মাকে ছাড়িয়ে যেতে চায় শাম্মী
বাংলাদেশে তারকা খেলোয়াড়দের পরবর্তী প্রজন্ম খেলা-ধূলায় সেভাবে আসেন না। আসলেও বাবা-মায়ের পরিচয়ের বাইরে নিজেকে আলাদা করে সেভাবে চেনাতে পারেন না। ভারত্তোলনের সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান কোচ শাহরিয়া সুলতানার মেয়ে শাম্মী সুলতানা অবশ্য ভারত্তোলনে উঠতি তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বাগেরহাটে সদ্য সমাপ্ত ১২তম নারী জাতীয় ক্লাব ভারত্তোলন প্রতিযোগিতায় সেরা নারী ভারত্তোলক হয়েছেন শাম্মী। ৫৯ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্ন্যাচ এবং ক্লিন-জার্ক মিলিয়ে ১২৯ কেজি তুলে রেকর্ড গড়ে প্রথম হয়েছেন। স্ন্যাচে ৫৯, ক্লিন এন্ড জার্কে ৭০ তুলেও রেকর্ড ভেঙেছেন। পারফরম্যান্স, শরীরের ওজন সামগ্রিক বিষয় মিলিয়ে শাম্মী সেরা নারী ভারত্তোলকের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
মা শাহরিয়া সুলতানা এক যুগের বেশি সময় ভারত্তোলনের সেরা ছিলেন। এখন কোচ এবং বিচারক হয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ক্লাব ভারত্তোলনে সেরা হয়ে মাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় শাম্মীর কন্ঠে, 'মা আমার অনুপ্রেরণা তবে আমার স্বপ্ন মায়ের অর্জন ছাড়িয়ে আরো বড় পরিসরে বাংলাদেশের ভারত্তোলনকে প্রতিনিধিত্ব করা।’ মাত্র বছর দুই হলো ভারত্তোলনে পথচলা শাম্মীর। ইতোমধ্যে যুব বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ জিতেছেন। সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজ ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হওয়ার পর এবার ক্লাব প্রতিযোগিতায় রেকর্ড গড়ে সেরা খেলোয়াড়ের কৃত্তিত্ব। বয়স মাত্র ১৩ পেরিয়ে ১৪। তাই স্বপ্ন পূরণে আরো অনেক কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার চ্যালেঞ্জ মায়ের কন্ঠে, 'সবে মাত্র শুরু। এর ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ওর ইচ্ছে রয়েছে, ফিট থেকে সঠিকভাবে চেষ্টা করলে অবশ্যই ভালো কিছু সম্ভব।'
গত অর্ধযুগে বাংলাদেশের ভারত্তোলন মানেই মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। নিজেকে পরবর্তী মাবিয়া হিসেবে দেখার দৃঢ় প্রত্যয় শাম্মীর কন্ঠে, 'মাবিয়া আন্টি অত্যন্ত ভালো খেলোয়াড়। আমি অবশ্যই তাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই।’ মাবিয়ার হাতেখড়ি শাম্মীর মা শাহরিয়া সুলতানার হাতেই। তাই মাবিয়া ও শাম্মীর মধ্যে আলাদা কিছু দেখেন না শাহরিয়া, 'শাম্মী আমার যেমন সন্তান মাবিয়াও তেমনি। ২০১০ থেকে ১৭ সাল পর্যন্ত সে আমার অধীনেই অনুশীলন করেছে। মাবিয়া এবং শাম্মীর মধ্যে আমি কখনো পার্থক্য করি না।’ গত এক দশকে ভারত্তোলক ছাপিয়ে কোচ এবং বিচারক পরিচয় বড় হয়েছে শাহরিয়ার। কোচ হিসেবে নিজের মেয়ের যোগ্যতা-সামর্থ্য বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, 'ওর আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা ভালো। যখন স্টেজে যায় নার্ভাস থাকে না যা ভারত্তোলকের জন্য খুব দরকার।'
খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও দারুণ শাম্মী। রাজধানীর অন্যতম সেরা স্কুল উইলস লিটল ফ্লাওয়ারে ইংরেজী ভার্সনে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছেন। স্কুলের ক্রমতালিকায় পাঁচের মধ্যে। খেলা এবং পড়া দুটোই উপভোগ করছেন শাম্মী, 'পড়া এবং খেলা দুটোই ভালো লাগে। পড়া শেষ করেই বাসায় মায়ের সঙ্গে ভারত্তোলন করি। সময় পেলে স্টেডিয়ামের জিমেও যাই। আগে অনেক খেলা খেললেও ভারত্তোলনেই বেশি মজা পেয়েছি এবং ভারত্তোলনই করতে চাই।’ মাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ যেমন শাম্মীর উপর আবার শাহরিয়া সুলতানারও কোচ হিসেবে সমান চ্যালেঞ্জ শাম্মীকে ভারত্তোলনে সবার সেরা করার।
এজেড/এইচজেএস