প্রতিপক্ষ বদলায়, বাংলাদেশের গল্প বদলায় না
টানা পাঁচ হারে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা কার্যত শেষ। টুর্নামেন্টের বাকি থাকা তিন ম্যাচে নতুন শুরুর আশার কথা শুনিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে উল্টো নিজেদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতাই ধরে রাখল বাংলাদেশ।
এদিন আরও একবার ব্যর্থ টাইগার ওপেনাররা। আরও একটা হতাশার শুরু হয় বাংলাদেশের। স্কোরবোর্ডে ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বাড়ে চাপ। সেই চাপ সামলে মাহমুদউল্লাহ, লিটন ও সাকিবের ব্যাটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বাংলাদেশের ইনিংস থামে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২০৪ রানে। দলের হয়ে এদিন ৭০ বলে ৫৪ রানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ ছাড়া লিটন (৪৫) ও সাকিব (৪৩) দুজনই ফিরেছেন পঞ্চাশের দোড়গোড়ায় গিয়ে।
আসরজুড়েই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল পাকিস্তানের বোলিং ইউনিট। আজ সুদে আসলে সব ঝাল তুললেন যেন শাহিন-রউফরা। তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন দুই পেসার শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। এ ছাড়া আরেক পেসার হারিস রউফও দুটি উইকেট পেয়েছেন।
আজ (মঙ্গলবার) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম বলে তানজিদ তামিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শাহিন আফ্রিদি। রিভিউ নিলেও কাজে আসেনি সেটি। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যর্থ জুনিয়র তামিম ফিরেছেন শূন্য রানে, বাংলাদেশও প্রথম উইকেট হারায় কোনো রান না তুলতেই। তানজিদকে ফিরিয়ে ওডিআইতে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন আফ্রিদি।
তামিমের পর ব্যাটিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট থার্ড ম্যান দিয়ে ইফতিখার আহমেদকে লেট কাটে চার মেরে ইতিবাচক বার্তাই দিয়েছিলেন। তবে শান্তর দৌড় বলতে যেন ওইটুকুই। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে শাহিনকে ফ্লিক করেছেন শান্ত। ফরোয়ার্ড স্কয়ার লেগে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন উসামা মীর। ৩ বলে ৪ রান করেন বিশ্বকাপজুড়ে ফ্লপ এই ব্যাটার। ৫ ওভারে ১০ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসেছিলেন হারিস রউফ। টুর্নামেন্টে ছন্দে না থাকা এই পেসারকে ভালোই খেলছিলেন ক্রিজে থাকা লিটন ও মুশফিক। ফুললেংথের দুটি বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে দুটি চার মেরে শুরু করেন লিটন। এরপর পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেয়ে চার মারেন এদিন প্রমোশন পেয়ে চারে খেলতে নামা মুশফিকও। শেষ বলে গুড লেংথ ডেলিভারি মুশফিকের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের গ্লাভসে। ৮ বলে এক চারে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই এগোতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ ও লিটন। ৮৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। যদিও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি লিটন। বিশ্বকাপজুড়ে ব্যাট হাতে তেমন ছন্দে না থাকলেও লিটন আজ শুরুটা করেছিলেন আশাব্যঞ্জক। ফিফটি থেকে আর মাত্র ৫ রান দূরত্বে ছিলেন। এমন সময় অবিশ্বাস্য একটা ভুলটা করে বসলেন। ইফতিখারের বলে চিপ করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। লুফে নিতে ভুল করলেন না আগা সালমান।
একেবারে সাদামাটা একটা ডেলিভারি। লেগ সাইডে অনায়াসে খেলতে পারতেন লিটন। তিনি ক্যাচ তুলে দিলেন মিডউইকেট ফিল্ডারের হাতে! কি বলে কি শটে আউট হয়েছেন, নিজেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। জায়গা থেকেই যেন নড়তে পারছিলেন না এই ওপেনার। গ্যালারিতে ভর করে রাজ্যের নিরবতা। লিটনের এমন আউটে মাথায় হাত মাহমুদউল্লাহরও। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হতাশায় ব্যাট দিয়ে নিজের হেলমেটে আঘাত করলেন লিটনও।
লিটন ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে রাখছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিং পজিশনে প্রমোশন দিয়ে আজ তাকে নামানো হয় পাঁচে। ৫৮ বলে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ করেন। শেষমেশ শাহিনের বলে স্টাম্প ভাঙে তার। ৭০ বলে ৫৬ রান করেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা এই ব্যাটার। তার বিদায়ের পর যেন বাংলাদেশের সব আশাও শেষ হয়ে যায়।
উইকেটে থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারলেন না সাকিব। ৬৪ বলে ৪ চারের মারে ৪৩ রান করে হারিস রউফের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়লেন তিনি। শেখ মেহেদীর জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া হৃদয় টিকলেন মোটে তিন বল। শেষ দিকে মেহেদী মিরাজের ৩০ বলে ২৫ রানের ইনিংসে টেনেটুনে দুইশ পেরোয় বাংলাদেশ।
এফআই