বিপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত কুমিল্লার
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবচেয়ে সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ছয় আসরে অংশ নিয়েই বিপিএল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জিতেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এবারও শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে ফেভারিট হিসেবেই নামবে তারকাবহুল কুমিল্লা। তবে দশম আসর শুরুর দিন দুয়েক আগে পুরনো দাবিই তুলে ধরলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সত্ত্বাধিকারী নাফিসা কামাল। যিনি সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সাবেক বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে।
বিসিবির কোনো বাণ্যিজিক মডেল না থাকা ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো রাজস্ব আয়ের ভাগ না পাওয়ায় বিপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। গুলশানে নিজ কার্যালয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে এমন কথা জানান নাফিসা কামাল।
বিপিএলের রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে অনেক আগ থেকেই সরব কুমিল্লার মালিক নাফিসা কামাল। ২০১৯ সালে ক্রিকবাজকে তিনি বলেছিলেন, রাজস্ব ভাগাভাগির একটা মডেল বিপিএলে থাকা উচিত। কিন্তু চার বছরেও সেটা আলোচনার মুখ দেখেনি। ২০২২ সালে গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়ে দেয়, রাজস্ব ভাগাভাগির কোনো মডেলে আগ্রহী নন তারা।
আরও পড়ুন
আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়াবে বিপিএলের দশম আসর। টুর্নামেন্টটি শুরুর আগমুহূর্তে আবারও অসন্তোষ দেখা গেল নাফিসা কামালের কণ্ঠে। বিপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা শতভাগ সত্য। রাজস্ব ভাগাভাগি না হলে আমরা আগামী বিপিএলে থাকবো না। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স টিকিট রাইটস, গ্রাউন্ড রাইটস ও মিডিয়া রাইটসের একটা অংশ চায়।’
কথাটা অবশ্য প্রতিবার বিপিএল শুরুর আগেই বলেন তিনি। এবার জোর দিয়েই বললেন, ‘আমি আগামী বছর বিপিএল করব কি না নিশ্চিত নই। এখন যেভাবে হচ্ছে, এভাবে হলে আমার মনে হয় না আমার পক্ষে দল করা সম্ভব হবে। এ বছর একটা মিটিং করতে চেয়েছিলাম (বিসিবির সঙ্গে)। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও প্রেস কনফারেন্সে আমি এটাই অনুরোধ করেছিলাম—একটা মিটিং। মিটিং হলে রংপুরের মালিকপক্ষও বসবে। চট্টগ্রাম, ঢাকা—সবাই বসবে। সবাইকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। তারা সবাই কমবেশি বিনিয়োগ করছে। সবাইকে সম্মান দেওয়া উচিত।’
ব্রডকাস্টিংয়ের রাজস্বতে পিছিয়ে থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি, ‘আমরা কত আগে বিপিএল শুরু করেছি। অথচ এত বিশাল জনসংখ্যা নিয়েও আমরা ব্রডকাস্টিংয়ে অনেক পিছিয়ে। বিসিবি যদি আমাদের টিকিট রাইটসের ৫০ শতাংশও দেয়, তাহলে একটি টিকিটও অবিক্রিত থাকবে না। কিন্তু বিসিবি সেই রাইটস আমাদের দেয় না। মিডিয়া, গ্রাউন্ড রাইটসের বেলাতেও একই পন্থা অনুসরণ করা হচ্ছে।’
পরিকল্পনাগত ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেছেন নাফিসা কামাল। তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চলা উচিত। সেটা আমাদের বিপিএলে প্রযোজ্য নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের যেসব রাইটস পাওয়া উচিত, আমাদের সেটা পাওয়া হয় না।’ বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের খরচ করা অর্থ সাধারণত উঠে আসে না। দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকে বিনোয়োগ করে থাকেন বলে শোনা যায়। তবে সেটি মানতে নারাজ নাফিসা। তিনি বলছেন তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসেব সমান।
নাফিসা বলেন, ‘শুধু ভালোবাসা থেকে এটা সম্ভব নয়। এটা আপনারা সবসময় বলেন যে, ‘আউট অব লাভ’ আমরা করছি। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমরা করছি কাজটুকু… অনেক বেশি পরিশ্রম করছি, চেষ্টা করছি। যেটা বাকি দলগুলো করছে না। কিন্তু স্পন্সর তো আমাদেরকে পেতে হয়, আর্থিক দিক ঠিক রাখতে হয়। আমাদের টাকাটা তো আনতে হবে। নিজেদের পকেট থেকে তো পুরো বিপিএল চালাতে পারব না। এটা খুব মিথ্যা হবে যদি আমি বলি যে, আমাদের পকেট থেকে পুরো বিপিএল চালাচ্ছি। এটা সম্ভবই নয়।’
আরও যোগ করেন, ‘বিপিএল শেষ হওয়ার পর যখন হিসাব করি, স্পন্সরের কাছ থেকে যে টাকাটা আসে আর আমি যে খরচটা করি, খুব ভালো হয় যদি দুটি মিলে যায়, সমান সমান যদি হয়। ব্যালেন্স ইজ ইকুয়াল। মাঝে-মধ্যে আমরা একটু বেশি দিই, কিন্তু অতটা বেশিও নয়।’
এফআই