বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে চমক নাকি বিস্ময়?
ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই পারফর্ম করেছিল বাংলাদেশ দল। সেই দুঃসহ স্মৃতি না ভুলতেই আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে আইসিসির আরেকটি মেগা টুর্নামেন্ট। তবে সেটি ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের খেলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট-ইন্ডিজ এবং আমেরিকার মাটিতে আসন্ন এই চার-ছক্কার মহারণ শুরু হবে ১ জুন থেকে। যার জন্য ইতোমধ্যে দল ঘোষণা করেছে ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো। কিন্তু এখনই বাংলাদেশের দল ঘোষণা করা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আজকের মধ্যে (১ মে) আইসিসির কাছে বিশ্বকাপের প্রতিযোগী দেশগুলোকে চূড়ান্ত স্কোয়াডের তালিকা পাঠাতে হবে। তাই তো বাংলাদেশ দলও সে কার্যক্রম সেরে ফেলেছে। গতকালই (মঙ্গলবার) নিজেদের বৈঠক শেষে ১৫ সদস্যের দল নির্বাচন করে ফেলেছেন বিসিবির তিন নির্বাচক। এরপর ক্রিকেট অপারেশন্সের কাছেও দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিসিবির নির্বাচক হান্নান সরকার।
হান্নান বলেন, ‘আমরা গতকাল আলাপ-আলোচনা করেছি তিন নির্বাচক মিলে। এরপর একটা দল ক্রিকেট অপারেশন্সের কাছে পাঠিয়েছি। এরপর সেটি আইসিসির কাছে পাঠানো হবে।’
নির্বাচকদের প্রস্তুত করা বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সেই তালিকা বিসিবি এখনও আইসিসিকে পাঠিয়েছে কি না তার সর্বশেষ জানা যায়নি। তবে আইসিসির কাছে দল পাঠালেও এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে থাকা ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ করছে না বিসিবি। জানা গেছে, জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে আমেরিকা যাওয়ার আগমুহূর্তে বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করতে চায়।
নির্বাচকদের পাঠানো দলে কারা থাকছেন সেটা নিয়ে দর্শকদের মাঝে রয়েছে চাপা উত্তেজনা, কিছুটা উৎকণ্ঠাও। কারণ পছন্দের সব ক্রিকেটার তো আর ১৫ সদস্যের দলে জায়গা পাবেন না। ফলে দীর্ঘদিন পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কি থাকছেন, সৌম্য সরকার কি ফিট হয়ে ফিরবেন বিশ্বকাপ দলে? — এমন কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও এ নিয়ে বিসিবির নির্বাচক কিছুই জানাতে রাজি নন। তবে নিজেদের দল নির্বাচন নিয়ে বেশ খুশি হান্নান, ভালো কিছুরই আশা করছেন তিনি।
হান্নান বলছিলেন, ‘আমরা দল নিয়ে সবসময় স্বস্তিতে থাকি। আশা করছি ভালো কিছু হবে। বড় লক্ষ্যের কথা এখনই বলতে পারছি না, স্টেপ ধরে ধরে এগোতে চাই। যদি প্রথম লক্ষ্যের কথা বলেন তাহলে সুপার এইট, এরপর বাকিটা। দল নিয়ে আশাবাদী, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
এদিকে আজ আইসিসিকে স্কোয়াড জমা দেওয়ার শেষ সময় হলেও, দলে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকছে। মূলত ২৫ মে পর্যন্ত কোন কারণ ছাড়াই পুরো স্কোয়াড বদলে ফেলা যাবে। তাই জিম্বাবুয়ে সিরিজে ক্রিকেটারদের পরখ করতেই পারে বিসিবি। এদিকে জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে নেই সৌম্য। ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে তিনি রিহ্যাব করছেন, শেষ দুটি ম্যাচে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে দলের সঙ্গে রয়েছেন চট্টগ্রামেই।
আরও পড়ুন
তবুও সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের আগে তার ফিট হওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোচিং স্টাফ থেকে টিম ম্যানেজেমেন্টের পছন্দের তালিকায় সৌম্য থাকবেন সবার আগে। তাকে নিয়ে অবশ্য আশার বাণী শোনাতে পারেননি বিসিবির প্রধান চিকিৎসক। সৌম্যকে নিয়ে দেবাশীষ চৌধুরি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, ‘সে ধীরে ধীরে আগাচ্ছে, তবে এখনও ম্যাচ খেলার মতো অবস্থানে নেই। আগামী সপ্তাহে আরেকটি এমআরআই করাবো তার, এরপর বলতে পারব কবে ফিরবে সে।’
যদি শেষ পর্যন্ত সৌম্য দলে না থাকেন সেটা হবে এক প্রকার বিস্ময়! আর তার জায়গায় দেখা যেতে পারে পারভেজ হোসেন ইমনকে, যা চমক হিসেবেই ধরা দেবে। কেননা দলে মিডল অর্ডার ব্যাটারের সংখ্যা যথেষ্ট হওয়ার কারণে আফিফ হোসেন ধ্রুব’র চেয়ে ওপেনার ইমনই থাকবেন এগিয়ে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল হতে যাচ্ছে অনেকটা কাঙ্ক্ষিতই।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিশ্বকাপ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তানভীর ইসলাম।
রিজার্ভ- তানজিম হাসান সাকিব, আফিফ হোসেন, পারভেজ হোসেন ইমন।
নতুন করে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ইনজুরির সমস্যা না থাকলে অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ওপরের দলের ক্রিকেটাররাই উঠবেন আমেরিকার বিমানে। গেল বিশ্বকাপে প্রত্যাশানুযায়ী পারফর্ম করতে না পারায় টাইগার ক্রিকেটের সমর্থকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেই হতাশা ভুলিয়ে দিতে টাইগারদের এবার ভালো পারফর্ম করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত নাজমুল শান্তর দল কেমন করে– এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা!
আরও পড়ুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে আগামী ১ জুন। যেখানে গ্রুপ অব ডেথখ্যাত ‘ডি’-তে পড়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে ৭ জুন, ডালাসের ম্যাচটিতে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ জুন বাংলাদেশ লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর ১৩ জুন নেদারল্যান্ডস এবং ১৬ জুন নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপপর্ব শেষ করবে।
এসএইচ/এএইচএস