মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের ব্যাটে লড়াকু পুঁজি
হিমালয়ঘেরা ধর্মশালায় এক জয় ও এক হারের মিশ্র অনুভূতির সাক্ষী। ভারতের দক্ষিণের শহর চেন্নাইয়ের সাগরপাড়ের এমএ চিদাম্বরমে আজ ভালো কিছুর স্বপ্নই বুনছিল বাংলাদেশ। তবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতোই। কিউই পেসারদের গতি আর বাউন্সে যেন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল বাংলাদেশি ব্যাটাররা। স্কোরবোর্ডে ৫৬ রান তুলতেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শঙ্কা ছিল আরও একটি ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ দিন দেখার।
তবে শুরুর ব্যাটিং ধসের পর দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিক-সাকিবের গুরুত্বপূর্ণ ৯৬ রানের জুটিতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালায় টিম টাইগার্স। এ দুজনের বিদায়ের পর ফের পথ হারায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৪৫ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রানের (৭৫ বলে) ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। শেষ দিকে ৪৯ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও ক্রিজে যতক্ষণ ছিলেন খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না রিয়াদ। ব্যাটেও কানেক্ট করতে পারছিলেন না ঠিকঠাক। এদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পেয়েছেন লকি ফার্গুসন। এ ছাড়া ম্যাট হ্যানরি ও ট্রেন্ট বোল্ট দুটি করে উইকেট দখলে নিয়েছেন।
স্পিন নাকি পেস বান্ধব হবে চেন্নাইয়ের পিচ-এমন রহস্যের মধ্যেই টস হেরে শুরুতে ব্যাট করার আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। এরপর ইনিংসের প্রথম বলেই ধাক্কা। আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এসেছিল ওপেনিং ব্যর্থতা প্রসঙ্গ। যদিও শান্ত আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ওপেনিং নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অবশ্য আজ প্রথম বলেই সেই চিন্তার শুরু।
ট্রেন্ট বোল্টকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। কিন্তু শটটি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়ানো ম্যাট হেনরির হাতে ধরা পড়েন। জীবনের ২৯তম বসন্তে পা দেওয়া লিটনের জন্মদিনটা রাঙানো হয়নি। অবশ্য তার ব্যাটে দুর্দশা চলছে অনেক দিন ধরেই। মাঝে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসে রানে ফেরার বার্তা দিয়েছিলেন-এই যা।
শূন্য রানে বাংলাদেশি ওপেনারের বিদায়ের পর মিরাজ-তানজিদ তামিমের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ। দারুণ শুরুও পেয়েছিলেন প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যথাক্রমে ৫ ও ১ রানে আউট হওয়া তানজিদ। তবে বেশিদূর এগোতে পারলেন না তরুণ এই ওপেনার। লকি ফার্গুসনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন। সাজঘরে ফেরার আগে করেন ১৭ বলে ৪ চারে ১৬ রান।
দলে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং পজিশন কত? খোদ মিরাজও হয়তো বলতে পারবেন না। আগের ম্যাচেই খেলেছিলেন পাঁচে, আজ নামলেন তিনে। ভালো খেলছিলেনও। শেষমেশ আবারও আক্ষেপেই পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ম্যাট হ্যানরির হাতে ধরা পড়লেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৩০ রান করতে খেলেছেন ৪৬ বল।
বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায় ৫৬ রানে। আর কোনো রান যোগ করার আগেই গুরুত্বপূর্ণ আরেক ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তও সাজঘরে ফেরেন। প্রথমবার আক্রমণে এসেই সাফল্যের দেখা পান ফিলিপস। বাড়তি বাউন্সের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ডেভন কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন শান্ত। স্কোরবোর্ডে মাত্র ৫৬ রান তুলতেই হারাতে হয় ৪ উইকেট। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটার ফেরত গিয়েছিলেন।
টপ অর্ডারে ধসের পর টেনে তোলার চেষ্টা চালান অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দু’জনের ১০৮ বল স্থায়ী ৯৬ রানের জুটিতে ধীরলয়ে হলেও এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন ছক্কার লোভ যেন পেয়ে বসে সাকিবকে। আগের ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে ছক্কা ও চার হাঁকিয়েছিলেন। পরের ওভারে ফার্গুসনের বলেও টপ-এজে ছক্কা পেয়েছিলেন। আবারও শট বল করেন ফার্গুসন। পুলের চেষ্টা সাকিবের।
তবে এবার বল আকাশে উঠে যায়। বেশ খানিকটা ছুটে গিয়ে ক্যাচ লুফে নেন উইকেটকিপার টম ল্যাথাম। ৫১ বলে ৪০ রান করে আউট হন সাকিব। টাইগার কাপ্তান কেন তাড়াহুড়ো করছিলেন, এর আরেকটা কারণ হতে পারে ক্র্যাম্প। হয়তো দ্রুত কিছু রান তুলে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সাকিবের বিদায়ে যেন সঙ্গীহারা হয়ে পড়েন মুশফিক। টাইগার এই প্রতিরোধের দেয়ালকে বোল্ড করেন ম্যাট হেনরি।
অমিত সম্ভাবনার ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন কাটছেই না। আজ থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হলেন। ট্রেন্ট বোল্টের স্লো নাকল বলে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়ে ২৫ বলে ১৩ রানে ফিরেছেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের ওডিআই ক্যারিয়ারের ২০০তম শিকার বাংলাদেশের হৃদয়।
শেষ দিকে তাসকিন ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে দুইশো ছাড়ায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১৯ বলে দুই ছক্কায় ১৭ রান করে মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হন তাসকিন। শেষ দিকে টেলএন্ডারদের নিয়ে উইকেট বাঁচানোর চেষ্টা চালান মাহমুদউল্লাহ। যদিও এদিন খুব একটা স্বস্তিতে দেখা যায়নি তাকে। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৪৫ রানের মাঝারি পুঁজি পায়।
এফআই