সৌম্য ‘শাক’ দিয়ে ব্যর্থতা ঢাকা গেল না
নিউজিল্যান্ড সিরিজে সৌম্য সরকারের দলে জায়গা পাওয়াটাই ছিল একপ্রকার বিস্ময়। কোথাও এমন কোনো পারফর্ম করেননি যে জাতীয় দলে আবার ফিরতে পারেন। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে প্রথম ওয়ানডেতেই চরম ব্যর্থ হলেন। সেদিন ডাক (৪ বলে ০) খেয়ে ফেরার পর সৌম্যর দলে ফেরাটাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। সেই ম্যাচের দিন তিনেকের মাথায় যা করলেন আজ, রাজকীয় প্রত্যাবর্তন বলাই যায়। নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে কিউই পেসারদের দাপটে দলের ব্যাটাররা যেখানে উইকেট বিলিয়ে আসছিলেন, সৌম্য সেখানে খেললেন ঝলমলে এক ইনিংস। ১৫১ বলে ২২ চার ও দুই ছক্কায় করলেন ১৬৯ রান!
দেশের ক্রিকেটে ওয়ানডে ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এ ছাড়া ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে নিউজিল্যান্ডের মাঠে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও তার দখলে। দলের ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতার পরেও সৌম্যর পুনর্জন্মের ইনিংসে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ২৯১ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই টার্গেটটা যে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলসরা। ২২ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের বড় জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ইনজুরি আর ফিটনেস ইস্যুতে দলের সঙ্গে নেই। এ ছাড়া বাকি নামগুলো আপনার পরিচিতই বলা যায়। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড দল ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে। যেখানে নেই কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে, ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন কিংবা টিম সাউদিদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।
নিউজিল্যান্ড কোচ গ্যারি স্টিড সিরিজ শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, এখন থেকেই ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করতে চান। যে কারণে নিয়মিত তারকাদের বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের সুযোগ দেওয়া হয় এই সিরিজে। দুই ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে তিন জনের। অন্যদিকে, বাংলাদেশ অভিষেক করিয়েছে কেবল একজনকে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলে সুযোগ পেয়েছেন স্পিন অলরাউন্ডার রিশাদ হোসাইন।
প্রতি ম্যাচেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দলের ব্যাটিং। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস ব্যাটারি আশা জাগালেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছেন না। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুটি ম্যাচেই দাপট দেখিয়ে প্রায় একতরফা জিতেছে স্বাগতিকরা। প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। আজ টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় টিম টাইগার্স। অ্যাডাম মিলনের লেন্থ বল খেলতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে সহজ ক্যাচ তুলে দেন বিজয়। আগের ম্যাচেও বাজে শট সিলেকশনে উইকেট বিলিয়ে এসেছিলেন বিজয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নিজের কাছেই ‘গিল্টি’ ফিল হচ্ছে। আজ কী বলবেন তিনি!
বড় স্কোর গড়া হয়নি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তরও। ব্যক্তিগত ৬ রানে আউট হন টাইগার অধিনায়ক। শর্ট লেন্থের বল লেগ সাইডে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন শান্ত। তবে বল কানায় লেগে চলে যায় হেনরি নিকোলসের হাতে। পরে বিপদটা আরও বাড়িয়েছেন লিটন দাস। বিশ্বকাপের বাজে ফর্মটা নিউজিল্যান্ডেও টেনে এনেছেন তিনি। জ্যাকব ডাফির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে থাকা উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। ফেরার আগে মাত্র ৬ রান করেছেন। ৪৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে কিছুটা ইনিংস গুছিয়েছিলেন সৌম্য। তবে, দুর্ভাগ্যজনক এক রানআউটে থামতে হয় হৃদয়কে। বোলার পায়ে লেগে বল আঘাত হানে উইকেটে। নন-স্ট্রাইকে থাকা হৃদয়ের কিছুই করার ছিল না। দলের স্কোর তখন ৮০ রানে ৪ উইকেট। মুশফিকুর রহিম ক্রিজে এসে সৌম্যকে সঙ্গ দিয়েছেন অনেকটা সময়।
মুশফিকের সঙ্গে ৯১ রানের জুটিতে থাকা অবস্থাতেই নিজের অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন সৌম্য। এরপর মিরাজকে নিয়ে গড়েছেন ৬১ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ১১৬ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। এরপরের গল্পটা বলতে গেলে কেবল সৌম্যর একার। ব্যাটিংয়ে দলের বাকিদের ব্যর্থতা ঢাকার পর বল হাতে দারুণ কিছু করতে হতো বাংলাদেশের বোলারদের। তবে নেলসনের পিচে ঘাসের আধিক্য আর মাঠে বাতাস থাকার পরেও টাইগার পেসারদের কাছ থেকে গতি আর সুইংয়ের দেখা মেলেনি। দুর্বল বোলিংয়ের সুবাদে টাইগারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন উইল ইয়াং এবং হেনরি নিকোলস। একজন করেছেন ৮৯, অন্যজনের রান ৯৫। তাদের এই দুই ইনিংসে ভর করেই নেলসনে কিউইরা জয় পেয়েছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে।
এফআই