বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ইংলিশ ক্লাবগুলোর অভিনব প্রতিবাদ
ইউরোপ-আমেরিকায় বর্ণবাদী আচরণ যেন করোনাভাইরাসের মতোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দিনে দিনে। শেষ দুই বছরে ফুটবলারদের প্রতি বর্ণবিদ্বেষের ঘটনাও বেড়েছে বহুগুণে। এ নিয়ে সবসময়ই সোচ্চার ছিল ইংলিশ ফুটবল দলগুলো। এবার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অভিনব উপায়ে প্রতিবাদের পথে হেঁটেছে সব ইংলিশ দল। চার দিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে সব দল।
চার দিন বয়কটের সময়সীমা শুরু হবে আগামী ৩০ এপ্রিল। সেদিন স্থানীয় সময় বিকাল তিনটা থেকে ৩ মে সকাল ১১.৫৯ মিনিট পর্যন্ত সব ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকার ঘোষণা জানানো হয়েছে। শুধু ক্লাবগুলোই নয়, ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ), প্রিমিয়ার লিগ, ইংলিশ ফুটবল লিগ, মেয়েদের সুপার লিগ ও চ্যাম্পিয়নশিপ একসঙ্গে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অভিনব এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।
তবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে সাবেক বার্সেলোনা ও আর্সেনাল ফরোয়ার্ড থিয়েরি অনরিও বর্ণবাদের প্রতিবাদ হিসেবে সব ধরণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ফরাসি এই কিংবদন্তির দেখানো পথেই এবার হেঁটেছে ইংল্যান্ড।
গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বর্ণবাদের শিকার হয়ে প্রাণ হারান কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড। এর প্রতিবাদেই ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ফুটবলার, রেফারি থেকে অন্যান্যরা। এ বিষয়ে ফিফাও বেশ কঠোর, ন্যূনতম প্রশ্রয় না দেওয়ার নীতি মেনে চলছে কঠোরভাবে। তাতে অবশ্য বর্ণবাদে লাগাম পড়েনি। এইতো সপ্তাহখানেক আগে স্পেনের লা লিগায় কাদিজের বিপক্ষে ভ্যালেন্সিয়ার ম্যাচে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এনেছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার ফরোয়ার্ড মুখতার দিয়াখাবি। যে কারণে তার সতীর্থরাও মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন। ২৪ মিনিট বন্ধ থাকে মাঠের ফুটবল, এরপর ভ্যালেন্সিয়া মাঠে ফিরলেও আর খেলেননি মুখতার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানে। লিভারপুলও এর তীব্র প্রতিবাদ করে। কিন্তু এরপরও বর্ণবাদ চলেছে সমানতালে। তাই এবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলগুলো।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রধান নির্বাহী অফিসার রিচার্ড মাস্টার্স এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তার কথা, ‘কোনো প্রকার বর্ণবাদী আচরণই গ্রহণযোগ্য নয়। খেলোয়াড়েরা যে ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন, তা চলতে দেওয়া যায় না।’
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা এডলিন জনের কথা, ‘ইংল্যান্ডের ফুটবল ও সমাজের সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করছে, তারা শাস্তি পাওয়া ছাড়াই পার পেয়ে যাচ্ছেন, যেটা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই আমরা। এ কারণে আমাদের প্রতিবাদ বন্ধ হবে না।’
এনইউ/এটি