আম্পায়ার জেসিকে নিয়ে আপত্তি, যা বলছে ক্লাবগুলো
ঘরের মাঠে বাংলাদেশ নারী-পুরুষ দুই জাতীয় দলের সিরিজ শুরু হচ্ছে। অথচ আলোচনার কেন্দ্রে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) ওঠা নারী আম্পায়ারের পরিচালনায় না খেলতে চাওয়ার অভিযোগ। এমন আপত্তি ক্লাব নাকি ক্রিকেটাররা তুলেছিলেন, তা নিয়েও দেখা দেয় ধোঁয়াশা। যে ম্যাচকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা, সেখানকার দুই দল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। যেখানে ক্রিকেটারদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলেও জানা গেছে।
তার আগে মূল ঘটনা জেনে নেওয়া যাক— গত ২৫ এপ্রিল শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের একটি আউটকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। মুশফিক একটি বলে মিড উইকেটে উড়িয়ে মারার পর বাউন্ডারি সীমানার খুব কাছ ঘেঁষে আবু হায়দার রনি ডাইভ দিয়ে অবিশ্বাস্য ক্যাচ লুফে নেন। মুশফিক হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়ার আগেই আটকান প্রাইম ব্যাংক দলের সতীর্থরা। তাদের দাবি– রনির পা বাউন্ডারি স্পর্শ করেছে। কিন্তু ডিপিএলে টিভি রিপ্লে দেখার সুযোগ না থাকায় ফিল্ডারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আউট দেন আম্পায়াররা। দু’দলও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
পরে ওই ঘটনার আগে নাকি আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে দাবি করে একটি সংবাদমাধ্যম। যেখানে বলা হয়– ‘ম্যাচ শুরুর আগে নারী ফিল্ড আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসির অধীনে খেলা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ক্রিকেটাররা।’ পরে যা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা তৈরি হয়। তবে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক মন্তব্যে জেসি জানান, ‘এমন ঘটনার কথা তিনি গণমাধ্যমে জেনেছেন। অফিসিয়াল কিছু জানেন না। নিউজটা দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই তার খারাপ লেগেছে, এরকম হয়ে থাকলে ঠিক হয়নি।’
বিষয়টি নিয়ে গতকাল দিনজুড়ে ক্রীড়াঙ্গনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যে সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা জানান মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি— কেউই নারী আম্পায়ার নিয়ে কোনো আপত্তি তুলেননি। তারা জেসির অভিজ্ঞতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন।
মোহামেডানের ক্রিকেট সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, ‘আমরা আসলে আপত্তি তুলিনি। আমরা এমনিতে বলাবলি করছিলাম যে ম্যাচের মেরিট অনুযায়ী তো এত বড় ম্যাচে জেসি আম্পায়ার হতে পারে না। আমরা বলছিলাম এত বড় ম্যাচে আরও ভালো আম্পায়ার দরকার ছিলো। আমরা অফিসিয়ালি অভিযোগ করিনি, অফিসিয়ালি অভিযোগ করব কেন। আমরা ওরকমভাবে রিপোর্ট টিপোর্ট করিনি। আমাদের ধারণা ছিল তিনি নতুন আম্পায়ার, লিস্ট-এ ক্রিকেটে এ বছরই প্রথম খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তাই অভিজ্ঞতা কম। আমরা সাধারণত এসব ম্যাচে সিনিয়র আম্পায়ার চাই।’
প্রাইম ব্যাংক ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেম কঙ্কন বলেন, ‘মহিলা আম্পায়ার দেবে এটা তো জানি না আমরা। বাংলাদেশে মহিলা আম্পায়ারের অভিজ্ঞতা কেমন এটা তো আমরা সবাই জানি। আপত্তি করি না। যেহেতু এটা বড় ম্যাচ, এখানে নিয়মিত যারা করে তাদের আশা করছিলাম। মহিলা আম্পায়ার দেখেন যেটা এলবিডব্লিউ সেটা দেয় নাই, যেটা হয় নাই সেটা দিছে। আমরা ম্যাচ শুরুর আগেও কিছু বলিনি। এমনিতে নিজেরা আলাপ করেছি। সিসিডিএমের কাউকে বলিনি। নিজেরাই আলাপ করেছি। সেটা তার অনভিজ্ঞতার জন্যই।’
আরও পড়ুন
উল্লেখ্য, ম্যাচটিতে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব ছিলেন এ আই এম মনিরুজ্জামান ও সাথিরা জাকির জেসি। মনিরুজ্জামান আগে থেকেই লিস্ট ‘এ’ শ্রেণির ম্যাচ পরিচালনা করলেও, জেসিসহ দুজন নারী আম্পায়ার এবার প্রথম এমন দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে জেসি নতুন হলেও, ম্যাচ পরিচালনা না করলে কিভাবে অভিজ্ঞ হবেন— এমন প্রশ্ন তুলেছেন আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু।
তিনি বলেন, ‘আমিও জানি, একজন নারী এবং জুনিয়র আম্পায়ারের ঢাকার বিগ ম্যাচ পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। তাই বলে আমরা কি কাউকে না কাউকে ওই সব বড় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেব না? জেসি তো এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচও পরিচালনা করেছে। ভারত আর বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট সিরিজেও অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছে। এ বছর বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেখানে আমাদের নারী আম্পায়ারদের খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পাক, আমরা সেই চেষ্টা করছি। তাই জেসিকে সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যদিও মোহামেডান ও প্রাইম ব্যাংক থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি।’
এএইচএস