সেমিফাইনালের ভুল সিদ্ধান্তে ক্যারিয়ার শেষ হয়েছিল যে রেফারির
সমালোচনার আগুনে পুড়ছেন রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচের লাইনসম্যান থমাস লিসকিউইৎজ এবং রেফারি সিমোনে মার্সিনিয়াক। দুই পোলিশ ম্যাচ অফিসিয়ালের বিপক্ষে অভিযোগ বিস্তর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অন্তিম সময়ে ভুল করে বসেন লাইনসম্যান লিসকিউইৎজ। আর মার্সিনিয়াক পারেননি সেটা শোধরাতে।
বায়ার্ন মিউনিখের খেলোয়াড় ম্যাথিয়াস ডি লিটের গোল বাতিল হয়েছে লাইনসম্যানের অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে। যে গোল হলে অতিরিক্ত সময়ে যেতে পারত ম্যাচ। বায়ার্ন মিউনিখ হয়ত ফেরাতে পারত নিজেদের ভাগ্য। ম্যাচশেষে জার্মান দলের চোখে অপরাধীর কাঠগড়ায় তাই এই দুই ম্যাচ অফিসিয়াল।
— ChelseaFC News & Vids (@CFCclips) May 6, 2016
১৫ বছর আগে এমনই এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিতর্কে পড়েছিলেন আরও এক রেফারি। যেদিন একে একে তিনটি ভুল সিদ্ধান্ত দেন সেই রেফারি। টম হ্যানিং ওভেরবো নামের সেই রেফারির ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল ম্যাচে একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে।
২০০৯ সালের মে মাস। আরও এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের ফিক্সচার। ৬ই মে চেলসির মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে মুখোমুখো হয়েছিল স্বাগতিক চেলসি এবং স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। ম্যাচটি ছিল সেকেন্ড লেগ। আগের ম্যাচে বার্সেলোনার মাঠে ম্যাচ ছিল গোলশূন্য ড্র। তখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিল অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম। যার অর্থ প্রতিপক্ষের মাঠে গোল দিলে মিলবে বাড়তি সুবিধা। চেলসির মাঠে সেদিন ১-১ গোলে ড্র করেও তাই ফাইনালে যায় বার্সা।
তবে ৯২ মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার করা সেই অসামান্য গোলের আগেই ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ম্যাচ দেখে ফেলে ফুটবল দুনিয়া। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় অবিশ্বাস্য এক গোল করে বসেন চেলসির মাইকেল এসিয়েন। ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা চেলসি অবশ্য নির্ভার ছিল না। কারণ ১ গোল দিতে পারলেই বার্সেলোনা পাবে অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা।
২০ মিনিটের মাথায় দানি আল্ভেজ ডি-বক্সে ফাউল করলেও সেটাকে ডিবক্সের বাইরে পাঠিয়েছিলেন ওভেরবো। চেলসিকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ফ্রিকিকে। ৬৫ মিনিটে বার্সেলোনার এরিক আবিদালকে লাল কার্ড দেন নরওয়ের রেফারি ওভেরবো। সেটা নিয়েও অবশ্য বিতর্ক এড়াতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন
এর খানিক পরেই ডি-বক্সে জেরার্ড পিকের হ্যান্ডবল। চেলসির জোরালো পেনাল্টির আবেদন ফিরিয়ে দেন এই নরওয়েজিয়ান রেফারি। এখানেই শেষ হয়নি বিতর্ক। ম্যাচের অন্তিম সময়ে মাইকেল বালাকের নেয়া শটে হ্যান্ডবলের আবেদন আবার ফিরিয়ে দেন এই রেফারি।
এতগুলো বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর মাঠে প্রতিবাদ করেন চেলসি কিংবদন্তি বালাক এবং দিদিয়েরে দ্রগবা। তাদের প্রতিবাদের ধরণ পছন্দ হয়নি উয়েফার। জরিমানা করা হয় ৮৫ হাজার পাউন্ড। বার্সেলোনা সেবার জিতে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা।
তবে এরপরেই হারিয়ে যান ওভেরবো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট ম্যাচে আর কখনোই দেখা যায়নি তাকে। নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি ড্রেসিংরুমে ফিরে বুঝতে পারছিলেন একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছিলেন। স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘দুই ঘণ্টার ব্যবধানে আমি নিরেপেক্ষ এবং সম্মানিত রেফারি থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে বোকা রেফারি হয়ে যাই।’
চেলসির সমর্থকদের থেকে বাঁচতে পুলিশি পাহারায় নেয়া হয় বিমান পর্যন্ত। পরের বছর ওভেরবোকে দেয়া হয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ এবং ফিওরেন্টিনা ম্যাচের দায়িত্ব। সেখানেও অফসাইডের সিদ্ধান্ত ভুল করেন তিনি। এরপর থেকে আর কখনোই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দেখা যায়নি তাকে। নরওয়ের ঘরোয়া লিগেই রেফারি হিসেবে শেষ করেছিলেন ক্যারিয়ার।
ওভেরবো বর্তমানে মনোবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। রেফারি হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন মনোবিজ্ঞান বিষয়ে। রেফারি হিসেবে ২০১৩ সালে অবসর নেয়ার পর এই পেশায় চলে আসেন। নরওয়েজিয়ান স্কুল অব স্পোর্টস সায়েন্সে এখন তরুণদের শিক্ষক তিনি।
জেএ