বিশ্বকাপেও সেই পুরোনো রোগে ভুগছে বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে চলছে রান উৎসব। এখন পর্যন্ত ৪০০ এর উপরেও স্কোর হয়েছে একবার। তিনশ পার হওয়া স্কোরও হয়েছে ৬ বার। আছে আরও কিছু বড় ইনিংস। তবে এসবের মাঝে যেন ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ ওভার খেলতে পারেনি টাইগাররা। আর ওপেনিং বা ওয়ানডাউনের চিরচেনা রোগ তো আছেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যাটিং যেন বরাবরই দুশ্চিন্তার নাম। ২০০৩ বিশ্বকাপে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে কানাডার কাছেও হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। চলতি বছর সেই পুরাতন রোগটাই যেন আবার চেপে বসেছে। পরিসংখ্যানের পাতায় চোখ রাখলেই এমন কিছু স্পষ্ট হয়ে ধরা দিবে।
২০২৩ সালে এশিয়া কাপ, ঘরের মাঠে সিরিজ, ঘরের বাইরের সিরিজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এরমাঝে বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ব্যাট করতে পারেনি বা ২০০ এর নিচের টার্গেটে ব্যাট করেছে এমন ম্যাচ আছে ৩টি।
বাকি ১৭ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ ২০০ এর নিচে স্কোর করেছে ৭ ম্যাচে। এর মধ্যে শেষ দশ ম্যাচেই ২০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে ৬ বার। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যে অত্যন্ত নাজুক, যা দিবালোকের মতোই প্রকাশ্য। আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বাইরে আর কোন দেশের বিপক্ষেই রান পাননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে দুর্দশার শুরু। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ওয়ানডেতে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে ১৬৯ রান। ম্যাচ পুরো হলে বাংলাদেশ ২০০ পার করতে পারতো কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সিরিজের পরের ম্যাচই যার প্রমাণ। ২য় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৮৯ রানে।
এরপরের মিশন এশিয়া কাপ। যেখানে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৬৮ রানে। এরপর সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৯৩ রানে। ভারতের বিপক্ষে অবশ্য ২৫৯ রান করতে সক্ষম হয়েছিল তারা।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্রটাই ফুটে উঠেছিল আবারও। সিরিজের ২য় এবং ৩য় ওয়ানডেতে ব্যাট করার সুযোগ আসে বাংলাদেশের। যেখানে তাদের স্কোর যথাক্রমে ১৬৮ এবং ১৭১। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৭ রান করলেও সেখানে টাইগারদের সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৫। ভারতের ব্যাটিং স্বর্গে এমন রান বেশ বেমানান।
এতো গেল রান সংখ্যার দিক থেকে পরিসংখ্যান। ওভার প্রতি হিসেবের দিকে নজর রাখলে দুর্দশার চিত্র আরও ভয়াবহ হয়ে উঠে। বাংলাদেশ এই বছর এখন পর্যন্ত ২১ বার ব্যাটিং করেছে, এর মধ্যে অলআউট হতে হয়েছে ১১ ইনিংসেই। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতেই পারেনি পুরো ওভার। অথচ ২০২২ সালে মাত্র ১৩ শতাংশ ইনিংসে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা।
চলতি বছর প্রতি উইকেটে গড় রান তুলেছে ২৭.৮৬। অথচ চলতি বছরের আগে প্রতি উইকেটে গড় রান ত্রিশের নিচে ছিল কেবল ২০১৬ সালে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বাকি থাকা প্রায় সব ম্যাচই হবে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে। পুনে, কলকাতা বা দিল্লিতে ৩০০ রানের দেখা পাওয়া যায় নিয়মিত।
তবে ব্যাটিংয়ের এমন ধারা অব্যহত থাকলে সেমিফাইনালে খেলার যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে হাজির হয়েছে টাইগাররা তা কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে। ব্যাটিং পিচেও বিগত ইনিংসগুলোতে ব্যাপক আকারে ভুগতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাদ দিলে এই বছর বড় কোনো দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরিও পাননি তারা। লাহোর, চট্টগ্রাম কিংবা পাল্লেকেলের মত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও ছিল ব্যর্থতার চিত্র। আশা ভরসার বিশ্বকাপে তাই জয়ের বদলে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশের সঙ্গী।
জেএ