এক পায়ে অনন্য ম্যাক্সওয়েল
ক্রিকেটে ব্যাটারদের জন্য বড় একটি ইস্যু ধরা হয় ‘ফুটওয়ার্ক’। ক্রিকেট বোদ্ধাদের মুখে বলের লাইন ও মুভমেন্ট বুঝে খেলার কথা সব সময়ই শোনা যায়। তবে সেসবকে যেন বুড়ো আঙুল দেখালেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মুম্বাইয়ের পিচে অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটার রীতিমত এক পায়েই যেন বিশ্বকে নতুন কিছু দেখালেন।
২৯২ রান তাড়া করে ওয়াংখেড়েতে এর আগে কেউ জেতেনি। অস্ট্রেলিয়াও কখনও বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এত রান তাড়া করেনি। দ্বিতীয় ইনিংসের আগে সম্ভাব্য সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছিল আরেক মিরাকলের। সেই পথে অনেকটা এগিয়েও ছিল আফগানরা। ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর কে ভেবেছিল, এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াই জিতবে?
কিন্তু ম্যাক্সওয়েল সম্ভবত জানতেন। পায়ের পেশিতে টান পড়েছে। দৌড়ে রান নেওয়া হয়েছে রীতিমতো মুশকিল। পরের ব্যাটার অ্যাডাম জাম্পাও বেশ কয়েকবারই ড্রেসিংরুম ছেড়ে নিচে নেমে এসেছিলেন। তবে ম্যাক্সওয়েল হাল ছাড়েননি। খেলেছেন রেকর্ডবুক তোলপাড় করে দেওয়া এক ইনিংস।
আরও পড়ুন
একটা সময় পর্যন্ত অন্তত দৌড়েছিলেন এই বিধ্বংসী ব্যাটার। সেঞ্চুরির পর সেই দৌড়টাও বন্ধ হয়ে গেল তার। তার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল— হয় বাউন্ডারি, নয়তো বল ডট দেওয়া। অপরপ্রান্তে থাকা প্যাট কামিন্সও ব্যাট হাতে খুব বেশি সাবলীল নন। ব্যাট হাতে যদিও এর আগে সামর্থ্য জানান দিয়েছিলেন তিনি, তবে এদিন সেই ঝুঁকিটা নিতে চাননি। শেষের ৮ ওভার তাই ম্যাক্সওয়েল খেললেন কেবল জায়গায় দাঁড়িয়েই।
ক্রিজে ম্যাক্সওয়েল ছিলেন ১৮১ মিনিট। খেলেছেন ১২৮ বল। এরমাঝেই করেছেন ২০১ রান। যেখানে ছিল ২১টি চার আর ১০টি ছক্কার বাউন্ডারি। মোট ১৪৪ রান এসেছে এই বাউন্ডারি থেকেই। এই ১৪৪ রানের জন্য খেলেছেন ৩১ বল। বাকি ৯৭ বলে এসেছে মাত্র ৫৭ রান।
সেঞ্চুরি করা পর্যন্ত ম্যাক্সওয়েল মোট ৫৮ রান নিয়েছিলেন বাউন্ডারি থেকে। এরপরের ১০০ রান করতে গিয়ে ৮৬ রান নিয়েছেন বাউন্ডারির সাহায্যে। ১১ চার আর ৭ ছয় থেকে এসেছে এই রান। প্রথম সেঞ্চুরি করতে ৭৬ বল লেগেছিল ম্যাক্সের। যেখানে শেষ ১০০ রান এসেছে মাত্র ৫২ বলে। তাতেও ৩৪ বলই খেলেছেন ডট।
আরও পড়ুন
১৯৮৬ সালে ভারতের মাদ্রাজেই এমন ইনজুরি নিয়ে মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্স। চরম গরমে অসুস্থ হয়েও মাঠ ছাড়েননি। অনেকগুলো বছর পর আবার ভারতের মাটিতে ব্যাটিংয়ের নতুন মহাকাব্য লিখলেন আরেক অজি তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এক পায়ে, ফুটওয়ার্ক ছাড়াও শুধুমাত্র দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়েই দারুণ কিছু করা যায়, তারই যেন নমুনা দেখালেন এই অজি তারকা!
জেএ