প্রথম সপ্তাহ শেষে বিতর্কই সঙ্গী বিশ্বকাপের
বিশ্বকাপে শুরুর পর ঠিক ঠিক এক সপ্তাহ শেষ হয়েছে গতকাল। ৮ম দিনে এসে আজ মাঠে গড়াবে আসরের ১০ম ম্যাচ। তবে নয় ম্যাচ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিতর্কের বেড়াজালেই আটকে আছে এবারের বিশ্বকাপের আয়োজন। একের পর এক রেকর্ড আর রানবন্যার ম্যাচ হলেও মন ভরেনি দর্শকদের।
বিশ্বকাপের ৯ ম্যাচের মধ্যে প্রায় সব ম্যাচেই দেখা গিয়েছে রেকর্ড। ব্যক্তিগত কিংবা দলীয়, দুই দিক থেকেই নতুন রেকর্ড দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। যদিও এসব আলোচনার চেয়ে বিতর্কিত ইস্যুই সামনে এসেছে বারবার। প্রথম সপ্তাহে বারবারই আলোচনায় ছিল নিম্নমানের পিচ, খালি গ্যালারি কিংবা বাজে আউটফিল্ডের আলোচনা।
নেই কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সবার প্রথম বিতর্ক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে। শুরুতে ব্যাপক হাঁকডাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনপ্রকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই হয়নি। বৈশ্বিক কোন আসর জমকালো অনুষ্ঠান ছাড়া শুরু হওয়ার নজির নেই বললেই চলে। তবে ভারতে ঘটলো সেটাই।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছিল, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিৎ সিং। এছাড়া নাচ পরিবেশনে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়ার অংশ নেওয়ার খবর শোনা গিয়েছিল। তবে এসবের কিছুই হয়নি। কারিগরি ত্রুটির কথাও শোনা গিয়েছিল সেবার।
নতুন করে গুঞ্জন আছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই। এরইমাঝে নিশ্চিত হয়েছে গোল্ডেন টিকিটধারীদের অংশগ্রহণ। থাকবেন, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জাকা আশরাফও।
দর্শকবিহীন মাঠ
ক্রিকেটকে বলা হয় ভারতের ধর্মের মত। তবে, সেই ক্রিকেটের মহাযজ্ঞেই কিনা নেই দর্শক। আইপিএলের মত ফ্র্যাঞ্চাইজ আসরেও যেখানে স্টেডিয়াম থাকে পূর্ণ, সেখানে বিশ্বকাপের ম্যাচে খালি গ্যালারি অনেক বেশিই দৃষ্টিকটু। ভারতের দুই ম্যাচ ব্যতীত পূর্ণ স্টেডিয়াম দেখা যায়নি কোন ম্যাচেই। হায়দ্রাবাদে পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ অবশ্য এই তালিকার বাইরে।
এমনকি গ্যালারি ভরাতে ফ্রিতে নারী দর্শক আনার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দর্শক ভর্তি করতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার নারী দর্শককে হাজির করছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। এই কাজে তাদের সাহায্য করছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর স্থানীয় নেতারা।
ভিসা জটিলতা
বিশ্বকাপ শুরুর পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ১ সপ্তাহ। এরইমাঝে শিরোপাপ্রত্যাশী পাকিস্তান খেলেছে দুই ম্যাচ। তবে বিশ্বকাপের মত আসরে এসেও উপস্থিত হতে পারছেন না দেশটির ক্রিকেটভক্তরা। স্থানীয় সমর্থনেই ক্রিকেট খেলছেন বাবর আজমরা। বিশ্বকাপ শুরুর এতদিন পরেও পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্ত আর সাংবাদিকদের ভিসা দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) October 9, 2023
এমনকি ১৪ তারিখের পাকিস্তান বনাম ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তারা উপস্থিত হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর আগে বিশ্বকাপে অংশ নিতে ভিসার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বাবর আজমদের। অনিশ্চয়তার মুখে আইসিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করে পিসিবি। শেষমেষ ভারতে আসার ৪৮ ঘণ্টা আগে নিজেদের ভিসা হাতে পায় পাকিস্তান দল।
নিম্নমানের পিচ ও মাঠ
বিশ্বকাপের মত বড় আসরেও বিতর্কিত পিচ ও মাঠ হয়েছে শিরোনাম। ধর্মশালায় বাংলাদেশের ম্যাচভেন্যু আউটফিল্ড দুশ্চিন্তায় ফেলেছে ক্রিকেটার এবং কোচদের। আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রট সরাসরি সমালোচনা করেছিলেন এই স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড নিয়ে। মাঠে চোটের শঙ্কা থাকায় বেন স্টোকসকে ছাড়াই টাইগারদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। এমনকি বাংলাদেশ–আফগানিস্তান ম্যাচের আউটফিল্ডকে ‘গড়পড়তা’ হিসেবে প্রতিবেদন দিয়েছেন ম্যাচ অফিশিয়ালসরা।
বাজে আউটফিল্ডের কারণে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্ট ধর্মশালা থেকে ইন্দোরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুটিসহ মোট ৫টি রাখা হয়েছে ধর্মশালায়।
এছাড়া চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বারাম পিচ নিয়েও আছে সমালোচনা। ভারতকে সুবিধা দিতেই সেখানে অতিমাত্রায় স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরির কথাও বলছেন অনেকে। বলা হচ্ছিল, টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ দিনের মত করেই তৈরি হয়েছে চেন্নাইয়ের পিচ।
ভারতকে সুবিধা দিচ্ছে আইসিসি
এবারের বিশ্বকাপে ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে আইসিসি। এমন গুঞ্জন উঠেছে আগে থেকেই। খোদ ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররাও যোগ দিয়েছেন এই আলোচনায়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জেতা দলের ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগের দাবি, অর্থের দিক বিবেচনায় স্বাগতিকদের জন্য সুবিধা করতে রাজি আইসিসি।
শেবাগের দাবি, ‘আইসিসি ভারতকে সাহায্য করবে এই বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে পিচ প্রস্তুত করছে ভারতীয়রা। ভারত যখন সেমিফাইনাল বা ফাইনাল খেলবে, তখন পিচ তাদের মতো করেই তৈরি করা হবে। আইসিসি জানে, ভারত যদি এই প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত থাকে, তবেই লোক মাঠে আসবে, খেলা দেখবে। সেই কারণে ভারতের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।’
জেএ