রাতে খাবার পেতেন না সরফরাজ, চড়তে পারতেন না গাড়ি
দীর্ঘ পরিশ্রম এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটানোর পর ভারতীয় টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন সরফরাজ খান। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোটে চলমান টেস্টে তার অভিষেকও হয়েছে। যেখানে বাবা নওশাদ খান ও স্ত্রী রোমানা জহুরের সঙ্গে তার অশ্রুসিক্ত ছবি আপ্লুত করেছে অনেককেই। এরপরই জানা যায় সরফরাজের অতীত সংগ্রামের কথা। জীবনের কঠিন বাস্তবতা বুঝতে তার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেসব জানিয়েছেন বাবা নওশাদ।
সম্প্রতি ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নওশাদ জানান, জীবনের লড়াই শেখাবেন বলে অনেকদিনই সরফরাজকে রাতে খেতে দেননি। এমনকি নিজেদের গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাতে চড়ার সুযোগ ছিল না সরফরাজের। জীবনের আসল কষ্টটা বোঝানোর জন্য সন্তানকে নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতেন নওশাদ।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা দিতেই মাঝেমাঝে ওর ওপর একটু কড়াকড়ি করতাম। অনেক রাতেই ও খাবার না খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছে। ওকে বোঝাতে চাইতাম কীভাবে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে রাতে ফুটপাতে ঘুমায়। আমাদের গাড়ি ছিল। তবু ওকে নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতাম, যাতে সে জীবনের আসল কষ্টটা বুঝতে পারে।’
— India Today Sports (@ITGDsports) February 17, 2024
আরেকটি সাক্ষাৎকারে সরফরাজের বাবা বলেন, ‘আমি যেটা পারিনি, ছেলেকে সেই ক্রিকেটার বানানোই আমার স্বপ্ন ছিল। মনে হচ্ছিল ওর জায়গায় আমিই টেস্টের টুপি পেয়েছি। ছোটবেলা থেকে কঠোরভাবে মানুষ করেছি ওকে। সে কোনো দিন ঘুড়ি ওড়ায়নি। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতে যায়নি। রোজ ভোরে উঠে অনুশীলন করতে যেত। তারপর বাড়ি ফিরে আবার অনুশীলনে যেত বিকেলে। টেস্ট দলের টুপি পাওয়ার পর সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’
আরও পড়ুন
সরফরাজ খান তার মর্যাদার টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন ভারতীয় কিংবদন্তি অনিল কুম্বলের কাছ থেকে। ক্যাপ পেয়ে প্রথমেই বাবার কাছে যান। তাকে ক্যাপ দেখানোর পর আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, এত বছরের অপেক্ষার অবসানের পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না বাবা-ছেলে কেউই। চোখের পানি নিয়ে ছেলের টেস্ট ক্যাপেও চুমু খান তিনি। এরপর বাবার পরে পাশে থাকা স্ত্রীকেও জড়িয়ে ধরেন সরফরাজ।
দীর্ঘ সময় পর সরফরাজ জাতীয় দলে ডাক পেলেও, এজন্য অনেক আগেই তিনি নিজেকে যোগ্য করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য পারফর্মও করছেন সরফরাজ। ২০১৯-২০ ও ২০২১-২০২২ টানা দুই মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে তিনি করেছেন ৯০০–এর বেশি রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬৬ ইনিংসে তার গড় ৬৯.৮৫, যা ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ গড় ৯৫.১৪ স্যার ডন ব্রাডম্যানের। এরপর জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ইনিংসেও তিনি খেলেন ৬২ রানের ইনিংস। রবীন্দ্র জাদেজার ভুলে রানআউট না হলে, সেই সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে আরও বাড়তে পারত!
এএইচএস