নিজেদের পাতা ফাঁদেই ভারতের সর্বনাশ
ভারত ম্যাচটাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে, এমনটাই ছিল ধারণা। দিনের বাকি দুই ওভার। ইংল্যান্ডের দরকার তিন উইকেট, এমন অবস্থায় হায়দ্রাবাদ টেস্টের ভাগ্য পঞ্চম দিনে যাবে, এমনটাই ছিল সবার ধারণা। কিন্তু শেষ বিকেলের রোদে সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে। অতিমাত্রায় স্পিন সহায়ক উইকেটে টম হার্টলি একাই নিলেন ৭ উইকেট। তাতে কপাল পুড়েছে স্বাগতিক ভারতের।
জ্যাক লিচের বলে শ্রেয়াশ আইয়ার ক্যাচ দিলেন স্লিপে। উল্লাসে মাতল ইংল্যান্ড। ভারতের মাটিতে ইংলিশদের আগ্রাসী ক্রিকেট হালে পানি পাবে কিনা তা নিয়ে কথার লড়াই চলেছিল অনেকটা দিন ধরেই। তবে শ্রেয়াশ আইয়ারের ওই উইকেটই যেন বুঝিয়ে দিল, ইংলিশদের পক্ষে ভারতের মাঠেও লড়াই করা সক্ষম। সপ্তম উইকেটের পর হায়দ্রাবাদ টেস্টের ফলাফল হয়ে যায় স্পষ্ট। নিজেদের পাতা স্পিন ফাঁদে আটকাল ভারত।
হায়দ্রাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে স্পিনাররা সহায়ক ভূমিকা রাখবেন, এটা আগেই নিশ্চিত ছিল। জাদেজা-অশ্বিন এবং অক্ষরদের নিয়ে গড়া স্পিন আক্রমণকে টপকে খুব বড় টার্গেট দেয়নি ইংল্যান্ড। তবে নিজেদের কন্ডিশনেও ভাল কিছু করা হয়নি ভারতীয় ব্যাটারদের। টম হার্টলির ৭ উইকেট শিকারের দিনে ইংল্যান্ড জয় পেল ২৮ রানে।
বিশ্বকাপের ফাইনালে রোহিত শর্মার আউটের পরেই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল ভারত। ইংলিশদের বিপক্ষে টেস্টেও একই অবস্থা। ২৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দেখেশুনেই খেলছিল টিম ইন্ডিয়া। উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ৪২ রান। যশস্বী জয়সাওয়ালকে নিয়ে ভাল সূচনাই পেয়ে যান রোহিত। তবে সেই অবস্থায় প্রথম ধাক্কা দেন টম হার্টলি। ইনিংসের ১২ তম ওভারে ফেরান জয়সাওয়াল এবং শুভমান গিলকে। দুজনেই ক্যাচ দেন শর্টে দাঁড়ানো ওলি পোপের কাছে।
তবে ভারতের বড় ধাক্কা ছিল রোহিত শর্মার উইকেট। ৬৩ রানে হার্টলির সুইংয়ে পরাস্ত হন ভারত অধিনায়ক। এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি রোহিত। ভাল কিছুর আশায় ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়েছিলেন অক্ষর প্যাটেল। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে হয়েছেন ব্যর্থ। ১০০ রানের আগেই নেই ভারতের চার উইকেট।
চার উইকেটের পর ভারতের ভরসা ছিলেন কেএল রাহুল আর রবীন্দ্র জাদেজা। তবে হতাশ করেছেন দুজনেই। ভারতে এসে স্পিনার বনে যাওয়া জো রুটের বলে লেগ বিফোরের শিকার রাহুল। আর জাদেজা ফিরেছেন বেন স্টোকসের অবিশ্বাস্য এক রানআউটে। ডাইভ দিয়ে আটকানো বলটা অনেকটা ব্যাকহ্যান্ডে থ্রো করেছিলেন স্টোকস। সেটাই প্যাভিলিয়নে ফেরায় জাদেজাকে। দুই ওভার পর ফেরেন শ্রেয়াশ আইয়ারও।
তবে ভারতকে সেখান থেকে পথ দেখিয়েছেন শ্রীকর ভারত এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ইংলিশ স্পিনের সুইংকে দাঁতে দাঁত চেপে সামাল দিয়েছেন দুজন। শ্রীকর স্বীকৃত টেস্ট ব্যাটার। খেলেছেন সেভাবেই। দিনটাও প্রায় পার করেই দিচ্ছিলেন দুজন। কিন্তু শেষবেলায় আবার হার্টলির আঘাত। বাইরের দিকে হার্টলির সুইং করা বলে ভুল করলেন শ্রীকর ভারত। বোল্ড হয়ে ফিরলেন ভারতের উইকেটরক্ষক।
এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার হার্টলির আঘাত। এবার অশ্বিন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে চেয়েছেন। হয়েছেন স্ট্যাম্পিং। এরপরেই খেলার আয়ু বাড়ে। সেখানেই বাজিমাত করে ইংল্যান্ড। অশ্বিনের মতো করেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন মোহাম্মদ সিরাজ। অধৈর্য্য সিরাজও ফিরলেন স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। বোলার সেই হার্টলি। ইংলিশরা পাঁচ ম্যাচের সিরিজে প্রথম টেস্ট জিতল ২৮ রানে।
এর আগে, ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থেকে আউট হয়ে গেলেও ইংলিশদের ত্রাতা হয়ে ছিলেন ওলি পোপ। ভারতের স্পিন সহায়ক উইকেটে একাই খেলেছেন ১৯৬ রানের ম্যারাথন ইনিংস। তার ইনিংসের সুবাদেই ভারতের সামনে ২৩১ রানের টার্গেট দাঁড় করে সফরকারী ইংল্যান্ড। ভারত নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৩৬ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করানোয় ১৯০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল বেন স্টোকস বাহিনী। এমন ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার প্রয়োজন ছিল কারও। দলের হয়ে ছিল সেই কাজটাই করলেন পোপ।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দলকে নেতৃত্ব দিলেন। অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও তাকে টলাতে পারলেন না ভারতীয় বোলাররা। আগের দিন তার সেঞ্চুরিতে লিড নিয়েছিল ইংল্যান্ড, আজ ৪ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করলেও তার দায়িত্বশীল ইনিংসের সুবাদে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড থেমেছে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪২০ রানে।
জেএ