ভারত বিশ্বকাপ নিয়ে যা জানা প্রয়োজন
বিশ্বক্রিকেটের মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ওয়ানডে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর শুরু হতে আর মাত্র ৩ দিন (৫ অক্টোবর) বাকি। ১০ দেশের অংশগ্রহণের এই আসরে শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে। পুরো টুর্নামেন্টের ভেন্যু, সেমিতে ওঠার প্রক্রিয়া, টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি এবং বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনো সমস্যার কারণে রিজার্ভ-ডে’র নিয়মই বা কী? এসব বিষয় ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে।
গ্রুপ ফরম্যাট
ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটি ২০১৯ সালের পর আরেকটি ওয়ানডে ফরম্যাটের আসর। আগের আসরের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড এবার উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে। টুর্নামেন্টের সবকটি ম্যাচ রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে খেলা হবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ৪টি দল পা রাখবে সেমিফাইনালে। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে হবে বিশ্বকাপ। ১৯৯২ আসরে প্রথম এই পদ্ধতিতে খেলা হয়েছিল।
রাউন্ড রবিন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দলই ৯টি করে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপপর্ব শেষে শীর্ষে থাকা দল টেবিলের চতুর্থ দলের সঙ্গে এবং দুই ও তিনে থাকা দল দুটি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে। এরপর জয়ী দু’দল ফাইনাল খেলবে ২০ নভেম্বর।
সেমিফাইনালে উঠতে কত পয়েন্ট লাগবে?
২০১৯ বিশ্বকাপ আসরে নজর রাখলে দেখা যায়, ৯ ম্যাচের মধ্যে কোনো দল ৭টিতে জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করবে। গত আসরে সাতটি করে জয় পেয়েছিল ভারত (বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পয়েন্ট বেশি ছিল) ও অস্ট্রেলিয়া। আবহাওয়াজনিত কোনো সমস্যা না থাকলে ছয় ম্যাচের জয়েও সেমিতে ওঠার বেশ সম্ভাবনা থাকবে।
তবে সবমিলিয়ে প্রাপ্ত পয়েন্ট বিবেচনা করেই তৈরি হবে পয়েন্ট টেবিল, সেখানে সমান পয়েন্টধারীদের নেট রানরেটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে দলগুলোর অবস্থান। আগের আসরে ৫ ম্যাচের জয়ে সমান ১১ পয়েন্ট পেয়েছিল পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। সেবার নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় কিউইরা সেমিতে উঠে যায়।
তার মানে ছয়টি করে ম্যাচ জয়ের পরও কোনো দল নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় থাকবে। সেক্ষেত্রে আর একটি বাড়তি ম্যাচের জয় এগিয়ে রাখবে যে কাউকে।
আরও পড়ুন
যেভাবে বিশ্বকাপের টিকিট পায় ১০ দল
আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত আগেই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর তিন বছর ধরে অনুষ্ঠিত আইসিসির ওয়ানডে সুপার লিগে অংশগ্রহণ করে ১৩টি দেশ। সেখান থেকে তিন ম্যাচের ৮টি সিরিজের পর শীর্ষ সাত দল সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠে। পয়েন্ট টেবিলে যথাক্রমে থাকা দেশগুলো হচ্ছে- নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর বাকি পাঁচ দলকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। সেখানে ফাইনালিস্ট দুই দল শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস ভারত বিশ্বকাপের টিকিট কাটে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় ইতিহাসের প্রথম দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্টি ইন্ডিজ। এছাড়া দুর্দান্ত পারফর্ম নিয়েও বাদ পড়ে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ড।
বিশ্বকাপের প্রাইজমানি
আইসিসির বিবৃতি অনুসারে, এবারের আসরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল পাবে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা (৪ মিলিয়ন ডলার)। রানার্স-আপ দল পাবে তার অর্ধেক, ২২কোটি টাকা বা ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মেগা আসরটি থেকে কোনো দলই খালি হাতে ফিরবে না। সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া দল দুটি পাবে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা করে। প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া দলগুলোর জন্যও থাকছে মোটা অঙ্কের টাকা পুরস্কার। বাদ পড়া ছয় দলের প্রত্যেকে পাবে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা করে। এছাড়া গ্রুপপর্বে যে ৪৫টি ম্যাচ হবে, সেখানে ম্যাচজয়ী দলগুলো পাবে ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা করে।
আরও পড়ুন
টুর্নামেন্টের ভেন্যু
আসন্ন টুর্নামেন্টে গ্রুপপর্বের ৪৫ এবং সেমিফাইনাল-ফাইনাল মিলিয়ে মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ভারতের ১০টি ভেন্যুতে। এর মধ্যে উদ্বোধন ও ফাইনাল ম্যাচসহ পাঁচটি খেলা রয়েছে গুজরাটের আহমেদাবাদ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। যেখানে দর্শক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার।
এছাড়া ম্যাচ রয়েছে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, কলকাতার ইডেন গার্ডেন, লখনৌ স্টেডিয়াম, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেডে স্টেডিয়াম, পুনের এমসিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে।
রিজার্ভ-ডে
বিশ্বকাপের দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের জন্য বরাদ্দ রয়েছে রিজার্ভ-ডে। বৃষ্টি কিংবা আলোকস্বল্পতাসহ কোনো কারণে ম্যাচ না হলে নির্ধারিত তারিখের পরদিন পুনরায় ম্যাচটি আয়োজন করা হবে।
এএইচএস