‘ভালো করলে কেউ ভালো বলে না, খারাপ করলে নিন্দা করে’
২০২৩ সালে মিশ্র এক বছর পার করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতা যেমন বড় ক্ষত হয়ে আছে, তেমনি সদ্য সমাপ্ত বছরে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের উন্নতির ছাপও ছিল দৃশ্যমান। অন্যদিকে, দারুণ একটি বছর পার করেছে বাংলাদেশ নারী দল। ঘরের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানকে হারানো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও ইতিহাস গড়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। এ ছাড়া বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও ট্রফিখরা কাটিয়েছে লাল-সবুজের দল। যুব এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল।
বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের সাফল্য-ব্যর্থতা ও নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। কথা বলেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওন।
ঢাকা পোস্ট: গেল বছর যখন শুরু করেছিলেন তখন নিশ্চয়ই অনেক বড় স্বপ্ন ছিল, যেহেতু বিশ্বকাপের বছর ছিল..
জালাল ইউনুস: হ্যাঁ, স্বপ্ন তো ছিলই। বিশ্বকাপ ঘিরে প্ল্যান ছিল অনেক। আমরা মনে করি যে আমাদের দলটাও খুব ভালো ছিল। যাইহোক এখন আমাদের যেহেতু কিছু প্লেয়ারও অ্যাভেইলেবল ছিল না। তামিম ছিল না, এবাদত ছিল না তারপরেও যখন দল যায়, প্রথম ম্যাচটা তো আমরা জিতি। শুরুটা ভালোই ছিল, এজন্য ভালোটাই চিন্তা করেছিলাম যে আমাদের বিশ্বকাপটা ভালো যাবে। টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল খেলা। অন্তত চার থেকে পাঁচটা ম্যাচ জয় প্রথমেই চিন্তা ছিল। সেটা হয়নি যে কারণে সবার কাছেই দুঃখজনক।
ঢাকা পোস্ট: আশানুরূপ ফল করতে না পারার কারণ কী বলে মনে করেন...
জালাল ইউনুস: এখন হয়ত অনেক কিছুই কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে। দল সেভাবে পারফর্ম করতে পারেনি এটাই বলব। আর বেশি কিছু বলতে চাই না আর।
ঢাকা পোস্ট: বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে দেশের মন্থর পিচের কথা বলা হচ্ছে! এটি কীভাবে দেখেন, উত্তরণের উপায় কী?
জালাল ইউনুস: আমি এটা বলতে পারব না, বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়ে ইতোমধ্যে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা দেখছে। সুতরাং তাদেরকেই দেখতে দেন ওরা কি বলে বোঝা যাবে তখন। আর ভালো পিচে তো আমরা খেলি, সবসময় তো খারাপ পিচে খেলি না। হ্যাঁ শেরে-ই-বাংলার কয়েকটা উইকেট নিয়ে কথা হয়। এখানে যেভাবে উইকেট চাই সেভাবে পাওয়া যায় না। এখন দেখেন জাতীয় লিগ বা বিপিএল ভালো উইকেটে খেলা হচ্ছে আগের থেকে। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমার মনে হয় দল যদি লম্বা সময়ের জন্য চিন্তা করতে হয় আমাদের স্ট্রাকচার আরো বাড়াতে হবে। খেলার মাঠের উন্নতির দরকার আছে একই সঙ্গে বৃষ্টির সময় খেলা বেশি থাকে তখন ইনডোরের উইকেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইনডোর স্টেডিয়ামের প্রয়োজন তখন, ঢাকার বাইরে যেখানে নাই সেখানে। এরপর আরও কিছু মাঠ চার পাঁচটা হলে ভালো হয় স্টেডিয়াম না শুধু মাঠ। তিনটা মাঠ যদি হয় তাহলে সুযোগ বেশি হয়। এত খেলা যে প্র্যাকটিস করার মতো মাঠ নেই। এজন্য মাঠগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য চার পাঁচটা মাঠ সারা বছর ধরে যেন প্র্যাকটিস করতে পারে, চর্চা করতে পারে। এই জায়গায় আমরা একটু পিছিয়ে যাচ্ছি। বিপিএল যখন শুরু হয় তখন একাডেমি মাঠে সবাই ভিড় করে। বিদেশে প্রচুর মাঠ, মাঠের সুযোগ তাদের অনেক। মাঠ থাকলে আরো উইকেট বানানো সম্ভব হয়।
ঢাকা পোস্ট: চলতি বছরে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বা টেস্টে ভালো করেছে দল তবে ওয়ানডেতে ভালো ফল করতে পারেনি...
জালাল ইউনুস: না দেখেন ওয়ানডেতে কিন্তু আমরা শেষ অনেক বছর ধরেই ভালো খেলছি। আমরা হয়ত বিশ্বকাপে আশানুরূপ করতে পারিনি তার মানে এই না যে আমাদের ওয়ানডের দল খারাপ। আমরা ওয়ানডেতেই ভালো ছিলাম টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টে সমস্যা ছিল ওরকম আশানুরূপ ফলাফল করিনি। এটা উন্নতি করবে আশাকরি।
ঢাকা পোস্ট: এত ব্যর্থতার মধ্যে বছরজুড়ে নারী দলের পারফরম্যান্স আর অনূর্ধ্ব ১৯ দল নিয়ে একটু স্বস্তি কি না...
জালাল ইউনুস: না স্বস্তির কিছু নেই, এখানে তো আমরা কোনো প্রতিযোগিতায় নামি নাই। যে যার জায়গায় খেলছে, মেয়েরা মেয়েদের জায়গায় খেলছে, আন্ডার নাইন্টিনের জায়গায় তারা খেলছে। আন্ডার নাইন্টিন দল সবসময় আমাদের এখানে ভালো। অতীতেও আমরা বাইরে গিয়ে যখন খেলেছি, তখন অনেক ম্যাচ জিতেছি। ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজ জিতেছি, শ্রীলঙ্কার সাথে। যুবাদের সবসময় এমন ধারাবাহিকতা ছিল তো এটার সাথে মেইন দলের স্বস্তির কোনো কিছু নেই। এরা যে জায়গায় ভালো খেলে এবং একজন আরেকজনের সাথে তুলনা করার কিছু নেই। সবাই ভালো খেললে সেটা দেশের জন্য ভালো। দেশ জিতলে তখন তো বাংলাদেশই জিতে। এখানে মেয়েরা বা যুবারা আলাদা করে দেখি না। তারা বাংলাদেশের জন্য খেলে, জিতলে আমরা সবাই আনন্দিত হয়।
ঢাকা পোস্ট: বিসিবিতে বর্তমানে অনেক পদের কোচ শূন্য, ফ্র্যাঞ্চাইজির যুগে ভালো কোচ আনা কী চ্যালেঞ্জিং একটু...
জালাল ইউনুস: কোচ সবাই প্রফেশনাল। সব দেশেরই কোচ থাকে দুই বছর থাকে তিন বছর থাকে, আবার চলে যায় নতুন কোচ আসে। আমাদের এখানে মোস্ট অব দ্য কোচের চার বছর হয়ে গেছে সুতরাং আমরা আবার বিজ্ঞাপন দেবো তারপর দেখব। হয়ত একটু কঠিন হতে পারে। আমাদের দলের জন্য যেমন কোচ প্রয়োজন সে রকম কোচ নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা সবসময় থাকে। কোচ কিন্তু বড় নাম দিয়ে হয় না। ইংল্যান্ড বা ভারতের কোচ কারা, সব তাদের লোকাল কোচ। বড় নাম বা সাবেক পেসাররা কোচ কি না, তাদের নামও শুনবেন না তারা কোচ তাদের। যাদের দরকার দলের জন্য শেখাতে পারবে সেরকম কোচই নিয়োগ দেবো।
ঢাকা পোস্ট: বাংলাদেশ দলে কোনো দেশি কোচ যুক্ত হবে কি না...
জালাল ইউনুস: এটা এখন না, তখন দেখা যাবে। আবেদন করলে যখন আমরা বিজ্ঞাপন দেব তখন কেমন সাড়া পাই। ন্যাশনাল বা বিদেশি দুই জায়গাতে আমরা দেখব। এখানে কেউ ইচ্ছা প্রকাশ করলে আবেদন করতে পারবে।
ঢাকা পোস্ট: এই নির্বাচক প্যানেল আপনার মতে কেমন করেছে...
জালাল ইউনুস: ভালোই করেছে তারা খারাপ করেনি। নির্বাচক যখন খারাপ হয় তখন সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হয়। নির্বাচক প্যানেল বোর্ড, অপারেশনস কমিটি সবারই দায়িত্ব থাকে। তারা সবসময় ভালো করেছে, এটা একটা থ্যাংকলেস জব। ভালো করলে কেউ ভালো বলে না, খারাপ করলে নিন্দা করে। আমার মনে হয় তারা চেষ্টা করে ভালো করার জন্যই এবং সঠিক দল দেওয়ার জন্য। একটা দুইটা সিলেকশন নিয়ে কথা হবেই। ১৫ টা খেলোয়াড় নিলে সবসময় আলোচনার মধ্যে থাকেই। আমি কোনো দোষ দেখি না।
ঢাকা পোস্ট: নতুন বছরে সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টে কত জন থাকতে পারে?
জালাল ইউনুস: এটা এখনই বলা কঠিন। যখন সবকিছু চূড়ান্ত হবে তখন দেখলেই বুঝবেন কত জন থাকবে।
ঢাকা পোস্ট: আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কেমন?
জালাল ইউনুস: স্বপ্ন ভালো করার জন্য...দল তো প্রফেশনাল। সবাই তো ভালো করতে চাই তাই না। এখানে স্বপ্নের কিছু নেই। এটা আমাদের ভালো করার একটা ইচ্ছা, প্রচেষ্টা ঠিক আছে এটাই তো চেষ্টা থাকবে এখানে। আমরা টি-২০ ফরম্যাটে ভালো খেলি না কিন্তু ভালো খেলার ধরন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে আগে এতো টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় পেতাম না এখন কিছু পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমরা কয়েক বছরের মধ্যে শক্তিশালী একটা দল গঠন করতে পারব। এই মুহূর্তে আমাদের একটা দল গঠন করার প্রসেসে থাকতে হবে, আছি এখনো। চেষ্টা থাকবে বিশ্বকাপে ভালো করার।
ঢাকা পোস্ট: শান্তর অধিনায়কত্ব দেখেছেন নিশ্চয়, লম্বা সময়ের জন্য তাকে ভাবছেন কি না...
জালাল ইউনুস: ভাবনাটা আসলে....এখন আমরা শান্তকে এই সিরিজে দায়িত্ব দিয়েছিলাম সে ভালো করেছে। আশা করি ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ হয় অবশ্যই সে ভালো করবে।
এসএইচ/এফআই