‘বিপিএল’ হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখেও
অল্প কিছু রিবন, হ্যাট আর পতাকা নিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে এসেছেন মোহাম্মদ লিয়াকত আলী। মিরপুরে মূল স্টেডিয়াম সীমানার খানিক দূরেই নিজের ক্ষুদ্র সংগ্রহের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আগ্রহী ক্রেতাদের সঙ্গে দরদামের ব্যস্ততার মাঝেও কথা বলতে চাইলে খুশিমনেই রাজি হলেন। জানালেন, বিপিএলের এই সময়টার জন্যই মূলত অপেক্ষায় থাকেন। সারা বছরের আয় যেমনই হোক, এই সময় বেচাবিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
লিয়াকত আলীর মত অবস্থা মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে স্টেডিয়ামের আশেপাশে অস্থায়ী দোকান পেতে বসা সব বিক্রেতারই। সারা বছর ধরে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা, ফুল কিংবা হেডব্যান্ডের ব্যবসা করেন তারা। তবে সবচেয়ে জমজমাট ব্যবসাটা চলে এই বিপিএলকে কেন্দ্র করে। দেড়মাস ধরে চলা এই ক্রিকেট উৎসবের দিকেই নজর তাদের।
বিপিএলে সাত দলের অংশগ্রহণ থাকলেও দর্শকদের আগ্রহের তুঙ্গে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ফরচুন বরিশাল এবং রংপুর রাইডার্স ঘিরে। এদের মধ্যে আবার কুমিল্লার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। একাধিক জার্সি বিক্রেতার মন্তব্য, কুমিল্লার জার্সি এনেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। প্লে-অফের এই সময়ে এসে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
শনির আখড়া থেকে আসা এসব পণ্য মিরপুরে বিক্রি হয় ১০ টাকা থেকে ৬০ কিংবা ৭০ টাকা পর্যন্ত। দৈনিক দুই কিংবা আড়াই হাজার পর্যন্ত বিক্রির দাবিও করেছেন অনেকে। তবে প্রায় সবারই দাবি, ফ্যান আইটেমের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়েছে চট্টগ্রামে। কারও দাবি, ঢাকার বাকি দুই পর্বে তেমন জমেনি বিক্রিবাট্টা। তবে সিলেটে বিক্রির পরিমাণ সবচেয়ে কম একথায় সবাই একমত।
আরও পড়ুন
লিয়াকত আলীর মতোই এসেছেন মোহাম্মদ মিলন। তার বিক্রিও নেহাত মন্দ না। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় জেনে আরও খানিকটা খোলামনেই আলাপ করলেন। নিজে খেলা না দেখলেও খেলার খবর রাখেন নিয়মিত। দিন দুয়েক আগে বিপিএল নিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার নিয়েও অবগত আছেন।
স্টেডিয়াম পাড়ার এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘বিপিএলের মতো আরেকটা টুর্নামেন্ট হলে সবার জন্য ভালো। আমরাও এসব বিক্রি করে আয় বাড়াতে পারতাম।’ স্বাভাবিকভাবেই জানতে চাওয়া হলো, সবচেয়ে বেশি বিক্রি কী তবে বিপিএলের সময়েই? উত্তরে মাথা নেড়ে জানালেন বিপিএলের মতো মঞ্চ আর নেই।
লিয়াকত আলী জানিয়েছেন অন্য অভিজ্ঞতার কথাও। চলতি বছর জাতীয় নির্বাচনে নিজের মৌসুমী ব্যবসা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ঢাকা এবং ময়মনসিংহে। সত্তোরোর্ধ এই ব্যবসায়ীর বক্তব্য, রাজনীতির চেয়ে খেলাই বেশি আপন মানুষের কাছে।
বিপিএল শেষ, এরপরের পরিকল্পনা কী? প্রশ্নের পরপরই মোহাম্মদ মিলন একে একে বাংলাদেশ দলের সব সূচিই বলে গেলেন। বাংলাদেশে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, সেই কথা মনে করিয়ে দিতেই মুখের হাসি আরেকটু চওড়া হলো তার। অবশ্য জাতীয় দলের খেলায় বিক্রি বিপিএলের তুলনায় কম বলেই মন্তব্য তার।
জার্সির নিয়েও এসেছিলেন কয়েকজন। তাদের কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ মিলল কম। বিপিএলের এই সময়ে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এখানে চাহিদার দিক থেকে এগিয়ে রংপুর রাইডার্স। এর পেছনে কারণ একজনই সাকিব আল হাসান। ৭৫ নম্বর লেখা ওই জার্সির আবেদন সবসময়ই বাড়তি। যদিও দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে গ্যালারিতে কুমিল্লার লাল রঙটাই চোখে পড়েছে বেশি।
দর্শকদের আগ্রহের তুঙ্গে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ফরচুন বরিশাল এবং রংপুর রাইডার্স ঘিরে। এদের মধ্যে আবার কুমিল্লার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। একাধিক জার্সি বিক্রেতার মন্তব্য, কুমিল্লার জার্সি এনেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। প্লে-অফের এই সময়ে এসে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
কয়েকজনকে দেখা গেল আর্ট পেপার হাতে। পোস্টার তৈরি করতে ব্যস্ত রঙ-তুলির কারিগররা। এখানে আবার চাহিদায় সবার ওপরে সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও আবেদন আছে বলে জানালেন কেউ কেউ।
লিয়াকত আলী-মোহাম্মদ মিলনদের জন্য বিপিএলের রঙিন এই উৎসব আছে আর মোটে দুই দিন। এরপরেই নতুন করে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাদের। সেজন্য অবশ্য মিরপুরের আশায় বসে থাকা চলবে না। যেতে হবে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটে। সেই স্বাদ সবার থাকলেও সাধ্যে থাকবে কি না, সেই হিসেব মিলবে বিপিএল শেষ হলে।
জেএ/এফআই