আড়াই মাসেও পুরস্কার পাননি এশিয়ানজয়ী অ্যাথলেটরা
টানা দুই বছর এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স থেকে পদক এসেছে বাংলাদেশে। ২০২৩ সালে ইমরানুর রহমানের স্বর্ণের পর এবার জহির রায়হান রৌপ্য ও মাহফুজুর রহমান ব্রোঞ্জ জেতেন। গত বছর ইমরানের স্বর্ণ জয়ের পরপরই অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন তাকে সংবর্ধনা ও আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করেছিল। তবে এবার পদক জয়ের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও মাহফুজ ও জহির এখনও পুরস্কৃত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইরানে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে ৪০০ মিটার ইভেন্টে জহির রায়হান রৌপ্য ও হাইজাম্পে ব্রোঞ্জ জেতেন মাহফুজুর রহমান। পদক জিতে জহির ও মাহফুজ ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশে ফিরেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের টার্ফে তাদের গলায় ও ফুল দিয়ে বরণ করেছিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। এরপর আর তাদের নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়া দেশের অন্য সকল খেলার খেলোয়াড়দের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। আন্তর্জাতিক একটি পদক জিতে তাই তারা খানিকটা আর্থিক পুরস্কারের আশায় থাকেন।
দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পুরস্কৃত না হওয়ায় খানিকটা হতাশা অ্যাথলেটদের কণ্ঠে। দুই পদকজয়ীকে সম্মানিত করার কথা বললেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু, ‘ইনডোর টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই ছিল রমজান, এরপর ঈদ। তারা দেশের হয়ে সম্মান বয়ে এনেছেন, অবশ্যই ফেডারেশনও তাদের সম্মানিত করবে। সভাপতি মহোদয়ের সঙ্গে তাদের সম্মাননার ব্যাপারে দিনক্ষণ ঠিক নিয়ে আলোচনা চলছে।’ জহিররা দেশে ফিরেছেন ২০ ফেব্রুয়ারি। রমজান শুরু হয়েছে ২০ দিন পর। রমজান শুরুর আগেই অবশ্য ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পারিবারিক সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। ফিরেছেন সপ্তাহ দু’য়েক আগে।
এশিয়ান পর্যায়ে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সে কোনো পদকই ছিল না। সেখানে ইমরান স্বর্ণ জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তাই তার সংবর্ধনাও ছিল একটু বড়সড়ই। পদক জেতার ১১ দিনের মধ্যেই ইমরানকে স্বর্ণ জয়ের জন্য অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন ১০ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেছিল। এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ইমরান পেয়েছিলেন আরও ৫ লাখ টাকা। স্বর্ণ জয়ের পর ইমরান তার সংস্থা সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন থেকেও আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন। একই টুর্নামেন্টে পরের বছর রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জেতা জহির–মাহফুজও কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও খোদ ফেডারেশনই এখনও সম্মাননা জানাতে পারেনি, অন্যান্য সংস্থা তো দূরের কথা।
এশিয়ান ইনডোরে জহির ও মাহফুজের পদক জয় ছিল ফেডারেশনের প্রতি একটা বার্তাও। গত দুই বছর ফেডারেশন ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমানের দিকেই বেশি নজর দিয়েছিল অন্যদের তুলনায়। ২০২৩ সালে স্বর্ণ জেতা ইমরান এবার এশিয়ান ইনডোরে চতুর্থ হয়েছেন। ইমরান এই আসরে ব্যর্থ হলেও দেশি অ্যাথলেটরাও যে পারেন– সেটা প্রমাণ করেছেন জহির ও মাহফুজ। তাই পদক জয়ের পর তাদের ফেডারেশনের কাছে প্রত্যাশা ছিল বিশেষ অনুশীলন ও কোচিংয়ের ব্যবস্থা। দুই মাস পর সেখানেও নেই কোনো অগ্রগতি। আগের মতোই নিজ নিজ সংস্থার হয়েই অনুশীলন করছেন তারা।
তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, ‘শুধু মাহফুজ ও জহির নয়, আরো কয়েকজন সম্ভাবনাময় অ্যাথলেট রয়েছেন। তাদেরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশে কাজ করা ভারতীয় কোচ গ্যাংকরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি আসলে মাহফুজসহ আরও জাম্পারদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অন্য অ্যাথলেটদের বিদেশে পাঠানো অথবা বিদেশে কোচ এনে প্রশিক্ষণ করানো উভয় দিকেই কার্যক্রম চলমান।’
আরও পড়ুন
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি অ্যাথলেটিক্স। বাংলাদেশে সেটি বেশ অবহেলিত। সাম্প্রতিক সময়ে ইমরানের সাফল্যে আবার আলোচনায় এসেছে অ্যাথলেটিক্স। তবে অ্যাথলেটদের আরও রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রাপ্য বলে মন্তব্য ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের, ‘এশিয়ান পর্যায়ে অ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণ অনেক বড় বিষয়। ফেডারেশন সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তাকে (ইমরান) সম্মানিত করেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, মন্ত্রণালয় থেকে সে কোনো সম্মাননা পায়নি এমনকি অভিনন্দনও পায়নি। দেশে আসার পর ইমরান বিমানবন্দরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল। পদকজয়ী ও জাতীয় অ্যাথলেটদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি– সম্মান প্রয়োজন।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যের গণ্ডি দক্ষিণ এশিয়ার এসএ গেমস। এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতলে পুরস্কারের বন্যা বয়ে যায়। এশিয়ান পর্যায়ে সাফল্য একেবারেই কম। ইনডোর হলেও অ্যাথলেটদের এই অর্জন বেশ বড়ই। বড় কৃতিত্ব গড়লেও এখনও প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছেন অ্যাথলেটরা।
এজেড/এএইচএস