মুস্তাফিজের বাজে দিন, ধোনি ঝড়ের পরও হারল চেন্নাই
দিল্লি-চেন্নাই ম্যাচের আগে সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার মাইক হাসি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শেষ বলে ছয় মেরে ম্যাচ জেতাবেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। হাসির একটি ইচ্ছাপূরণ হলো ঠিকই, কিন্তু আরেকটি অধরাই থেকে গেল। রোববার বিশাখাপত্তমে শেষ বলটা সজোরে হাঁকালেন ধোনি, আঁচড়ে গিয়ে পড়লো গ্যালারিতে। কিন্তু ম্যাচের ফলাফল তাতে বদলাল না। কারণ, শেষ বলের আগেই চেন্নাইয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
চলতি আইপিএলে প্রথমবার অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল চেন্নাই। কিন্তু দিল্লির ঘরের মাঠ বিশাখাপত্তমের গ্যালারি দেখে কে বিশ্বাস করবে সে কথা! হলুদ জার্সিতে একাকার। দলমত ভুলে সবাই যেন মাঠে হাজির হয়েছিলেন এক ম্যাজিশিয়ান ধোনির খেলা দেখতেই। ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় একটা কথা বেশ চালু আছে, ধোনি যেখানে খেলতে নামেন, সেটাই যে তার ঘরের মাঠ হয়ে যায়।
শেষ দিকে চেন্নাইয়ের হার যখন প্রায় অবধারিত, তখনো গ্যালারিতে ধোনি ধোনি চিৎকার। ভক্তদের হতাশ করলেন না এমএসডি। ব্যাট করতে নেমে চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখালেন যেন। যদিও জয়টা আসেনি শেষ পর্যন্ত। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে ভারতীয় সমর্থকদের মন জিতলেন আবারও। দিল্লির তোলা ১৯১ রানের জবাবে ধোনির চেন্নাই থেমেছে ১৭১ রানে। টানা দুই জয়ের পর প্রথম হারের মুখ দেখল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে টানা হারের পর জয়ে ফিরল রিশভ পন্তের দিল্লি।
চলমান আসরের আগের দুই ম্যাচে উদ্বোধনী দুই ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র আর রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের দারুণ শুরু আর টপ অর্ডারের তাতে ছন্দ মেলানো ব্যাটিংয়ের পর মিডল অর্ডারকে খুব একটা পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। আজ প্রায় দুইশো ছুঁই ছুঁই টার্গেট তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি চেন্নাইয়ের। দুই ওপেনার অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় (১) এবং রাচিন রবীন্দ্রের (২) উইকেট তুলে নেন খলিল আহমেদ। সেই ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ আজিঙ্কা রাহানে। ৩০ বলে ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু শিবাম দুবে এবং ড্যারিল মিচেলেরা তাকে সাহায্য করতে পারলেন না।
১৪তম ওভারে প্রথম বল হাতে তুলে নিয়েই সাফল্য এনে দেন মুকেশ কুমার। রাহানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা তুলে নেন। একই ওভারে আউট করেন সামির রিজভীকে। পরে দুবেকেও আউট করেন মুকেশ। অবশেষে ধোনি যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন ততক্ষণে ছয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করেছে চেন্নাই। ২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন মুকেশ কুমার। তিনি এলেন, ক্রিজে স্টান্স নিলেন এবং প্রথম বলটাই কব্জির হালকা মোচড়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়্যার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিলেন। বিশাখাপত্তম তখন উত্তাল। গ্যালারিতে শুরু হয়ে গিয়েছে নাচ।
পরের বলেই স্তব্ধ হয়ে যেতে পারত সব কিছু। মুকেশের ওয়াইড ইয়র্কারে ধোনির মারা শট উড়ে গিয়েছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিলেন খলিল আহমেদ। তৃতীয় বলে আবার চার। পরের ওভারে বল করতে এসেছিলেন খলিল। তাকে এত সহজে ছয় মারলেন ধোনি, দেখে মনে হল পুরো ব্যাপারটাই ডালভাত। অফস্টাম্পের বাইরে বল ছিল। সামনের পা এগিয়ে এনে নিখুঁত সময়জ্ঞানে শট। বল একস্ট্রা কভারের উপর দিয়ে গ্যালারিতে। বিশাখাপত্তম ক্রমশ উত্তাল হতে শুরু করেছিল।
ছন্দটা কাটল ১৯তম ওভারে। প্রথম বলে রান নিয়ে ধোনিকে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। পরপর তিনটি বল খেললেন ধোনি। প্রতি বারই রান নেওয়ার পরিস্থিতি ছিল। তবে কোনও বারই ধোনিকে রান নিতে উৎসাহী দেখায়নি। উল্টো দিকে জাদেজার মতো প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাটার যেখানে রয়েছেন, যেখানে আস্কিং রেট প্রতি মুহূর্তে বেড়ে চলেছে, সেখানে ধোনির এই সিদ্ধান্ত দলকে হারিয়ে দিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। দলের চেয়ে বড় হয় ধোনি নিজের জন্য খেললেন কি না, সেই প্রশ্নও অনেকে তোলা শুরু করেছেন। ধন্যবাদ প্রাপ্য মুকেশেরও। ধোনিকে প্রতিটা বল ওয়াইড ইয়র্কার দিলেন। একচল্লিশের ধোনির পক্ষে সামনে ঝুঁকে কভার ড্রাইভ মারা বেশ কঠিন। চেষ্টা করলেও সফল হননি।
তবে মাতিয়ে দিলেন ১৯তম ওভারে। তখন ৬ বলে ৪৩ রান দরকার। ক্রিকেটীয় হিসাবে ম্যাচ হাতের বাইরে। কিন্তু পর পর দু’বলে ধোনির চার এবং ছয় দেখে আবার ক্রিকেট সমর্থকেরা অঘটনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছিল যাতে নর্কিয়া অন্তত একটি ‘নো বল’ করেন। তা অবশ্য হয়নি। ধোনি তৃতীয় বলে রান নেননি। চতুর্থ বলে চার মারেন। ম্যাচের শেষ বলও পাঠিয়ে দিলেন গ্যালারিতে। যেন সমর্থকদের জন্য উপহার।
এর আগে ফ্ল্যাট উইকেটে শুরুতে বেশ সংগ্রামই করতে হয়েছিল চেন্নাইয়ের বোলারদের। মুস্তাফিজদের বোলিং আক্রমণকে রীতিমত নাস্তানাবুদ করে রেখেছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও পৃথ্বী শ। তাদের বিধ্বংসী ইনিংস থেকে বাদ যাননি দীপক চাহার, মুস্তাফিজুর রহমানদের কেউই।
তবে সেখান থেকেও ফিরে এসেছিল চেন্নাই। ফিরে আসার কৃতিত্বটা অবশ্য বেশিরভাগই পাবেন চেন্নাইয়ের লঙ্কান পেসার মাথিশা পাথিরানা। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। মৌসুম শেষে সেরা ক্যাচের তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবে এটি। এছাড়া নিজে নিয়েছেন মিচেল মার্শ এবং ট্রিস্টান স্টাবসের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট।
শেষদিকে মুস্তাফিজুর রহমান নিজেও চেষ্টা করেছেন। তবে তা খুব একটা কাজে আসেনি। ব্যাটারদের দারুণ এই প্রচেষ্টার সুবাদে দিল্লি ক্যাপিটালস নির্ধারিত ২০ ওভারে তোলে ১৯১ রান। চেন্নাইয়ের হয়ে তিন উইকেট নেন পাথিরানা। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন এক উইকেট। এদিন বেশ খরুচেও ছিলেন তিনি। অন্য উইকেট গিয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার ঝুলিতে।
এফআই/কেএ