড় স্বস্তি। কিন্তু বল হাতে তাসকিন চিরচেনা ছন্দে থাকবেন, নাকি আরেকবার ২০২৩ বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরে আসবে, সেই দোলাচল থেকেই যাচ্ছে।
জেএ