এক যুগ পর বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস
আগামী ৫ অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে বসছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাইশ গজে বিশ্বসেরা হওয়ার এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই জায়গা নিশ্চিত করেছে ১০ দল। ভারত বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ প্রথম পর্বে থাকছে নেদারল্যান্ডসের বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।
আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে অংশ নিয়েছিল মোট ১৩টি দল। সেখান থেকে এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক ভারতসহ সেরা ৮ দল সরাসরি কোয়ালিফাই করেছে মূল পর্বে। এই সেরা আটে জায়গা হয়নি নেদারল্যান্ডসের। ২৪ ম্যাচে ৩ জয়ে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে ছিল ডাচরা। ওয়ানডে সুপার লিগের এমন হতাশ দলটাই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ঘুরে দাঁড়ায়। বলা যায়, খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে স্বপ্নের চূড়া ছুঁয়েছে!
জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয় মোট ১০ দল। সুপার লিগের তলানির ৫ দলের সঙ্গে যোগ দেয় আইসিসির সহযোগী ৫ দেশ-নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্কটল্যান্ড, ওমান ও যুক্তরাষ্ট্র। এই দশ দল দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে। গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় হয়ে সুপার সিক্সে কোয়ালিফাই করে নেদারল্যান্ডস। সুপার সিক্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের মতো দলকে ছিটকে দিয়ে মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করে ডাচরা।
বাছাই পর্বে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সারির ক্রিকেটারকে পায়নি নেদারল্যান্ডস। মূলত ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বলে সেখানে ব্যস্ত ছিলেন তারা। তবে মূল পর্বে পূর্ণ শক্তির দলই পাচ্ছে ডাচরা।
ডাচদের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে দেখা যাবে ম্যাক্স ও'ডাউডকে। দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বটা এই অভিজ্ঞ ওপেনারের কাঁধেই থাকবে। ডাউডের সঙ্গী হিসেবে নতুন বল মোকাবেলা করবেন বিক্রমজিত সিং। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ নিজের দিনে বিপজ্জ্বনক হয়ে ওঠতে পারেন। বাছাই পর্বে ওমানের বিপক্ষে ১১০ রানের ইনিংস খেলে এমন বার্তায় দিয়ে রেখেছেন।
তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে খেলবেন স্কট এডওয়ার্ডস। ওপেনারদের ব্যর্থতার দিনে দলকে ভালো ভীত গড়ে দেওয়ার দায়িত্বটা তার ওপর পড়বে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার দলটার ব্যাটিং লাইনআপে বড় তারকা। একই সঙ্গে নেতৃত্বভারও থাকছে তার কাঁধে। টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটার ওয়েসলি বারোসি। তিনি মূলত ব্যাকআপ হিসেবে থাকবেন। তার একাদশে খেলার সম্ভাবনা খুবই কম।
নেদারল্যান্ডসের বড় শক্তির জায়গা অলরাউন্ডার। ১৫ জনের স্কোয়াডে ৬ জনই স্বীকৃত অলরাউন্ডার। কলিন অ্যাকারম্যান, বাস ডি লিডিরা জেনুইন অলরাউন্ডার। তাই এই দুইজন অধিনায়কের কাজটা সহজ করে দেবেন। ডি লিডিকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা থাকবে প্রতিপক্ষেরও। কারণ এডওয়ার্ডসের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন ২৩ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। আর অ্যাকারম্যান দলটার মিডল অর্ডারের আস্থার নাম। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তার অভিজ্ঞতার ঝুলির দিকে তাকিয়ে থাকবে দল।
ডাচদের এই অলরাউন্ড তালিকায় বাকি চার নাম- সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট, তেজা নিদামানুরু, রোলফ ফন ডার মারওয়ে ও সাকিব জুলফিকার। শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, এবারের বিশ্বকাপেই সবচেয়ে বড় চমক এঙ্গেলব্রেখট। ৩৫ পূর্ণ করতে চলা এই অলরাউন্ডারের এখনো আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম নজর কেড়েছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৫৮টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪৫.৫৩ গড়ে ১২৭৫ রান করেছেন এঙ্গেলব্রেখট, সঙ্গে খেলেছেন ৫৪টি প্রথম শ্রেণি ও ৪৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবে ২০১৬ সালের পর কোনো স্বীকৃত ম্যাচ খেলেননি তিনি। এবার বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার অপেক্ষায় এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
ডাচদের স্পিন বিভাগে আছেন আরিয়ান দত্ত ও সিরাজ আহমেদের মতো তরুণরা। হাত ঘুরাতে পারেন সাকিব, ফন ডার মারওয়ে, তেজা, এঙ্গেলব্রেখটরাও। তাই স্পিনে বেশ কিছু বিকল্প থাকছে অ্যাকারম্যানের হাতে।
পেস বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন পল ফন মিকেরেন। এই ডানহাতি পেসার সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন লোগান ফন বিক, রায়ান ক্লেইন ও ডে লিডিকে।
২০১১ সালের পর এবারই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেখা যাবে ডাচদের। ৬ অক্টোবর হায়দরাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এক যুগ পর আবারও বিশ্বকাপের স্বাদ নেবে নেদারল্যান্ডস।
নেদারল্যান্ডস স্কোয়াড: স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক), বিক্রমজিত সিং, কলিন অ্যাকারম্যান, শারিজ আহমেদ, ওয়েসলি বারেসি, লোগান ফন বিক, আরিয়ান দত্ত, সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট, রায়ান ক্লেইন, বাস ডি লিডি, পল ফন মিকেরেন, রোলফ ফন ডার মারওয়ে, তেজা নিদামানুরু, ম্যাক্স ও'ডাউড ও সাকিব জুলফিকার।
এইচজেএস