আফ্রিদিদের তুলোধুনো করে কিউইদের রানবন্যা
ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেঙে যাবে পাকিস্তানের। এমন সমীকরণ নিয়ে তারা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতেও আগে ফিল্ডিং নেয়। এরপর সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফদের রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন কিউই ব্যাটাররা। রাচিন রবীন্দ্র’র রেকর্ডগড়া তৃতীয় সেঞ্চুরি ও কেইন উইলিয়ামসনের ৯৫ রানে ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেটে কিউইদের সংগ্রহ ৪০১ রান। চলতি বিশ্বকাপে এটি দ্বিতীয় কোনো দলের চারশ-ঊর্ধ্ব রান।
আজ (শনিবার) বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে চলমান ম্যাচটি উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দারুণ ছন্দ নিয়ে বিশ্বকাপ আসর শুরু করা নিউজিল্যান্ড মাঝপথে হোঁচট খায়। তাদের সেমিফাইনালে ওঠার পথটা কঠিন করে তোলে টানা তিন পরাজয়। তবে সেই দৌড় আজ মসৃণ করে তুলেছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কিউই ব্যাটাররা। পাকিস্তানের হয়ে এদিন সবচেয়ে কম খরুচে বোলার ছিলেন ওয়াসিম জুনিয়র। একইসঙ্গে তিনি সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন।
বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং স্বর্গে আগে ফিল্ডিং নেওয়াটা বাবর আজমদের জন্য কতটুকু সঠিক ছিল, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে তার সেই সিদ্ধান্ত যে উপযুক্ত ছিল না— তার প্রমাণ কিউইদের নির্দয় ব্যাটিং। বিশ্বকাপজুড়ে স্পিন আক্রমণ নিয়ে ভুগতে থাকা পাকিস্তান আজ চার পেসার নিয়ে নামে। ছিল না কোনো স্বীকৃত স্পিনার। ফলে তাদের বোলিং কোটা পূর্ণ করেছেন ইফতিখার আহমেদ ও আগা সালমান।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন কিউই ওপেনাররা। তবে প্রথম ১৭ বলে দেখেশুনে খেলেছেন তারা, ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় কোনো ঝুঁকিই নেননি। এর পরের সাত বলে তারা তিনবার বল বাউন্ডারিতে (৪) পাঠান। চিন্নাস্বামীর গ্যালারি থেকে তখন শোরগোল ওঠে ‘রাচিন রাচিন’ নামে। প্রথম পাওয়ার-প্লেতে উইকেটশূন্য নিউজিল্যান্ড ৬৬ রান তোলে।
১১তম ওভারে পাকিস্তানকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন হাসান আলী। তার শর্ট ডেলিভারিতে কনওয়ের গ্লাভস ছুঁয়ে বল গিয়ে আটকায় উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। যা হাসানের ১০০তম ওয়ানডে উইকেট। কয়েক ম্যাচ ধরে ম্লান কনওয়ে আজ ফিরেছেন ৩৯ বলে ৩৫ রান করে। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পাকিস্তানি বোলারদের নাভিশ্বাস তুলেছেন ইনজুরি থেকে ফেরা উইলিয়ামসন। দীর্ঘদিন ধরে চোটে ভোগা উইলিয়ামসনকে নিউজিল্যান্ড কেন স্কোয়াডে রেখেছিল, তার যোগ্য প্রমাণ ও দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই জানিয়ে রেখেছেন। চোট থেকে ফিরে বাংলাদেশের সঙ্গে ফিফটি পেয়েছিলেন, আজ দ্বিতীয় দফায় মাঠে নেমে করলেন ৯৫ রান।
রবীন্দ্র-উইলিয়ামসন জুটি থামে ১৮০ রানে। চাইলে ধীরেসুস্থে সেঞ্চুরি করে উঠতে পারতেন উইলিয়ামসন। কিন্তু পার্ট টাইম অফস্পিনার ইফতিখার আহমেদের বলে ডাউন দ্য ট্রেকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে তিনি বাউন্ডারিতে ক্যাচ আউট। ৭৯ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কার বাউন্ডারি খেলেন। তার আগেই ৮৮ বলে বিশ্বকাপের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন রবীন্দ্র। যা কোনো ব্যাটারের অভিষেক আসর ও নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যেও বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ শতক।
উইলিয়ামসন যখন প্যাভিলিয়নে, ততক্ষণে মাত্র ৩৪.২ ওভারে কিউইদের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৮ রান। ফলে পরবর্তী ব্যাটারদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দলীয় সংগ্রহ কত বাড়ানো সেই চিন্তা নিয়েই তারা ক্রিজে আসেন। যার ফলাফল দেখা যায় স্কোরবোর্ডে। রবীন্দ্র-উইলিয়ামসনের পরে ব্যাটে নামা প্রায় সব ক্রিকেটারই ১৪০+ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। এর ভেতর ওয়াসিমের শর্ট বলে ১০৮ রানে থামে রবীন্দ্র’র ইনিংস। ৯৪ বলের ইনিংসে তিনি ১৫টি চার ও একটি ছয় হাঁকিয়েছেন।
এছাড়া শেষদিকে তাণ্ডব চালানো ড্যারিল মিচেল ১৮ বলে ২৯, মার্ক চ্যাপম্যান ২৭ বলে ৩৯, গ্লেন ফিলিপস ২৫ বলে ৪১ এবং মিচেল স্যান্টনার ১৭ বলে ২৬ রান করেন।
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়াসিম ৬০ রানে তিনটি এবং হাসান, ইফতিখার ও রউফ একটি করে উইকেট শিকার করেন। বোলারদের কল্যাণে তাদের ব্যাটারদের কাজটা অনেকটাই ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে!
এএইচএস