‘আম্পায়ার নয়, সমস্যা দলের’
ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লিগে শুরু থেকে ছিলেন লঙ্কান আম্পায়ার দায়ান দিশানায়েক ও মালয়েশিয়ান আম্পায়ার ইসমাদি বিন আলিফ। দায়ান লিগের মাঝ পথে ইনজুরিতে পড়ায় আকস্মিকভাবে ঢাকায় আগমন ঘটে ওমানী আম্পায়ার হুসেইন আল হুসাইনীর। গতকাল তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মোহামেডান খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তাই জয়-পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনায় ওমানী আম্পায়ার।
গতকাল রাতে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ, জিমির নিষেধাজ্ঞা ও লিগের সামগ্রিক আম্পায়ারিং নিয়ে ওমানী আম্পায়ার হুসেইন আল হুসাইনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের।
প্রশ্ন : ম্যাচটি দারুণ চলছিল। হঠাৎ করে কী হয়ে গেল?
হুসেইন : অবশ্যই বেশ প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ খেলা হচ্ছিল। মোহামেডান বক্সে হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি শুরু এরপর টেন্টের খেলোয়াড়রা এসে জড়ো হয়। পরিস্থিতি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজে হয়।
প্রশ্ন : ঐ ঘটনায় আপনি মোহামেডানকে একটি হলুদ, দু’টি লাল ও আবাহনীকে একটি লাল, একটি হলুদ কার্ড দিয়েছেন। মোহামেডান অতিরিক্ত লাল কার্ড মেনে নিতে পারেনি। তাদের একটি অতিরিক্ত কার্ড দেয়ার কারণ কী?
হুসেইন : আমি নিয়ম অনুসরণ করেছি। মোহামেডানের পুরো টেন্ট চলে এসেছিল। যেটা প্রথম অন্যায়, এরপর তারা মারামারি করেছে দ্বিতীয় অন্যায় তারপর মাথার উপর স্টিক ব্যবহার করেছে। যেটা লাল কার্ড হওয়ার মতো ঘটনা।
প্রশ্ন : মোহামেডানের দাবি—আবাহনীর খেলোয়াড় মিমো এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তাকে কোনো কার্ড দেয়া হয়নি। মোহামেডানের একটি রেফারেল বাকি ছিল তাই তারা আপনাকে ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছিল। সেটা করেননি কেন?
হুসাইন : আমি ভিডিও দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভিডিও আম্পায়ারের নির্দেশনা মোতাবেকই আমি খেলোয়াড়দের নাম্বার টুকেছি, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রশ্ন : এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আপনার সিদ্ধান্তের জন্য শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হলো না। এতে আপনার কোনো অনুশোচনা রয়েছে কিনা?
হুসেইন : বাংলাদেশ বা কোনো দেশের নয়, আন্তর্জাতিক হকির যে নিয়ম সেটাই করেছি। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পুনরায় খেলা শুরু করতে চেয়েছি কিন্তু মোহামেডান খেলতে আসতে চায়নি। তাদের জন্য অপেক্ষা করার পরও আসেনি। তখন খেলা শেষ করতে হয়েছে।
প্রশ্ন : আবাহনী-মোহামেডানের প্রথম পর্বের ম্যাচেও এক ঘন্টা বিলম্ব হয়েছে। আরো অনেক ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে শেষ হয়েছে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যেই খেলা শেষের সিদ্ধান্ত কেন?
হুসেইন : আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ম্যাচে একটি রেফারেল। সেটা শেষ হলে শেষ। এখানে ম্যাচে দু’টি তাই সময় বেশি লাগে। এজন্য ম্যাচ অনেক বিলম্ব হয় আবার অনেক সময় রেফারেলের পরেও দলগুলো মানতে চায় না সিদ্ধান্ত। আজ (গতকাল) মোহামেডান সিদ্ধান্ত মানেনি। অপেক্ষার পর তাই খেলা শেষ করা হয়েছে।
প্রশ্ন : এই লিগে আরো দু’জন বিদেশি আম্পায়ার বাঁশি বাজাচ্ছেন কিন্তু মোহামেডান সুনির্দিষ্টভাবে আপনার ওপর অভিযোগ এনেছে। উষার বিপক্ষে মোহামেডানের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমিকে আপনি তৃতীয় হলুদ কার্ড দিয়েছেন। মোহামেডানের দাবি সেটা কার্ড হয় না। এরপর আজও (গতকাল) মোহামেডানকে একটি অতিরিক্ত কার্ড দিয়েছেন। সব মিলিয়ে মোহামেডানের দাবি আপনি পক্ষপাতিত্ব করছেন।
হুসাইন : আমি একজন আম্পায়ার। আমার কাছে নিয়মই শেষ কথা, সে নিয়ম এফআইএইচের (আন্তর্জাতিক হকি সংস্থা)। আমি একজন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। আমার এখানের পারফরম্যান্স এশিয়া ও বিশ্বকাপ হকির আম্পায়ার ম্যানেজাররা পর্যবেক্ষণ করছে। আমার ক্যারিয়ারের বিষয় রয়েছে। আমি এখানে ভুল নিয়ম বা কিছু করলে ভবিষ্যতে আমার ওপর তার প্রভাব পড়বে। আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়েই বাঁশি বাজাই।
আমি এবারই প্রথম বাংলাদেশে আম্পায়ারিং করতে এসেছি। বিগত বছরগুলোতে যারা এসেছে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রতিবাদ ও সমালোচনা হয়েছে। ফলে আম্পায়ারের নয়, সমস্যাটা দলের। হকির নিয়ম প্রতিনিয়ত বদলায়, আম্পায়াররা সঠিকটাই দেয়। নিয়ম না জানার ফলে অথবা সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ায় সমালোচনা হয়। দল বেধে টেন্ট থেকে ছুটে আসে। এটা একেবারে আইন বিরোধী।
আমি ওমান জাতীয় দলে খেলেছি ১২ বছর। ঢাকাতেও খেলতে এসেছি। জিমি আমার বন্ধুই। কিন্তু খেলার মাঠে আম্পায়ারের কাছে নিয়মই শেষ কথা। সে ঐ ম্যাচে বাজে ভাষা ব্যবহার করেছে তাই কার্ড দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন হকি খেলায় আমি বেশ কয়েকটি ভাষাই বুঝতে পারি৷
প্রশ্ন : ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের ওমানে যাতায়াত বেশি। তাই হকি সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, ওমানে বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আপনাকে এই লিগে বাঁশি বাজাতে এনেছেন তিনি। আপনি এই লিগে যুক্ত হলেন কিভাবে?
হুসাইন : সাঈদ সাহেবের ওমানে কাদের সাথে পরিচয় আমার জানা নেই। আবার আমারও ওমানে বাংলাদেশি কোনো ব্যবসায়ীর সাথে জানা-শোনা নেই। সাঈদ সাহেবের কোন ব্যবসা বা ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক তাও আমি জানি না। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের আম্পায়ার-ম্যানেজাররা আমাকে বলেছে বাংলাদেশের আম্পায়ার প্রয়োজন যেতে পারব কিনা। তখন ঈদ সামনে ছিল, দ্বিধায় ছিলাম। শাহবাজ, লাকীর (বাংলাদেশি আম্পায়ার) সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারাও আসতে বলে। পরে এসে আম্পায়ারিং করছি।
প্রশ্ন : হকিতে ওমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি। আপনাদের ঘরোয়া লিগের মান ও আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
হুসাইন : বাংলাদেশের লিগ যথেষ্ট ভালো। চার-পাঁচটি দল খুব ভালো মানের। ওমানেও তাই। এখানে বিশ্বমানের খেলোয়াড়ও এসেছে। শাহবাজ লাকীও ভালো আম্পায়ার। বাংলাদেশের লিগের মান ভালোই, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানলে সৌন্দর্য আরো বাড়বে৷
প্রশ্ন : এই লিগে বিদেশি আম্পায়ারদের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে আপনার মতামত কী?
হুসেইন : আমি আমার ব্যাপারে বলতে পারি ১২ বছর ওমান জাতীয় দলে খেলছি৷ এখন আম্পায়ারিং করছি বেশ কয়েক বছর। আমি আন্তর্জাতিক আম্পায়ার। কাজাখস্তান, ভারত, ওমান সহ অনেক দেশে বাঁশি বাজিয়েছি।
এজেড/এইচজেএস