রেকর্ড ৫২৩ রানের ম্যাচে হায়দরাবাদের জয়
চার-ছক্কা আর রেকর্ডময় এক ম্যাচের সাক্ষী হলো আইপিএল। ব্যাটিং তাণ্ডবে যে কোনো টি-টোয়েন্টি লীগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৭৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। প্রায় অসম্ভব এই টার্গেট তাড়ায় পাল্টা সাঁড়াশি আক্রমণ চালালেন মুম্বাইয়ের ব্যাটাররাও।
শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদের রানপাহাড় টপকাতে না পারলেও মুম্বাইয়ের ইনিংস থেমেছে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রানে। হারের ব্যবধান মাত্র ৩১, রেকর্ড রান করেও বলতে গেলে স্বস্তিতে ছিলেন না প্যাট কামিন্সরা।
এই প্রথম আইপিএলের এক ম্যাচে ৫০০’র (৫২৩ রান) বেশি রান উঠল। যদিও ব্যক্তিগত শতরান হয়নি একটিও। এ ছাড়া নজির আছে আরও। ছক্কা বৃষ্টির ম্যাচটিতে দুই দল মিলে ৩৮ টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে। যা যে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই এখন সর্বোচ্চ।
বুধবার রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টসে হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রানের রেকর্ড পুঁজি গড়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দলটির হয়ে ৩৪ বলে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন হেনরিখ ক্লাসেন। এ ছাড়া ঝোড়ো ফিফটি হাঁকিয়েছেন ট্রাভিস হেড ও অভিষেক শর্মা।
স্বাগতিক হায়দরাবাদের এমন নির্দয় ব্যাটিংয়ের পর ম্যাচের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। তবে খেলা যে 'আভি বাকি হ্যায়' সেটাই যেন দেখালেন মুম্বাইয়ের তরুণ ব্যাটার তিলক বর্মা। রোহিত-ইশানের ভালো শুরুর পর ব্যাট করতে নেমে ৩৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিলক। লড়াই করলেন টিম ডেভিডরাও।
এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমেই বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন হায়দরাবাদ ব্যাটাররা। প্রথমে ওপেনার ট্রাভিস হেড মাত্র ১৮ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন। যা ছিল হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলের সবচেয়ে দ্রুততম কারও ফিফটি। অথচ নিজেদের প্রথম ম্যাচের একাদশেও ছিলেন হেড। পরবর্তীতে তার সেই রেকর্ড বেশিক্ষণ টিকেনি। অজি ব্যাটারকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া ভারতীয় তরুণ অভিষেক শর্মা যে আরও দুই বল কম খেলে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন। তাদের পালা শেষ হলে, ক্রিজে এসে ঝড় তোলেন হেইনরিখ ক্লাসেন। তবে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়তে না পারলেও, তার ব্যাটেই আসে দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস।
মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আজ হায়দরাবাদ নিজেদেরকেই নিজেরা ছাড়িয়ে গেছে অনেকদূর। রেকর্ড গড়ার পথে আইপিএলের চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিও গড়েছে দলটি। হেইনরিখ ক্লাসেন ও এইডেন মার্করাম জুটি এনে দেন ১১৬ রান। এছাড়া এদিন হায়দরাবাদের চার ব্যাটার ৪৫ রানের বেশি রান করেছেন। যদিও এমন ঘটনা এর আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরও চারবার ঘটেছে।
এদিন শুরু থেকে তাণ্ডব মেজাজে থাকা হায়দরাবাদ প্রথম সাত ওভারেই দলীয় শতরানের গণ্ডি পার করে ফেলে। এর আগে তাদের প্রথম উইকেটের পতন হয় ৪৫ রানে। মায়াঙ্ক আগারওয়ালের বিদায়ের পরই শুরু হয় আসল ঝড়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হেড ও অভিষেক মিলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। ৬২ রান করা হেডের বিদায়ে সেই জুটি ভাঙে, এমন ইনিংস খেলতে মাত্র ২৪ বলে অজি ক্রিকেটার ৯টি চার ও ৩টি ছয় হাঁকিয়েছেন। এরপর ২৩ বলে ৬৩ রান করে ফেরেন অভিষেক। যেখানে ৩টি চার ও ৭টি ছয়ের মার।
১৬১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর আর হায়দরাবাদকে পেছনে তাকাতে দেননি মার্করাম-ক্লাসেন জুটি। ক্লাসেন ব্যক্তিগত ফিফটি পেয়েছেন ২৪ বলে। পরবর্তী ১০ বলে তিনি আরও ২৯ রান নিজের নামের পাশে যোগ করেন। সবমিলিয়ে মাত্র ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার অপরাজিত থাকেন ৮০ রানে। এছাড়া আরেক অপরাজিত ব্যাটার মার্করাম ২৮ বলে ৪২ রান করেন। দলীয়ভাবে হায়দরাবাদ আজ আইপিএলের দ্বিতীয় দ্রুততম দুইশ রান তোলে। যাতে তাদের লেগেছে ১৪.৪ ওভার। এর আগে ২০১৬ আসরে বেঙ্গালুরু ১৪.১ ওভারে দলীয় ২০০ পেরিয়েছিল।
হায়দরাবাদের এমন ঝড় তোলার দিনে স্বাভাবিকভাবেই দিশেহারা ছিলেন মুম্বাইয়ের বোলাররা। আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে অভিষেক হওয়া কেনা মাফাখা ৪ ওভারে দেন ৬৬ রান। যা আইপিএলে অভিষিক্ত বোলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ খরুচে বোলার মাফাখা। পাশাপাশি তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য। মুম্বাইয়ের হয়ে এদিন একটি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া, জেরাল্ড কোয়েটজে ও পিযূশ চাওলা। তবে জাসপ্রিত বুমরাহ বাদে তাদের সবাই দশের বেশি গড়ে রান দিয়েছেন।
এফআই/এসএমডব্লিউ