এমন ভুল বারবার করতে চাইবে পাঞ্জাব!
কয়েকশ বছর আগে থেকেই ভারতীয়রা রান্নায় মসলা ব্যবহার করে। এ উপমহাদেশের মসলার এতটাই ঘ্রাণ যে, মটর আবিষ্কার হওয়ার আগেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সুদূর ইউরোপেও। সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তখন ইউরোপীয়রা এ অঞ্চলে ব্যবসার উদ্দ্যেশে পাড়ি জমাতে থাকে। এমন উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪৯২ সালে ইউরোপ থেকে ভারতে আসার সহজ পথ খোঁজেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তখন ভারতে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে ভুল করে আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করে ফেলেন এই ক্যাথলিক নাবিক।
কলম্বাসের এ গল্পের সঙ্গে আপনি চাইলে পাঞ্জাব কিংসের শশাংঙ্ক সিংয়ের আইপিএল খেলাকে মেলাতে পারেন। কলম্বাস যেমন ভুল করে আমেরিকার বাহামা দ্বিপপুঞ্জে নোঙর করেছিলেন, তেমনি মিনি নিলাম থেকে ভুল করে এই হার্ডহিটার ব্যাটারকে দলে ভিড়িয়েছিল পাঞ্জাব।
গত ১৯ ডিসেম্বর দুবাইয়ে আইপিএলের নিলাম হয়েছে। ক্ষুদ্র পরিসরের এই নিলামে সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে শশাঙ্ক সিংয়ের নাম ডাকা হয়। তিনি অবিক্রীত থেকে যান। ৩ মিনিট পরই আরও এক শশাঙ্ক সিংয়ের নাম ডাকা হয়। তাকে ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ ভারতীয় রুপিতে দলে নেয় পাঞ্জাব।
এরপর নিলাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মল্লিকা সাগর তনয় থিয়াগারাজনের নাম ডাকেন। এই ভারতীয় ক্রিকেটারকেও কেনে পাঞ্জাব। তখনই পাঞ্জাবের টেবিলে আলোচনা শুরু হয়।
টেবিল থেকে প্রীতি জিনতা ও নেস ওয়াদিয়া বার্তা পাঠান তারা ভুল শশাঙ্ককে কিনেছেন। তখন সাগর তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা এই প্লেয়ারকে চাও না? পাঞ্জাবের পক্ষ থেকে ‘না’ উত্তর দিলে সাগর জানিয়ে দেন হাতুড়ির ঘা পড়ে গেছে। অর্থাৎ এই ক্রিকেটারকে নিতেই হবে।’
অবশ্য একদিন পরই শশাঙ্ককে আপন করে নেয় পাঞ্জাব! ফ্র্যঞ্চাইজিটি জানায় ভুল করে নয়, জেনে শুনেই তারা কিনেছে এই ক্রিকেটারকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঞ্জাব জানায়, ‘দলের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হচ্ছে যে শশাঙ্ককে নেওয়ার লক্ষ্য আমাদের সব সময়ই ছিল। একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল তালিকায় দুই ক্রিকেটারের একই নাম হওয়ায়। শশাঙ্ককে দলে পেয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।’
দুই সময়ে ফ্যাঞ্চাইজির দুই ধরনের বক্তব্য যে কাউকে দ্বিদ্বায় ফেলবে। তবে শশাঙ্ক পাঞ্জাবকে দ্বিদ্বা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আসরের শুরু থেকেই ব্যাট হাতে রীতিমতো বোলারদের শাসন করছেন তিনি। গতরাতেও পাঞ্জাবকে অবিশ্বাস্য এক জয়ে এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ইডেন গার্ডেনে আগে ব্যাট করতে নেমে রানের পাহাড় গড়েছিল কলকাতা। স্বাগতিকদের সেই পাহাড় টপকাতে হলে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো পাঞ্জাবকে। ২৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেম দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন জনি বেয়ারস্টো। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শশাঙ্ক। ২০ লাখ রুপির এই ব্যাটার ২৮ বলে করেছেন অপরাজিত ৬৮ রান। তাতে ৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাঞ্জাব।
শুধুই এই ম্যাচ নয়, পুরো আসর জুড়েই এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন শশাঙ্ক। আসরে ৯ ম্যাচ খেলে প্রায় ৬৬ গড়ে করেছেন ২৬৩ রান। যেখানে তিনি ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৮৩ স্ট্রাইকরেটে।
শশাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত তিনি সফল। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করেছেন। তার ব্যাটিং ম্যাচে প্রভাব ফেলেছে। এমন একজন ব্যাটার যদি ভুল করে পাওয়া যায়, তাহলে সে ভুল নিশ্চয়ই বারবার করতে চাইবে পাঞ্জাব!
এইচজেএস