হোসেলুর শেষের ম্যাজিক, বার্নাব্যুতে ফের রিয়ালের কামব্যাক
টমাস টুখেল সেমিফাইনালের আগে বলেছিলেন, গোল করবেন সার্জ ন্যাব্রি। জার্মান এই উইঙ্গার চলতি মৌসুমে বারবারই ইনজুরিতে পড়েছিলেন। সেমিফাইনালের সেকেন্ড লেগে এসে আবারও চোট পেলেন তিনি। দুই লেগ মিলে তার গোল করা হয়নি। তবে ন্যাব্রি গোল না করলেও তার বদলি নামা আলফনসো ডেভিস ঠিকই পেলেন গোলের দেখা।
পুরো ম্যাচ ত্রাতা হয়ে ছিলেন ম্যানুয়েল নয়্যার। জয়টা যখন হাতের মুঠোয় তখনই করে ফেললেন বড় ভুল। ভিনিসিয়াসের জোরালো শট ঠেকানো হলো না তার। বল গ্রিপে রাখতে পারেননি। বদলি নামা হোসেলু ভুল করেননি। ঠিকই বল জড়ালেন জালে। রিয়াল যেন আরও একবার পেয়ে গেল তাদের ত্রাতাকে।
মিনিটখানেক পর আবারও ত্রাতা হয়ে এলেন হোসেলু। রিয়াল মাদ্রিদ কেন কামব্যাকের রাজা সেটা আবার বোঝা গেল সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। নব্বই মিনিটের শেষ সেকেন্ডে আরও একবার বল জালে জড়ালেন হোসেলু। অ্যান্তোনি রুডিগারের বাড়ানো বল ফাঁকায় দাড়িয়ে জালে জড়ান এই স্ট্রাইকার।
অথচ মিনিটখানেক আগেও জয়ের সুবাস পেয়েছিল বায়ার্ন। কানাডার লেফটব্যাক আলফনসো ডেভিসের গোলে বার্নাব্যুতে দারুণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখছিল তারা। ডেভিস এর আগে একবারই গোল করেছিলেন বায়ার্নের হয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ছিল না কোনো গোল। তবে আজ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে যেভাবে বাঁকানো শটে গোল করেছেন, তা হয়ত জাত স্ট্রাইকারদেরও ঈর্ষায় ফেলবে।
৬৮ মিনিটের সেই গোলটাও এসেছে নিখুঁত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। হ্যারি কেইনের নিরীহদর্শন লং পাস থেকে দুজন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করলেন এই কানাডিয়ান লেফট উইংব্যাক।
রিয়াল মাদ্রিদ অবশ্য দুই মিনিটের মাথায় গোল শোধও করে। ফেডে ভালভার্দে পাসই দিয়েছিলেন। বায়ার্নের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে তা চলে যায় জালে। কিন্তু গোল হওয়ার আগেই অধিনায়ক নাচো ফার্নান্দেজ ফাউল করে বসেন জশুয়া কিমিখকে। ভিএআর দেখে গোল বাতিল করেন রেফারি সিমন মার্সিনিয়াক।
রিয়াল অবশ্য এদিন ঘরের মাঠে পুরোটা সময়ই এমন হতাশ হয়ে সময় পার করেছে। ফুটবলে আক্রমণ যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর হতে পারে রক্ষণটাও। আরও স্পষ্ট করে বললে গোলরক্ষকের কাজটা। রিয়াল মাদ্রিদ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দেখালো আক্রমণের শক্তি আর বায়ার্ন দেখালো রক্ষণের তেজ। আর ম্যানুয়েল নয়্যার ৯০ মিনিট ধরে করে গেলেন অতিমানবীয় সব সেইভ।
রিয়াল মাদ্রিদ অন্তত গোটা চারেক গোল পেতে পারত শুধুমাত্র নয়্যারের অতিমানবীয় সেইভ না থাকলে। ১৩ মিনিটেই রিয়াল ম্যাচে প্রথম জুতসই আক্রমণ করে। দানি কার্ভাহালের মাপা পাসে বায়ার্নের গোলমুখে শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। সেটা গোলবারে লেগে ফেরত আসে। রিবাউন্ডে বল পেয়েছিলেন রদ্রিগো। তবে সেই শটও আটকে দেন নয়্যার।
বিপরীতে শুরু থেকেই জার্মান ফুটবলের অলিখিত নিয়ম মেনে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলতে চেয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু মাঝমাঠ থেকে বারবারই খেই হারাতে হয়েছে সফরকারীদের। অ্যান্তোনি রুদিগার, নাচো ফার্নান্দেজরা যেন বন্ধ করে রেখেছিলেন বায়ার্নের আক্রমণের সমস্ত পথ।
এরপরেও একাধিকবারই রিয়াল হানা দিয়েছে বায়ার্নের গোলমুখে। ইনজুরিফেরত ম্যাথিয়াস ডি লিট এবং এরিক ডায়ার অবশ্য বিপদ বাড়তে দেননি অনেকটা সময়। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন হ্যারি কেইনও। দারুণ এক ভলি ছিল তার। যদিও সেটা বিপদ বাড়ায়নি।
ম্যাচের ৪০ মিনিটে অবশ্য নিজেদের দ্বিতীয় গোলটা পেয়েই যেত রিয়াল। এবারে ত্রাতা অবশ্য নয়্যার। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে আরেকদফা হতাশ করেছেন এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে হ্যারি কেইন হতাশ হয়েছেন ঠিকঠাক পাস না পেয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল হলো আরও ক্ষুরধার। জশুয়া কিমিখকে একঅর্থে নাচিয়েই ছেড়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। বারবার ভেঙেছেন রক্ষণের দেয়াল। কিন্তু গোল পাননি লম্বা সময় পর্যন্ত। গোলটা আগে পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। তবে সেটা ধরে রাখা হয়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরও একটা অসাধারণ রাত উপহার দিলো রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর অসামান্য ইতিহাসের পাতায় যোগ হলো নতুন এক উপাখ্যান।
বদলি নামা হোসেলু তিন মিনিটের মাথায় দু’বার বল জড়ালেন জালে। ঘরের মাঠে ২-১ গোলের জয় এলো রিয়ালের। ৪-৩ অ্যাগ্রিগেটের জয়ে আরও একবার তারা নিশ্চিত করল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ওয়েম্বলিতে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানিরই আরেক ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
জেএ/কেএ