অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের আগে যে অস্বস্তিতে ভারত
বিশ্বকাপে টানা দশ জয়ে এক যুগ পর ফাইনালে পৌঁছে গেছে ভারত। আগামী রোববার (১৯ নভেম্বর) আহমেদাবাদে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারত অপ্রতিরোধ্য। ব্যাটিং-বোলিংসহ সব বিভাগেই দারুণ ছন্দে রোহিতরা। তবুও দলের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু খামতি। ফাইনাল ম্যাচের আগে যা নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি ও চাপ থাকতে পারে টিম ইন্ডিয়া শিবিরে।
বিশ্বকাপের আগে ভারতের ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। শুভমান গিল কিংবা বিরাট কোহলিরা ছন্দে থাকলেও রান পাচ্ছিলেন না অধিনায়ক রোহিত শর্মা কিংবা কেএল রাহুলরা। এ ছাড়া মিডল অর্ডারে আস্থার প্রতিদান দিতে পারছিলেন না সূর্যকুমার যাদবরাও। তবে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে দুর্দান্ত ফর্মে ভারতের ব্যাটাররা। ভারত যে ১০টি ম্যাচে জিতেছে, প্রতিটিতেই প্রথম পাঁচ ব্যাটাররা রান পেয়েছেন। রোহিত ভালো শুরু করছেন। পরের দিকে কোহলি, শ্রেয়স আয়ার, কেএল রাহুলরাও রান পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
কিন্তু ফাইনালে যদি প্রথমদিকের কয়েকজন ব্যর্থ হন, তাহলে ভারত চাপে পড়বে। কারণ বিশ্বকাপে এখনও রবীন্দ্র জাদেজাদের তেমন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি। এ ছাড়া ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন নির্ভরযোগ্য হার্দিক পান্ডিয়া। শেষের দিকে রান তুলতে তার জুড়ি মেলা ভার।
চলতি বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্যের অন্যতম কারণ তাদের বোলিং ইউনিট। বুমরাহ-শামিরা প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের তেমন খেলার সুযোগই দিচ্ছেন না। বিশেষ করে প্রথম দিকে চার ম্যাচ সুযোগ না পাওয়া শামি দলে ফিরে নিজের সেরা ফর্মে আছেন। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকও তিনি। এ ছাড়া স্পিন বিভাগেও কুলদীপ যাদব কিংবা জাদেজা নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছেন। যদিও কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকতে পারে মোহাম্মদ সিরাজের খরুচে বোলিং নিয়ে। ওয়াংখেড়েতে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার উদ্দেশ্যহীন বোলিংয়ে বিপদে পড়েছিল ভারত। রাউন্ড দ্য উইকেটে দিশাহীন বল করছিলেন। বিশ্বকাপে ১৩টি উইকেট রয়েছে। কিন্তু ইকোনমি রেট বেশ খারাপ।
এ ছাড়া ষষ্ঠ বোলারের অভাবটাও ভোগাতে পারে ভারতকে। এখানেও তুলনা করা যেতে পারে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। কেন উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেল ক্রিজে থাকার সময় বেশ চাপে ছিলেন রোহিত শর্মা। পরে যা স্বীকারও করেছেন তিনি। হাতে যে পাঁচ বোলার ছিল, কাউকে দিয়েই কাজ হচ্ছিল না। হার্দিক পান্ডিয়া না থাকায় বাড়তি কাউকে এনে চাপে ফেলা যায়নি। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমান গিল বল করেছিলেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড মোটেই নেদারল্যান্ডস ছিল না। আত্মঘাতী ঝুঁকি রোহিত নিতে চাননি। শামি পরে দলকে জেতালেও, ফাইনালে কোনো এক বা দু’জন বোলারের দিন খারাপ গেলে চাপে পড়তে পারে ভারত।
এবারের আসরে ফিল্ডিংয়ে ভালো করতে অভিনব এক প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে ভারত। প্রতি ম্যাচের সেরা ফিল্ডারকে দেওয়া হচ্ছে মেডেল। যার ফলাফলও দেখা যাচ্ছে মাঠে। জাদেজা, ইশান কিষাণ কিংবা বিরাট কোহলিরা দারুণ ফিল্ডিং করছেন। তবে শেষ ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে কিছুটা গোলমাল দেখা গেছে ফিল্ডিংয়ে। ক্যাচ ফেলা, ফিল্ডিং মিস, ওভারথ্রোয়ে রান দেওয়া— কী না দেখা গিয়েছে। স্কোরবোর্ডে বড় রান থাকার সুবাদে ভারত জিতেছে বটে। কিন্তু রান একটু কম হলে চাপ বাড়তো।
এ ছাড়া ম্যারাথন আসরে টানা দেড় মাসের জার্নি। রাউন্ড রবিন লিগে ভারত নিজেদের নয় ম্যাচের সবকটিই খেলেছে আলাদা আলাদা শহরে। কয়েক হাজার কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয়েছে। এত যাতায়াত আর কোনো দলকে করতে হয়নি। পাশাপাশি ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া হার্দিকের বদলে নতুন কাউকে দলে নেওয়ায় একই দল প্রতি ম্যাচে খেলছে। গত ৫টি ম্যাচে একই দল নামিয়েছে ভারত। ফাইনালে ক্লান্তি গ্রাস করতে পারে ক্রিকেটারদের। যা সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ রোহিতদের।
এফআই