আম্পায়ার, মোহামেডান, ফেডারেশন সব পক্ষই কাঠগড়ায়
গতকাল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ছিল হকির অঘোষিত ফাইনাল। সেই ফাইনালে ওমানী আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান রিফিউজ টু প্লে করেছে। এমন ঘটনায় ক্রীড়াঙ্গন চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
মোহামেডানের সাবেক পরিচালক ও হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জামিল উদ্দিন মোহামেডান ও ফেডারেশন উভয়কে কাঠগড়ায় দাড় করালেন, ‘আমরা এই লিগেই দেখেছি অনেক ম্যাচ দেড়-দুই ঘন্টা বিলম্ব হয়েছে। ফেডারেশনের হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা নিরসন হয়ে পুনরায় খেলেছে। গতকাল এত গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা নির্ধারণী খেলায় এমন ঘটনায় ফেডারেশনের অবশ্যই একটা ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। এতে ফেডারেশনের উপর পক্ষপাতের অভিযোগ যেমন উঠে তেমনি ঘটনা যাই ঘটুক মোহামডানের খেলা উচিত ছিল। একজন খেলোয়াড় কম নিয়েও ফুটবল, হকিতে জয়ের ঘটনা রয়েছে। মোহামেডান ম্যাচে এগিয়েই ছিল।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রফিকুল ইসলাম কামাল কালকের ঘটনায় আম্পায়ারকেই কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছেন , ‘দারুণ খেলা হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আম্পায়ারের উচিত ছিল আরো সুচারূরুপে সিদ্ধান্ত দেয়া। উদ্ভূত ঘটনার জন্য মূল দায় আম্পায়ারের। যে (মিমো) ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে তাকে কোনো কার্ডই দেননি তিনি। উল্টো যারা আঘাতপ্রাপ্ত তাকে কার্ড দিতে দেখা গেছে।’
ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে পক্ষপাত আম্পায়ারিং নতুন নয়। বিশেষত হকিতেই প্রতি বছরই এমন অভিযোগ উঠে। তাই মোহামেডানের দীর্ঘদিনের হকি কমিটির কর্মকর্তা সাজেদ আদেল ক্লাবটির বর্তমান কর্মকর্তাদের অপরিপক্বতা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মোহামেডান টেবিলের শীর্ষে ছিল। ফাইনাল ম্যাচেও লিডে ছিল। বাকি সময় এক জন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেললেও খেলার ধারা অনুযায়ী জেতার সম্ভাবনা ছিল। দলের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অপরিপক্বতাই রিফিউজ টু প্লে’র ঘটনা ঘটেছে।’
মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি ক্লাবটির ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত। সাবেক এই তারকা ফুটবলারও বিস্মিত হয়েছেন রিফিউজ টু প্লে’র ঘটনায়, ‘মোহামেডানের বিপক্ষে আম্পায়ারিং বাজে হয়েছে। এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তারপরও মাঠ থেকে ছাড়ার বিষয়টি দৃষ্টিকটু। মোহামেডানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।’ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু মোহামেডানের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। সাদা-কালো দলটির হয়ে অনেক ম্যাচ খেলা নান্নু ক্রিকেটে মাঠ ছাড়ার কোনো ঘটনা মনে করতে পারেননি।
দিন শেষে খেলাধূলায় আম্পায়ারই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা মেনে নিয়ে মোহামেডান খেলতে গেলেও ওমানী আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আর খেলার মানসিকতা ছিল না বলে জানান ক্লাবটির হকি কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, ‘লিগের শুরু থেকে নানা বিষয়ে আমরা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। শেষ ম্যাচে আমরা হকির বৃহত্তর স্বার্থে খেলার জন্যই গিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত। আগে থেকেই শঙ্কা ছিল আম্পায়ারিং নিয়ে। কালকের সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতরই প্রতিফলন।’
মোহামেডান দেশের তিন শীর্ষ খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতে অংশগ্রহণ করে। ক্রিকেট ও ফুটবলে অন্যায়ের শিকার হয়েও নিয়মিত খেলে যাচ্ছে। কিন্তু গত এক দশকে হকিতে নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে ক্লাবটি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে ঘটনা করে লিগ বর্জন করেছে। ২০২১ সালে রাসেল মাহমুদ জিমির নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্লাব কাপ হকিতে অংশ নেয়নি মোহামেডান। তিন বছর পর এবারের লিগে শেষ ম্যাচে করল রিফিউজ টু প্লে’র ঘটনা। ফুটবল, ক্রিকেটের তুলনায় হকিতে মোহামেডানের নানা ঘটনার জন্ম দেয়ার পেছনে এই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায় দেখেন অনেকে।
প্রিমিয়ার লিগ যে কোনো ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বোচ্চ আসর। সেই আসরের সমাপ্তিটা বড়ই করুণ হয়েছে এবার। ২০১৮ সালে মেরিনার ও মোহামেডান শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ ৪৪ মিনিট পর আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী সেই ম্যাচের সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েক মাস পর। ঐ ম্যাচ ড্র ঘোষণা করে মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
হকি লিগ মানেই বিতর্ক এবং সেই সমালোচনার কেন্দ্রে ঘুরে ফিরে সাধারণ সম্পাদক। সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জামিল উদ্দিন এই সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চান, ‘হকি লিগ মানেই যেন বিতর্ক এবং ক্লাব ফেডারেশনকে মানে না আবার ফেডারেশনেরও পক্ষপাতের অভিযোগ উঠে। বর্তমান ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন ভাই অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি হকি ফেডারেশনকে একটি সুন্দর ফরম্যাটে আনার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ নেবেন আশা করি। ক্রিকেটের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ডিসিপ্লিন হকি।’
এজেড/জেএ