আফগানদের সাফল্যের নেপথ্যে গুজরাট মডেল!
স্বপ্নের মতো একটা বিশ্বকাপ কাটাচ্ছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে আসর শুরু করলেও এখন পর্যন্ত হারিয়ে দিয়েছে সাবেক ও বর্তমান তিন চ্যাম্পিয়ন দল -ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে। নিজেদের খেলা ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতে জোরালোভাবেই রয়েছে সেমিফাইনালের দৌড়ে।
বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন এখন আফগানরা। সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা ভূয়সী প্রশংসা করছেন রশিদ-মুজিবদের। আফগানদের এমন সাফল্যের পেছনে নেপথ্য কারণ হতে পারে গুজরাট মডেল! আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোচ ও বিশ্বকাপের জন্য যুক্ত হওয়া মেন্টর দুজনই ভারতীয়। ভারতের মাটিতে চলমান বিশ্বকাপে তাদের ‘টোটকা’ দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে আফগানরা।
গত ১৫ অক্টোবর দিল্লিতে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেয় আফগানিস্তান। র্যাংকিং আর অবস্থান বিচারে সেটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে বড় অঘটনই। এরপর ২৩ অক্টোবর চেন্নাইয়ে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় হাশমতউল্লাহ শহিদীর দল। আফগান রূপকথা সেখানেই শেষ নয়। সর্বশেষ তারা দাপুটে জয় পায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সাবেক এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৭ উইকেটে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় আফগানরা।
মাত্র আট বছর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল আফগানিস্তানের। সেই বার তারা একটি ম্যাচ জিতেছিল। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে আফগানরা বিশ্বকাপের একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। কিন্তু ২০২৩ সালে একেবারে অন্য মেজাজে রশিদ খানরা। দলের এমন ভোলবদলের পেছনে বড় মাস্টারস্ট্রোক হতে পারে দুই ভারতীয়কে মেন্টর এবং ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা এবং তারা দুজনই গুজরাটি। এ ছাড়া আফগান হেড কোচ জনাথন ট্রটও রশিদ-নবিদের বড় দল হয়ে উঠতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
আফগান দলের মেন্টর হিসেবে আছেন অজয় জাদেজা, যিনি ভারতের গুজরাটের জামনগরে জন্মগ্রহণ করেন। সাবেক ভারতীয় এই ক্রিকেটারের পরামর্শই এখন আফগানিস্তানের আসল দাওয়াই। পাশাপাশি ব্যাটিং কোচ হিসেবে আছেন মিলাপ মেওয়াদা। ভারতের সাবেক প্রথম-শ্রেণীর এই ক্রিকেটার মেহসানার বাসিন্দা। মিলাপের কৃতিত্ব তো আফগান ব্যাটারদের পারফরম্যান্সেই প্রমাণিত।
অজয় জাদেজা, ৯০-এর দশকের ক্রিকেটের সঙ্গে সমার্থক নাম। ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার নানা দিক থেকেই বর্ণময়। ২২ গজে তার গতিশীল ফিল্ডিং, নির্ভীক ব্যাটিং এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল আচরণের জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তার রানিং বিটুইন দ্য উইকেট সে সময় অনেকের কাছে উদাহরণ ছিল। বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে ৫২ বছর বয়সী জাদেজাকে আফগানিস্তান তাদের ক্রিকেট দলের মেন্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটার টিম ইন্ডিয়াকে ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। খেলেছেন ১৯৬টি ম্যাচ। ৩৭.৪৭ গড়ে করেছেন ৫৩৫৯ রান। ৬টি সেঞ্চুরি এবং ৩০টি হাফসেঞ্চুরিও রয়েছে তার ঝুলিতে। দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে মাত্র ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস, যা তার ক্যারিয়ারের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত।
আরও পড়ুন
২০০০ সালে একটি ম্যাচ গড়পেটায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন অজয় জাদেজা। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে মরিয়া হয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদনও করেছিলেন তিনি। যদিও তা খারিজ হয়ে যায়। নির্বাসন কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজস্থান টিমে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ধারাভাষ্যও দিয়েছেন। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফুল ফোটাচ্ছেন জাদেজা।
এদিকে, ৪৮ বছর বয়সী মিলাপ মেওয়াদারের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জম্মু-কাশ্মীর এবং হায়দরাবাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। উইকেটকিপার ব্যাটার মিলাপ মেওয়াদারের খেলোয়াড়ি জীবনের ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শুধু ১১টি প্রথম শ্রেণির এবং ২৬টি লিস্ট এ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
শেষ পেশাদার ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০৪ সালে। এরপর কোচিংয়ে নামেন। বরোদার সহকারী কোচও ছিলেন তিনি। তার কোচিংয়ে ছত্তিশগড়ের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ঘরোয়া টুর্নামেন্টের নকআউটে পৌঁছেছিল। বিশ্বমঞ্চে আফগান ব্যাটারদের সাফল্যের নেপথ্যে বড় কারণ হতে পারে মিলাপের কোচিং।
এফআই