উষার ‘বিদ্রোহ’ ম্যাচে আবাহনীর জয়
ঘরোয়া হকিতে বড় দুই দলের ম্যাচ মানেই উত্তাপ-উত্তেজনা। উষা ক্রীড়া চক্র ভিডিও রেফারেলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আধ ঘন্টার বেশি সময় খেলার বাইরে ছিল। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাঠে প্রবেশ করে আলোচনা করে আবার খেলায় ফিরিয়েছেন। মাঠে আম্পায়ার/রেফারির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও ঘরোয়া হকিতে অবশ্য ভিন্ন। এখানে ক্ষণে ক্ষণে দলগুলোকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে ছুটতে হয় লিগ কমিটির সম্পাদক নয় ফেডারেশনের সেক্রেটারিকে।
উষা প্রথমে ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে। এরপর এক গোল দিয়ে খেলায় ফিরে। এর পরপরই আরেকটি গোল করে। বিদেশি ফিল্ড আম্পায়ার গোল দিলেও প্রতিপক্ষ আবাহনী রেফারেল চায়। দেশি ভিডিও আম্পায়ার লতিফ কয়েক মিনিট দেখে উষার গোল বাতিল করেন। তখনই বাধে বিপত্তি। উষা প্রতিবাদ জানিয়ে খেলার বাইরে ছিল। শেষ পর্যন্ত খেলায় ফিরলেও আর গোল করতে না পারায় ২-১ গোলে আবাহনীর বিপক্ষে হেরেই মাঠ ছাড়তে হয়।
জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল উষার কর্মকর্তা। তিনি ভিডিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, 'বিদেশি ফিল্ড আম্পায়ার গোল দিয়েছেন। ভিডিও আম্পায়ারিং যিনি করছেন তিনি অনেক দিন থেকেই আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে নেই। তার এক ভুল সিদ্ধান্তে আমাদের ন্যায্য গোল বাতিল হওয়ায় আমরা বারবার বলছিলাম কোন আইনে বাতিল হলো। আধুনিক হকি ও বর্তমান নিয়মে এটা অবশ্যই গোল।'
উষার খেলোয়াড়ের নেয়া হিট বোর্ডে প্রবেশ করলেও আবাহনীর ডিফেন্ডার আশরাফুলের গায়ে লেগেছে। উষার দাবি আধুনিক হকিতে এটা গোলই ধরে। অন্য দিকে ভিডিও আম্পায়ার এটিকে ফাউল হিসেবে গণ্য করে গোল বাতিল করেছেন।
লিগের শুরু থেকে বিদেশি আম্পায়ারের মতো উষা আজকের পর আরো দুই দাবি জানাবে ফেডারেশনের কাছে। কামাল তাদের দাবি সম্পর্কে বলেন, 'আমরা ভিডিও রেফারেলের ক্ষেত্রেও বিদেশি আম্পায়ার চাই। আর যদি বিদেশি ভিডিও আম্পায়ার না হয় তাহলে রেফারেল বন্ধ হোক। ভিডিওতে ভুল আম্পায়ারিং মানা যায় না।'
উষার দাবি ও আজকের প্রেক্ষাপটে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ বলেন, 'আজকের ভিডিও আম্পায়ারই কিন্তু আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নিজ দলের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত গেলে না মানার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই সংস্কৃতি চলমান থাকলে হকির উন্নয়ন সম্ভব নয়। আম্পায়ারিং বা কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে ক্লাবগুলো চিঠি দিতে পারে ফেডারেশনে। আমরা সেই সমস্যা সমাধান করব। আম্পায়ার/ভিডিও রেফারেলের সিদ্ধান্ত না মেনে খেলা স্থগিত রাখা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।'
বড় দুই দলের খেলায় বিদেশি আম্পায়ার থাকেন। ভিডিও আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন দেশি আম্পায়ার লতিফ। যিনি সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে আম্পায়ারিং করেননি। এমন একজনকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভিডিও আম্পায়ারের দায়িত্ব দেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে শাহবাজ, সেলিম লাকীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাত সম্পন্ন আম্পায়ার রয়েছেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিডিও আম্পায়ার মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, 'আম্পায়ার্স কমিটি রয়েছে। তারাই কোন ম্যাচে কে আম্পায়ারিং করবেন সেটা নির্ধারণ করেন। লতিফ গত কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ করার সুযোগ পায়নি তবে সে কিন্তু আন্তর্জাতিক আম্পায়ার।’
লতিফ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হলেও ভাষাগত দক্ষতা কম। আজ তৃতীয় কোয়ার্টারে জটিলতার সময় বিদেশি ফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই লিগ কমিটির সম্পাদক ফিল্ড আম্পায়ারকে উপরে নিয়ে এসেছিলেন। এই বিষয়ে লিগ কমিটির সম্পাদক খাজা তাহের লতিফ মুন্না বলেন, 'সে (লতিফ) আম্পায়ারদের ভাষা বুঝতে পারছিল না। সময় ক্ষেপণ হচ্ছিল তাই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।' লিগ শুরু হলেও পূর্ণাঙ্গ আম্পায়ার্স কমিটি করতে পারেনি ফেডারেশন। তিন জনের অ্যাডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
উষা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মেরিনার্সকে হারিয়ে লিগ শুরু করেছিল। আজ মাঠে ভালো খেললেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল তাদের পক্ষে যায়নি। অন্য দিকে আবাহনী টানা দুই জয় তুলে নিয়েছে। আবাহনীর মিডফিল্ডার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জোড়া গোল করেন। ঊষার ভারতীয় মোহাম্মদ শরিক এক গোল শোধ দেন। প্রথম কোয়ার্টারের নবম মিনিটে আব্দুল্লাহর দারুণ এক ফিল্ড গোলে আবাহনী লীড নেয়। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের ১৪ মিনিটে আবারো গোল করেন আব্দুল্লাহ। তৃতীয় কোয়ার্টারের ১০ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে ব্যবধান ২-১ এ নামিয়ে আনেন ঊষার মোহাম্মদ শরিক। এই কোয়ার্টারের শেষভাগে আরো একটি গোল দেয় ঊষা। তবে রিভিউতে সেই গোল বাতিল হয়। আর এই গোলকে কেন্দ্র করেই খেলা আধ ঘন্টার বেশি স্থগিত ছিল। শেষ কোয়ার্টারে মুহর্মূহ আক্রমণ ঊষার। দুর্বল ফিনিশিংয়ে গোলবঞ্চিত থাকতে হয় মোহাম্মদ আশিকুজ্জামানের শিষ্যদের।
আজ দিনের প্রথম ম্যাচে জয়ে ফিরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মেরিনার ইয়াংস। আজাদ স্পোর্টিংকে ১৩-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারায় মেরিনার্স। সোহানুর রহমান সবুজ এবং সাদাফ সালেকীনের হ্যাটট্রিক করেন।
এজেড/এইচজেএস